new valobasar golpo শেষের পাতায় শুরু – 13 by Pinuram

bangla new valobasar golpo choti. বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে অনেক রাত হয়ে যায়। রিশুর ছুটি নেই, পরের দিনেই ওকে ফিরে যেতে হবে দিল্লী তাই সে রাতেই নব বিবাহিত দম্পতিকে নিয়ে আম্বালিকা ফিরে আসে নিজের বাড়িতে। গাড়িতে সারাটা রাস্তা মাথা নিচু করে চুপচাপ রিশুর পাশে বসেছিল ঝিনুক। মাঝে মাঝে তাকিয়ে দেখে পাশে বসা মেয়েটার দিকে যার সাথে এই মাত্র ওর বিয়ে হয়ে গেল। মা যার ছবি ওকে দেখিয়েছিল তার সাথে পাশে বসা মেয়েটার মধ্যে কোন মিল খুঁজে পায় না।

কেমন যেন ভাবলেশ হীন চোখের চাহনি ঝিনুকের, যেন কোন সম্মোহনের বশে কাঁচের পুতুলের মতন নড়াচড়া করে চলেছে। গলা খ্যাঁকরে জানান দেয় নিজের উপস্থিতি, ঝাপসা দৃষ্টি নিয়ে তাকায় ঝিনুক রিশুর দিকে। বেদনা কাতর চাহিনি দেখে আর কিছু বলতে পারে না রিশু, বুঝতে পারে ঝিনুকের কষ্ট। গাড়িতে ওরা দুজন ছাড়াও সামনের সিটে দিয়া বসে, ঝিনুকের পাশে ওর বোন ঝিলিক বসে তাই চুপ করেই থাকে রিশু। নব দম্পতিকে বরন করে নতুন জীবনের আশীর্বাদ করে আম্বালিকা আর নিলাদ্রী।

new valobasar golpo

রিশুর ঘরে ঢুকে চারপাশে তাকিয়ে দেখে ঝিনুক। ওদের ফ্লাটের চেয়ে অনেক বড় এই বাড়িটা। মায়ের মুখে শুনেছে যে আম্বালকা আন্টির বাবা নাকি খুব নাম করা একজন ডাক্তার ছিলেন। রিশুর থাকার ঘরটা ওর ঘরের চেয়ে অনেক বড়, এক পাশে ধবধবে সাদা বিছানা, এক পাশের দেয়াল জুড়ে বড় একটা কাঁচের জানালা, সেই জালানার পাশে একটা পড়ার টেবিল, একটা চেয়ার, সেই সাথে বিছানার পাশে একটা কাউচ রাখা। ঘরে ঢোকার আগেই ওর সুটকেস দুটো কোন কাজের লোