bangla romantic golpo kotha choti রক্ত নেওয়া আর হল না, যেভাবে বাচ্চাদের মতন রাগারাগি শুরু করে দিয়েছে সেই দেখে রিশু হাসি থামাতে পারে না। আধা ভেজান দরজার দিকে তাকিয়ে রিশু হেসে ফেলে, ঝিনুকের আচার আচরন গুলো অনেক কচি মনোবৃত্তির, হয়ত চঞ্চলমতি, উচ্ছল রমণী কিন্তু ভেতর থেকে এখন একটা শিশু। এখন আগছলা থাকে, ঘরের বেশির ভাগ জিনিসপত্র ওকেই গুছাতে হয়, কিন্তু তাও ঝিনুকে কে কিছুই বলে না। অগত্যা সিরিঞ্জ রেখ দিয়ে ঝিনুককে বেড়িয়ে আসার অনুরোধ করে।
দরজার আড়াল থেকে উঁকি মেরে আগে যাচাই করে রিশুকে, তারপরে যখন দেখে যে ওর হাতে সিরিঞ্জ নেই তখন বীরদর্পে মুচকি হেসে বেড়িয়ে আসে ঘর থেকে, যেন যুদ্ধ জয় করে ফেলেছে। সারা সকাল দুই জোড়া চোখের মিষ্টি মধুর বারতালাপেই কেটে যায়, কাল সকালে দেখব কি করে ব্লাড দেবে না, হ্যাঁ দেখে নিও, কোন কথা শুনবো না, দরজা খুললে তবে না নেবে ইত্যাদি।
কাজের লোক ঘরের কাজ, রান্না বান্না সেরে যাওয়ার পরে তাড়াতাড়ি স্নান সেরে নেয় দুজনেই। কথা ছিল খাওয়ার পরেই বেড়িয়ে যাবে বাজার করতে। শীতের দিন ছোট হয়, তার ওপর ঝিনুকের জন্য এটা প্রথম দিল্লীর শীত, বেশিক্ষন বাইরে থাকলে যদি আবার ঠান্ডা লাগে তখন সবাই রিশুকেই দোষারোপ করবে।
romantic golpo kotha
কাজের লোক নিরামিষ রান্না করে গিয়েছিল তাই রিশু দুটো ডিমের অমলেট বানিয়ে নেয় খাওয়ার আগে। ঝিনুক স্নান সেরে বেড়িয়ে দেখে অমলেট তৈরি হয়ে গেছে, একটু আহত হয়ে ঝিনুক, একটু অপেক্ষা করলে আমি বানিয়ে দিতে পারতাম। মাথায় তোয়ালে জড়ানো, পরনে একটা ঢিলে গোল গলার টপ আর একটা ঢিলে প্যান্ট, প্রসাধন হীন সদ্য স্নাত ঝিনুককে দেখে বিভোর হয়ে তাকিয়ে থাকে।
এক গুচ্ছ ভিজে চুল তোয়ালে থেকে উঁকি মেরে বেড়িয়ে ওর লালচে গালের ওপরে লেপটে গেছে, এক ফোঁটা জলের বিন্দু নাকের ডগায় হীরের মতন চকচক করছে। মরালী গরদনের দিকে চোখ পড়তেই বুকের রক্তে হিল্লোল উঠে যায়। মসৃণ ঘাড় বেয়ে জলের এক সরু ধারা বয়ে পরনের টপের মধ্যে কোথাও লুকিয়ে গেছে। বারান্দার এক চিলতে শীতের আলোর নরম রেখা ঝিনুকের মসৃণ ত্বকের ওপরে পিছলে গিয়ে ঝলসে দেয় রিশুর হৃদয়।
রান্না ঘর থেকে রিশুকে ওইভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভীষণ লজ্জা পেয়ে যায় ঝিনুক। ওর মুখের দিকে তাকাতে গিয়েও তাকাতে পারে না। সর্বাঙ্গে কাঁটা দিয়ে ওঠে ওর, জীবনে প্রথম বার এইভাবে লজ্জা পেয়েছে ঝিনুক, এ এক নতুন ঝিনুকের আবির্ভাব। কলেজে থাকাকালীন কত ছেলেরা ওর দিকে তাকিয়েছে, এইভাবে লজ্জা কোনদিন পায়নি, শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই তড়িৎ প্রবাহ, এই শিহরণ ওর কাছে একদম নতুন। romantic golpo kotha
এমন কি সেই ছেলেটা যে ওর সাথে প্রেমের ছলনা করে গেছে তার চোখের ভাষা ওর শরীরে এক আন্দোলনের সৃষ্টি করত সত্যি কিন্তু তাতে শুধু মাত্র কামনা বাসনার লিপ্সা জড়িয়ে থাকত। রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়ানো সুঠাম ডাক্তারের চোখের ভাষার চুম্বকীয় আকর্ষণে হারিয়ে যায় ঝিনুক। লজ্জিত ত্রস্ত পায়ে নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে সেই আগুনে দৃষ্টি থেকে নিজেকে বাঁচাতে।
ছোট খাওয়ার টেবিলের ওপরে ডিমের অমলেট দুটো রেখে ডাক পারে রিশু, “হল তোমার?”
গলার স্বর কানে যেতেই লুকিয়ে যেতে পারলে যেন বেঁচে যায় ঝিনুক, “এই আসছি।”
খাওয়াটা জরুরি ছিল না রিশুর কাছে, এই ক্ষণিকের জন্য যে চোখের আড়াল হয়েছে সেটাই সইতে পারছিল না রিশুর হৃদয়, যেন ওর একমাত্র উদ্ভিন্ন যৌবনা স্ত্রী কোথাও হারিয়ে গেছে। চঞ্চল কোনদিন ছিল না রিশু তবে ঝিনুকের এই আচরন দেখে একবার মনে হয় যেন আবার করে ফিরে যায় পুরানো দিনে, এই মেয়েটার হাত ধরেই সুপ্ত স্বপ্ন গুলো পূর্ণ করতে। ঠিক মায়ের ভয়ে নয়, কোন কিছুতে মায়ের যদি খারাপ লাগে যদি মা দুঃখ পায় সেই চিন্তায় অনেক কিছুই করেনি রিশু। romantic golpo kotha
চুপচাপ শান্ত হয়ে থাকতে থাকতে বয়সের আগেই গম্ভির স্বভাবের হয়ে গেছে। এখন মেয়েটা সেই ভাবে কথা বলে না, এই সকালেই এদের মধ্যে যা কথাবার্তা হয়েছে সেটা এই পাঁচ দিনের মধ্যে সব থেকে বেশি। কি করনীয় ওর? পুরুষ শাসিত সমাজ, হয়ত ঝিনুক ওর অপেক্ষায় আছে কখন ওর দিকে এক পা বাড়াবে।
ছটফট করে ওঠে রিশুর বুকের ভেতরটা, “তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলে ভালো হয়।”
উফফ ডাক্তারের যেন আর তর সয়না, এমনি সময়ে সাত চড়ে রা কাড়ে না এখন আবার ডেকে খাওয়াতে বসাতে চায়। ভিজে চুল আরো একবার তোয়ালে দিয়ে মুছে উত্তর দেয়, “বললাম ত আসছি।”
রিশু টিভি চালিয়ে দেয়, কারণ চুপচাপ খাওয়ার চেয়ে টিভি চলা বশি ভালো, নিস্তব্ধতা ভীষণ ভাবেই জোরে বাজে সেটা এই কয়দিনে রাতের খাওয়ার সময়ে বুঝে গেছে রিশু। নুপুরের নিক্কন কানে যেতেই চোখ তুলে তাকায় দরজার দিকে, ভুরু কুঁচকে ঠোঁটে এক চিলতে দুষ্টুমি ভরা হাসি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ঝিনুক, চোখের তারায় লাজুক রঙের আভাস। romantic golpo kotha
লাজে রাঙ্গা কাজল কালো নয়নের দিকে চোখ পড়তেই চোয়াল শক্ত হয়ে যায় রিশুর, ভীষণ ভাবে জানতে ইচ্ছে করে কে সেই পার্থ নামের ছেলেটা, যে এই নীল সাগরের ঢেউয়ের ফেনায় স্নাত ঝিনুকের চোখে জল এনেছিল। যে চঞ্চলা উচ্ছল ললনার ছবি ওর বোন সেদিন গাড়ির মধ্যে দেখিয়েছিল, সেই হারিয়ে যাওয়া উচ্ছল ললনাকে ফিরে পেতে চায়।
চোখ কিছুতেই ফেরাতে পারে না ঝিনুকের সদ্যস্নাত মুখবয়াবের ওপর থেকে। লালচে নাকের ডগায় এক ফোঁটা জল হীরের টুকরোর মতন চিকচিক করে ঝিনুকের চেহারার দ্যুতি সহস্র গুন বাড়িয়ে তোলে, সেই সাথে রিশুর হৃদয়ের তুমুল ঝঞ্ঝার বান ডেকে আনে।
চোখ নামিয়ে চেয়ারে বসে পরে ঝিনুক। দুইজনের মুখেই কোন কথা নেই, চুপচাপ খাওয়া সারে দুজনে। ঝিনুক পারলে থালা নিয়ে উঠে পালিয়ে যেতে পারলে বেঁচে যায়। কেন মরতে রবিবার আসে? কোন সপ্তাহে রবিবার একদম থাকা উচিত নয় অথবা ডাক্তারের ছুটি হওয়া উচিত নয়। থাকুক না হসপিটালে সুন্দরী নার্সদের সাথে, সুন্দরী মহিলা ডাক্তারদের সাথে, ও কি জানে না যে ডাক্তারদের কথা? romantic golpo kotha
ওর বান্ধবী বন্দনার বয়ফ্রেন্ড নীলরতন মেডিকেল কলেজে পড়ত, বন্দনার মুখেই শুনেছে ওর বয়ফ্রেন্ডের হস্টেলের চারপাশে ছড়িয়ে থাকত বীর্যে ভরা কন্ডমের প্যাকেট। শুধু মাত্র কি চন্দ্রিকা, আর কি কেউ সত্যি ছিল না এই ডাক্তারের হৃদয়ের কোন এক গোপন কোনায়? ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে ঝিনুকের।
খাওয়া শেষে ঝিনুক ঢুকে পরে নিজের ঘরের, প্রথম বার ডাক্তারের সাথে বেড়াতে বের হবে, বেড়াতে ঠিক নয় কাজের জিনিস কিনতেই বের হবে। অনেক কিছু কেনার আছে, ডাক্তারের সাথে ছোট পোশাক অথবা জিন্স পরে বের হতে কেমন যেন মনে হয় ওর যেটা এর আগে কোনদিন ওর মনে হয়নি, খানিকটা বিব্রতবোধ খানিকটা লজ্জা খানিকটা আশঙ্কা কি পোশাক ওর ভালো লাগে সেটা জানা নেই। এই বিব্রতবোধটা ওর মধ্যে আগে কোনদিন ছিল না।
কোলকাতায় থাকতে যা খুশি ইচ্ছে জামা কাপড় পড়তে পারত, জেদ ছিল বিয়ের পরেও সেই এক ভাবেই খোলামেলা জীবন যাপন করবে, যেরকম ওর ভালো লাগবে সেই মতন পোশাক আশাক পড়বে, যখন যেখানে যাওয়ার ইচ্ছে হবে সেখানে বেড়িয়ে যাবে। কিন্তু ওর সেই সব আশা অধরা স্বপ্ন হিসাবেই রয়ে গেল। বাইরে বেড়াতে যাওয়ার মতন সালোয়ার কামিজ নেই বলতে গেলেই চলে, তিনটে সালোয়ার কামিজ নিয়ে এসেছিল, তার মধ্যে দুটো ওর আর একটা ডাক্তার বিয়েতে দিয়েছিল। romantic golpo kotha
অগত্যা সেটাই পরে নিল, ওপরে রিশুর দেওয়া সেই গাড় নীল রঙের ওভারকোট, পায়ে মোজা পড়তে ভীষণ বাধে তাও ডাক্তারের আদেশ, মোজা পড়তেই হবে, গলায় শাল নিতেই হবে, ধ্যাত এইভাবে সাজা যায় নাকি? কিন্তু না, ডাক্তার কি আর সাজার ব্যাপারে কিছু বোঝে নাকি, ওর কথা শরীর খারাপ করবে, কতবার বুঝাতে চেষ্টা করে যে মেয়েদের ঠান্ডা কম লাগে বিশেষ করে বেড়াতে বের হলে অথবা শপিং করতে বের হলে তখন ওদের রক্তে নতুন শক্তির জাগরণ হয়।
সঠিক অর্থে ঝিনুকের ব্যাপারে কিছুই জানা হয়নি রিশুর, সেইভাবে জানা শোনার সময় হাতেই ছিল না। প্লেন থেকে নেমেই ওর মা ধরে বেঁধে বলে দিল এর সাথেই বিয়ে এই মেয়েকেই বোউমা করতে চায়। যদিও সুন্দরী বেশ মিষ্টি দেখতে তবে কথায় আছে বিষ কুম্ভ পয়োমুখম, জেদি চঞ্চলমতি বলেই পরিচয় ওর কাছে, সেটা অবশ্য এই কয়দিনে একবারের জন্য মনে হয়নি রিশুর। বরং ওর মনে হয়েছিল খুব নরম স্বভাবের, একটু লাজুক প্রকৃতির মিষ্টি মেয়ে। romantic golpo kotha
প্রথম দুই তিন দিনে ওর চোখে ছিল ভীষণ আর আশঙ্কা আর ভীতির ছবি, যদিও সেটা এই তারপরে অনেকটা কেটে গেছে তাও মেয়েটা এখন পর্যন্ত যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারেনি। সর্বদা এত চুপচাপ কেন থাকে? কি এত চিন্তা করে, কার কথা চিন্তা করে? কই যখন বাড়ির সাথে নিজের মায়ের সাথে অথবা ওর মায়ের সাথে কথা বলে তখন ত এইসব কিছুই দেখা যায় না, তখন বেশ হাসি খুশি হয়েই কথাবার্তা গল্প গুজব চলে।
ঝিনুকের বাবা মা যতবার ওর সাথে কথা বলেছে ততবার ওর মনে হয়েছে যে তাদের কন্ঠে এক অপরাধীবোধ ভাব, যেন ওর ওপরে এক পাপের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন তারা। বেশি কথাবার্তা কোনদিন হয় না তাদের সাথে, “কেমন আছো? হসপিটাল কেমন চলছে? ভালো থেকো।” ব্যাস এই কয়টা বাক্য ঘুরে ফিরে আসে প্রত্যেক বার।
প্রত্যেক দিনের এক ব্যাপার, রিশু জামা কাপড় পরে তৈরি আর সেই ললনার দেখা নেই। পায়ে মোজা কিছুতেই পড়তে চায় না, জোর করেই পড়তে বললে তাও মুখ বেঁকিয়ে এমন একটা ভাব দেখাবে যেন নিম পাতা খাইয়ে দিয়েছে, তবে কোনদিন মুখের ওপরে এটা বলেনি যে যাও পড়ব না, অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরে নিত মোজা। romantic golpo kotha
সেই প্রথম রাতে সেই যে একবার ওর সামনে উঁচু গলায় কথা বলেছিল তারপর এই কয়দিনে কোনদিন উঁচু গলায় কথা বলেনি মেয়েটা। সেই রাতের ঝিনুকের মনের অবস্থা বুঝতে অসুবিধে হয়নি রিশুর। সকাল থেকে রক্ত দেওয়া নিয়ে যেমন ভাবে ছনছন করে একটানা বেজে চলেছে, হেসে ফেলে রিশু।
“ঠিক আছে?” কথাটা কানে যেতেই এক অদ্ভুত শিহরন খেলে যায় রিশুর সর্বাঙ্গে।
ওই ঠিক আছের শব্দের শ্রোতের দিকে ঘুরে তাকায়, ওর দেওয়া সেই তুঁতে রঙের সালোয়ার পড়েছে, গাড় নীল রঙের কোট গায়ে দেওয়া, বোতাম লাগায়নি তখন। মুখমন্ডলের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে রিশুর, চোখের পাতায় মনে হয় আইল্যাস লাগিয়েছে নাকি ওর চোখের পাতা এতটাই লম্বা। হাতের মধ্যে ভাঁজ করা শাল আর কাঁধে একটা ব্যাগ। মাথার চুল একপাশে করে আঁচড়ানো, সিঁথিতে এক চিলতে সিঁদুরের ছোঁয়া।
ওর ওইভাবে তাকাতে দেখে লাজুক ঝিনুক মাথা নিচু করে দরজার দিকে এগিয়ে যায় জুতো পড়ার জন্য। পায়ের দিকে তাকায় ওর, এবারে আর বলতে হয়নি মোজা পরেই নিয়েছে আর তার ওপরে নুপুর। জুতো পড়তে পড়তে রিশুর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে চোখের প্রশ্ন বাণ ছুঁড়ে মারে, এবারে দেরি হচ্ছে না, বসে বসে হ্যাংলার মতন তাকিয়ে আছো? বাইকের চাবি নিয়ে সোফা ছেড়ে উঠে পরে রিশু, সুন্দরীকে এরপর অপেক্ষা করালে আবার রেগে যাবে। romantic golpo kotha
বরাবরের মতন, বাইকে বসে ঘাড় ঘুরিয়ে ঝিনুককে জিজ্ঞেস করে, “ঠিক করে বসেছ?”
বাইকের পেছনে বহুবার বসেছে ঝিনুক, তবে কোনদিন সালোয়ার কামিজ পরে একপাশে পা ঝুলিয়ে বসেনি। এই দিল্লী এসে ডাক্তারের সাথে বাইকে একপাশে পা ঝুলিয়ে বসা। এর আগে পার্থের সাথে যখন বের হত তখন ওর পরনে হাফ প্যান্ট অথবা জিন্সের প্যান্ট পরা থাকত, সিটের দুপাশে পা দিয়ে পেছন থেকে পার্থকে জাপ্টে ধরে বসতে পারত, কিন্তু এখন ডাক্তারের কাঁধে আলতো হাত রেখে নিজের ভার সামলে এক সৌজন্যমূলক ব্যাবধান রেখেই বসে।
শারীরিক ব্যাবধানটা ইঞ্চি খানেক হলেও মানসিক দিক থেকে সেটা শত যোজনের। রিশুও বুঝতে পারে ওদের এই সম্পর্ক ভীষণ ভাবেই মার্জিত সৌজন্য মূলক হয়ে চলেছে।
মার্কেট পৌঁছাতে বেশি সময় লাগে না ওদের। কয়েকদিন পরেই ক্রিস্টমাস তায় আবার রবিবারের বিকেল, দক্ষিণ দিল্লী যেন সেদিন ওইখানেই চলে এসেছে সারা মাসের শপিং করতে। ভিড় দেখে দমে যাওয়ার পাত্রী নয় ঝিনুক, ভিড়ের মধ্যে খুব ইচ্ছে করছিল হারিয়ে যেতে, ইচ্ছে করছিল রিশুর সাথে লুকোচুরি খেলে একটু, খুব জানতে ইচ্ছে করছিল যদি ছেড়ে যায় তাহলে ওকি ওকে খুঁজবে? না, পারেনি সেটা করতে, চুপচাপ রিশুর পেছন পেছন ছিল। romantic golpo kotha
গত পাঁচ বছরে, কলেজে আর এমবিএ পড়ার সময়ে, প্রত্যেক বার ক্রিস্টমাসে বন্ধু বান্ধবীদের সাথে কোন না কোন ডিস্কোতে পার্টি করেছে, সারা রাত ধরে নাচানাচি, মদ খাওয়া ইত্যাদি। শুরুর দিকে নিজের বাড়িতে ফিরে আসত কিন্তু পরের দিকে মদের নেশায় এত মত্ত হয়ে থাকত যে কোন বন্ধুর অথবা বান্ধবীর বাড়িতে রাত কাটাতে হত। এবারে সেই ইচ্ছেটা অতটা প্রবল না হলেও জন মানুষের ভিড় দেখে সেই ইচ্ছেটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, কিন্তু এই কয়দিনে রিশুর চাল চলন দেখে বুঝে গিয়েছিল যে এইবার আর ওর ডিস্কোতে যাওয়া, আনন্দ ফুর্তি করা আর হবে না।
পার্টির ইচ্ছেটা চেপে রেখে যার জন্য আসা সেটাই শুরু করল ঝিনুক, কেনাকাটা। একটার পর একটা দোকান ঢুকে খুঁজে তোলপাড় করে আবার নতুন দোকানে ঢুকে পরে, ঝিনুকের আর সালোয়ার কামিজ পছন্দ হয় না। এই জন্যেই মা আর বোনের সাথে কোনদিন বাজার করতে যেত না রিশু, কিন্তু এই সময়ে না গেলেই নয়। অগত্যা মুখ বুজে ঝিনুকের পেছন পেছন এক দোকান থেকে অন্য দোকান করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। romantic golpo kotha
এই সালোয়ার কামিজের ডিজাইন পছন্দ হয় ত রঙ পছন্দ হয় না, কখন রঙ পছন্দ হয় তার ডিজাইন পছন্দ হয় না, কখন সব কিছু পছন্দ হলেও ওড়না পছন্দ হয় না। মেয়েদের কিছুই এক বারে পছন্দ হয় না সেটা জানে, কেন যে এরা আগে থেকে ভেবে আসেনা যে এটাই কিনবে সেটাই ভেবে পায় না রিশু। এইভাবে ঘন্টা খানেক এ দোকান সে দোকান ঘোরার পরে পাঁচ খানা সালোয়ার কামিজ কেনে ঝিনুক। পোশাক হাতে নিয়ে একবার অন্তত ঝিনুক ভাবে যে জিজ্ঞেস করে রিশুকে, তোমার কোন পছন্দ অপছন্দ নেই আমি কি পড়ব না পড়ব?
কিন্তু রিশুর নির্বিকার চেহারার দিকে তাকিয়ে বিরক্তিতে সেই প্রশ্ন করা ছেড়ে দিয়েছিল। তাও বার দুয়েক ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করেছিল ঝিনুক, এটা নেব? এই রঙটা ভালো? রিশু মাথা দুলিয়ে সায় দিয়েছিল, হ্যাঁ, ভালো লাগলে নিয়ে নাও। ধ্যাত কি রসকস হীন মানুষ রে বাবা, এই লোকের সাথে চন্দ্রিকা কি ভেবে যে প্রেম করেছিল কে জানে? তারপর আর কথা বলার ইচ্ছে হয়নি ওর সাথে। প্রথম দুবার সালোয়ার কেনার সময়ে নিজের ব্যাগ খুলেছিল দাম দেওয়ার জন্য, রিশু মানা করে দিয়েছিল ওকে, টাকা আমি দিচ্ছি। romantic golpo kotha
রিশু আর ঝিনুক, দুইজনের হাতে ভর্তি শপিং ব্যাগ, পাঁচটা সালোয়ার কামিজ, দুটো বড় ভারী জ্যাকেট, বেশ কয়েকটা বিছানার চাদর, তিনটে ঘরে পড়ার ঢিলে টপ আরো অনেক কিছু, পারলে প্রায় সেদিন পুরো বাজার কিনে নিয়ে আসে। বাপরে, কি ঘুরতে না ভালোবাসে মেয়েটা, এর আগে চন্দ্রিকার সাথে বের হওয়াটা আলাদা ব্যাপার ছিল, তখন জিনিস পত্র কেনার থাকত না বিশেষ, শুধু ঘুরে বেড়ান ছাড়া।
কিন্তু ঝিনুকের সাথে জিনিস কিনতে বেড়িয়েছে, ঘুরতে বের হয়নি তাই মাঝে মাঝে বিরক্ত হলেও মেয়েটার মুখের উজ্জ্বলতা দেখে চুপ করে যায়। চারপাশের দোকানে যা দেখছে একবার সব নতুন জিনিস গুলো হাতে নিয়ে দেখা চাই, এটা কি ওটা কি, এর কত দাম ওর কত দাম, না কিনলেও একবার অন্তত জিজ্ঞেস করা চাই। চন্দ্রিকার মধ্যে একটা পরিপক্ক ভাব ছিল, ঝিনুকের মধ্যে ভীষণ কচি কচি উচ্ছল ভাব, দেখে মনে হয় যেন খাঁচায় বাঁধা পাখি ছেড়ে দিলেই উড়ে যাবে খোলা আকাশে।
বারবার দুপুরের কথা মনে পরে যায় রিশুর, যেভাবে পা দাপিয়ে লাফিয়ে উঠে মুখ ব্যজার করে বলেছিল, “তুমি ডাক্তার না হাতির মাথা” মনে মনে হেসে ফেলে রিশু। মনের কোনায় অনেক দুরন্ত লুক্কায়িত স্বপ্ন ছিল, পূরণ হবে কি না জানা নেই ওর। romantic golpo kotha
প্রায় ঘন্টা খানেক এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে, অনেক কিছু কেনা কাটার পরে খিধে পেয়ে যায় ওদের। ঝিনুকের খুব ইচ্ছে ফুচকা খাওয়ার, কোলকাতার ফুচকার স্বাদ আর এখানে যে ফুচকাওয়ালা গুলো ফুচকা বিক্রি করছে, সেগুলো দেখলেই মনে হয় এর স্বাদ আলাদা হবে। ফুচকার সাথে চাট আছে, দেখে জিবে জল চলে আসে ঝিনুকের কিন্তু রিশুর দিকে তাকিয়ে সে কথা বলার সাহস হয় না ওর।
কিন্তু এই কয়দিনে ডাক্তারের খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে একটা ধারনা ওর হয়ে গিয়েছিল, কোন রকম বেশি তেল ঝাল মশলা একদম খায় না, রাস্তার খাবার হয়ত একদম খায় না। তরকারি বা ডিমের ঝোল খাওয়ার সময়ে মনে হত যেন হসপিটালের রান্না খাচ্ছে, মুখ বুজে এই কয়দিনে তাই খেয়েছিল ঝিনুক। এতক্ষন ঘুরে ফিরে আরো একটা চাহিদা ওর বুকের ভেতরে জেঁকে বসে, একটা সিগারেট পেলে ভীষণ ভালো হত, কিন্তু এই কয়দিনে ডাক্তারকে চিনে গেছে, হয়ত সিগারেটের নাম শুনলে ওকে বাড়ি থেকে বার করে দেবে।
সবাই ওকেই ধিক্কার জানাবে, বাড়ির কেউই জানে না শুধু মাত্র বোন ছাড়া যে ও সিগারেট খেত। romantic golpo kotha
রিশু ঝিনুকের চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারে যে খিধে পেয়েছে, পাশেই একটা ম্যাক ডোনাল্ডস দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে, “ম্যাক ডোনাল্ডস যাবে নাকি?”
ঝিনুকের ইচ্ছে ছিল ফুচকা, চাট ইত্যাদি খাওয়ার চিকেন বার্গার, পিজ্জা, এসব অনেক খেয়েছে এসবের বিশেষ ইচ্ছে ছিল না ওর। মাথা নাড়িয়ে বলে, “না থাক।” বুকে বল বেঁধে খুব নিচু গলায় বলে, “ফুচকা?”
কথাটা কানে গেছিল রিশুর, তাও না শোনার ভান করে বলে, “খিধে পায়নি ত? বাড়িতে রান্না অবশ্য করাই আছে।”
এতক্ষন হেঁটে হেঁটে ঘুরে ঘুরে পেটের মধ্যে নাড়ি ভুড়ি তালগোল পাকিয়ে গেছিল ঝিনুকের, নিজের ওপরে রাগ হয় ঝিনুকের, বেশ’ত ম্যাক ডোনাল্ডসে খেতে নিয়ে যাচ্ছিল, আদিখ্যেতা করে না বলতে কেন গেল? “হুম চল।”
ভাই বোনের সাথে বের হলেই ফুচকা খাওয়ান চাই, এখানে আবার কোলকাতার মতন শুধু তেঁতুল জল থাকে না, বিভিন্ন ধরনের জল থাকে আর বিশেষ করে দিয়ার সেই জল খেতে খুব ভালো লাগে। ঝিনুকের চেহারার অভিব্যাক্তি ধরে ফেলে রিশু, “ফুচকা খাবে?” romantic golpo kotha
চোখ দুটো চকচক করে ওঠে ঝিনুকের, এতক্ষন তাহলে ওর সাথে ইয়ার্কি মারা হচ্ছিল, চোখ বড় বড় করে রিশুর দিকে দেখে অবাক হওয়ার ভান করে বলে, “আচ্ছাআআ, তুমি ফুচকা খাও?”
নিভু নিভু চোখের তারায় নতুন আলোর ঝলকানি দেখে বেশ খুশি হয় রিশু, “আমার দুটো ভাই বোন আছে, তাদের জ্বালায় খেতে হয় আর কি।”
নেচে ওঠে ঝিনুক কিন্তু , “হ্যাঁ হ্যাঁ আমিও টেস্ট করব।” ফুচকা ওয়ালার কাছে একটাই বাটি চায় রিশু, ঝিনুক একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করে, “তুমি খাবে না?”
মুচকি হাসি দিয়ে রিশু উত্তর দেয়, “ওই তোমার থেকে একটা কি দুটো খেয়ে নেব।” চোখ কপালে উঠে যাওয়ার যোগার হয় ঝিনুকের, ডাক্তার ওর হাত থেকে ফুচকা খাবে, কথাটা বিশ্বাস হয় না একদম। রিশু একটু হেসে বলে, “কি হল ভাগ দেওয়ার ইচ্ছে নেই?”
আনন্দের অতিশজ্যে আর একটু হলেই রিশুকে জড়িয়ে ধরত ঝিনুক, সেই প্রবল ইচ্ছেটা দমন করে নরম গলায় উত্তর দেয়, “না মানে…”
ওর নরম গলা আর চোখের তারায় উজ্জ্বল দ্যুতি দেখে ক্ষনিকের জন্য রিশুর মনে হয় যে টুক করে ঝিনুকের টোপা নরম গালে যেখানে এখন একটা ক্ষীণ আঁচড়ের দাগ লেগে, সেখানে একটা ছোট চুমু খায়। কোথায় যেন একটা বাঁধা পায় রিশু, এক এক সাথে এক ছাদের তলায় থেকেও দুই অচেনা ব্যাক্তির মাঝের ব্যাবধান একটু কমলেও একদম নির্মূল হয়ে যায়নি। romantic golpo kotha
ফুচকা ওয়ালার চারপাশে অনেক ভিড় তাও সেই ভিড় ঠেলে হাত বাড়িয়ে দেয় ঝিনুক, প্রথম ফুচকাটা মুখে পুরতেই বুঝে যায় এতে সেই পুরানো স্বাদ নেই, হিন্দিতেই ফুচকা ওয়ালাকে নির্দেশ দেয়, “আর ঝাল বানাও, একি তেঁতুল জল নেই?” তারপর একের পর এক ফুচকা খেয়েই চলেছে।
রিশুর দিকে একটা ফুচকা এগিয়ে দিয়ে শিশুসুলভ কন্ঠে বলে, “খাও খাও… এবারে ঝাল দিয়েছে, ইসসস ঝাল আর মিষ্টি মিলে এখানের জলের টেস্ট একদম আলাদা।”
ঝিনুকের এই চপল চঞ্চল শিশুসুলভ আচরন দেখে হেসে ফেলে রিশু, মা বলেছিল ওকে, আজকাল মেয়েদের ছাব্বিশ সাতাসের আগে বিয়ে হয় না, সেখানে ঝিনুক মাত্র তেইশ, একটু যেন মানিয়ে নিয়েই চলে। দুই হাত ভর্তি শপিং ব্যাগ, ঝিনুকের হাতেও যেগুলো ছিল সেগুলো ধরতে হয়েছে।
দুই ভর্তি হাত দেখিয়ে মাথা নাড়ায় রিশু, “না না, তুমি খাও।”
কিছু না ভেবেই রিশুর মুখের কাছে ফুচকা ধরে বলে, “আমি খাইয়ে দিচ্ছি খাও না প্লিজ” মাথা নাড়ায় রিশু, রাস্তার মাঝে সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর হাত থেকে এই ভাবে খাবার খেতে ভীষণ লজ্জা করে ওর। ঝিনুকের সেই দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই, ওর মুখের কাছে হাত উঠিয়ে কাতর কন্ঠে আদর করে বলে, “এই একটা প্লিজ, খাইয়ে দিচ্ছিত…” romantic golpo kotha
নিরুপায় রিশু ঝুঁকে যায় ঝিনুকের দিকে, ফুচকার সাথে কোমল চাঁপার কলি আঙ্গুল তিনটে ওর ঠোঁটে স্পর্শ করে, ইচ্ছে করেই নাকি, ওর ঠোঁটের ওপরে বেশ কিছুক্ষন ধরে ছিল আঙ্গুল। একটা ফুচকা খেয়ে হেসে উত্তর দেয়, “এবারে তুমি খাও আমি আর খাব না।”
ঝিনুকের আঙ্গুলের ডগায় রিশুর ঠোঁটের পরশ বেশ অনেকক্ষণ লেগে থাকে, শয়তান ডাক্তার আরেকটু হলে মনে হয় আঙ্গুল গুলো খেয়ে নিত। লাজুক হেসে চোখ পাকিয়ে তাকায় রিশুর দিকে, “আর দেব না কিন্তু।”
হেসে ফেলে রিশু, “না না তুমি খাও।”
শুধু কি আর চোখের দেখায় ভালোবাসা হয়? ক্ষুধার্ত মানুষের সামনে যা রেখে দেওয়া হয় সে তাই গোগ্রাসে খেয়ে নেয়, রিশুর হৃদয় একটু একটু করে ভরতে শুরু করেছে বটে কিন্তু ক্ষুধার্ত নয়। রাতের অন্ধকার থাকতেই হসপিটালের জন্য বেড়িয়ে যাওয়া, যদিও তাড়াতাড়ি ফেরা হয় কিন্তু ঝিনুক বেশির ভাগ সময়ে নিজের ঘরের মধ্যেই থাকে, বেশি ওর সামনে আসে না। রিশুও নিজের পড়াশুনা নিয়েই ব্যাস্ত থাকে, মাঝে মধ্যে খাওয়ার সময়ে এই দু’একটা কথা হয়, “বাড়িতে ফোন করেছিলে আজকে?” “সকালে কি খেলে?” romantic golpo kotha
ইত্যাদি ছোট ছোট প্রশ্ন, উত্তর বেশির ভাগ, হ্যাঁ আর না তেই সমাপ্ত হয়। মাঝে মাঝে যখন ঝিনুক নিজের মায়ের সাথে কথা বলে তখন টুকরো কিছু কথা কানে যায়, “হ্যাঁ হ্যাঁ বেশি বলতে হবে না জানি।” “আমি’ত বলিনি দিতে, তাহলে একা আমাকে কেন বলতে যাও। ওকেও ত বলতে পারো।” আবার কখন নিচু গলা শোনা যায়, “না, ও উঁচু গলায় কথা বলে না।” চুপ করে শুনে যায় ওর কথা, কি বলার আর কি বোঝার সেটা জানে রিশু, তাই বিশেষ ঘাঁটায় না ঝিনুককে।
মায়ের সাথেও যখন ওর কথাবার্তা হয়, তখন মা ওকে বিশেষ কোন জোর করে না, মা বোঝে এত তাড়াতাড়ি সব কিছু মানিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। গতকাল রাতেই যখন মায়ের সাথে কথা বলছিল তখন ওর মা ওকে জিজ্ঞেস করেছিল, “হ্যাঁ রে বাবা, সত্যি করে বল, কি ইচ্ছে তোর?” চুপচাপ মনে মনে হেসে ছিল রিশু, “জানিনা মাম্মা।”
ফুচকা খাওয়া শেষে রিশু ঝিনুক কে বলে, “আর কিছু খাবে?”
মিষ্টি হেসে মাথা নাড়ায় ঝিনুক, “না বাবা আর নয়, অনেক হয়েছে।”
রিশু জিজ্ঞেস করে, “তাহলে এবারে বাড়ি?”
মাথা দোলায় ঝিনুক, হ্যাঁ বাড়ি। romantic golpo kotha
এবারে পারকিঙ্গের দিকে হাঁটার সময়ে রিশুর পাশাপাশি হাঁটে ঝিনুক, ঝিনুকের ছোট পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে এবারে আর তাড়াতাড়ি হাঁটে না রিশু। হাত ধরাধরি যদিও হয় না তবে মাঝে মাঝেই ওদের বাজু একে অপরকে ছুঁয়ে যায় মাঝে মাঝেই। অনেকদিন পরে ঝিনুককে মন খুলে একটু হাসতে দেখে ভীষণ ভালো লাগে।
আবার সেই খাঁচায় ফিরে যেতে হবে ভেবেই ঝিনুকের একটু খারাপ লাগে। সবাই বিয়ের পরে কত নতুন জায়গায় ঘুরতে যায়, কিন্তু ঝিনুকের কপালে বন্দী খাঁচা ছাড়া আর কিছু জোটেনি। ঘুরতে গেলেও যাবে কার সাথে, যার সাথে যাবে সে এখন ওকে নিজের করে নিতে পারেনি হয়ত।
এত’কি সব সময়ে ভাবে মেয়েটা, মাঝে মাঝেই কোথায় যেন হারিয়ে যায়, পুরানো দিনের চিন্তা করে নাকি? হয়ত করে, জানা নেই ওর। হয়ত সেইজন্যে এখন পর্যন্ত মন খুলে ওর সাথে কথা বলতে পারেনি। ভিড়ের মধ্যে মাঝে মাঝে ওর খুব ইচ্ছে হয়েছিল ঝিনুকের হাত ধরে, নরম কোমল পদ্ম কুড়ির মতন হাতের স্পর্শ, সকালের সেই কোমল স্পর্শের রেশ এখন যেন ওর হাতের মুঠোর মধ্যে লেগে। বাজুর দাগ গুলো কি মিলিয়ে গেছে? আর কোথায় কোথায় আঁচর কেটেছিল সেটা কোনদিন জিজ্ঞেস করেনি রিশু। romantic golpo kotha
বাইকে বসার সময়ে সব কটা ঝিনুকের হাতে ধরিয়ে দিতেই নরম কন্ঠেই বিরক্তি প্রকাশ করে, “এত গুলো আমি ধরব কি করে?”
হেসে ফেলে রিশু, “আচ্ছা তাহলে তুমি বাইক চালাও আমি তোমার পেছনে ব্যাগ নিয়ে বসি।”
আশে পাশের সব মেয়েদের হাত খালি, সেই মেয়েদের সাথে যে পুরুষেরা এসেছে তাদের হাতে ভর্তি ব্যাগ শুধু একমাত্র ঝিনুকের ক্ষেত্রেই অবস্থাটা উল্টো। ছাতার মাথা, কে জানত যে ডাক্তার শেষ পর্যন্ত এইভাবে ছল চাতুরি করবে, চোখে মুখে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বলে, “আমি অটো নিয়ে চলে যাবো কিন্তু।”
হেসে ফেলে রিশু, নাকের ডগা ইতিমধ্যে লাল হয়ে গেছে, ক্ষেপে গেছে সুন্দরী তাও মজা করার সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায়না রিশু, একটু দুষ্টুমি করেই বলে, “যাও কে মানা করেছে, বাড়ির চাবি কিন্তু…”
একটু হলেই কেঁদে ফেলত ঝিনুক, রাগে চোখ জ্বালা করতে শুরু করে দিয়েছিল প্রায়, “আচ্ছা আমিই নিয়ে নেব।”
মামদোবাজি পেয়েছে, রাস্তার মাঝে এইভাবে দাঁড়িয়ে মস্করা করা হচ্ছে ওর সাথে, আর একটু হলেই পা দাপিয়ে চলে যেত, কতবার এমন করেছে এর আগে, কিন্তু ডাক্তারের সামনে সেই পুরানো দুরন্তপনা দেখানর মতন শক্তি নেই ওর। চারপাশে লোকজন না হলে চেঁচিয়ে দিত ঝিনুক, কি লাগিয়েছ বলত? বাড়ি যাবে নাকি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে? গোমড়া মুখ করে ব্যাগ গুলো কোন রকমে দুই হাতে জাপটে ধরে বাইকের পেছনে উঠে বসতে চেষ্টা করে। romantic golpo kotha
যে মেয়ে কোনদিন এই সব কথায় কাঁদেনি বরং উল্টো অন্যকে কাঁদিয়ে এসেছে তার চোখে জলের রেখা দেখে হেসে ফেলে রিশু, বলতে যাচ্ছিল ওরে পাগলি মস্করাও বুঝিস না নাকি? তোকে একা ছেড়ে যেতে পারি নাকি? “দাও জ্যাকেট আর সালোয়ারের ব্যাগ গুলো দাও, ওগুলো সামনে নিয়ে নেব।”
ঠোঁটে (অনু)রাগ চোখে হাসি নিয়ে বেশ কয়েকটা ব্যাগ রিশুর হাতে ধরিয়ে দেয়, বাকি ব্যাগ গুলো নিয়ে বাইকের পেছনে বসে পরে ঝিনুক। কিছু ব্যাগ ওদের মাঝে ছিল বটে সেদিন, কিন্তু সেই সহস্র যোজনের ব্যাবধান আর ছিল না ওদের মাঝে। আসার সময়ে ওর কাঁধের ওপরে ছিল এক আলতো ছোঁয়া, ফিরে যাওয়ার সময়ে নরম হাতের স্পর্শ ছিল রিশুর কাঁধে, মাঝে মাঝেই সেই কোমল হাত ওর কাঁধ খামচে ধরত, মাঝে মাঝে অল্প ধাক্কা দুই শরীরের মাঝে।
এবারে আর বলতে হয়নি যে শাল জড়াতে, বাইকে উঠেই কান মাথা শালে ঢেকে নিয়েছিল ঝিনুক। বুঝে গিয়েছিল খোলা বাইকে এই ঠান্ডায় ওর শরীর কাহিল হয়ে যাবে। অন্যদিনে বাজারে গেলে বারেবারে ঘড়ি দেখত রিশু, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে খাওয়া সেরে নিত, যে যার ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ত। সেদিন আর ঘড়ির দিকে দেখার মতন সময় ছিল না ওদের হাতে। বাড়িটা কাছাকাছি না হলেই বেশ ভালো হত মনে হয়, সারাটা রাস্তা দুজনের মনের মধ্যে একটাই ইচ্ছে করছিল, আর একটু রাস্তা হলে ক্ষতি কি ছিল।
======================== পর্ব ছয় সমাপ্ত ========================
Too good man..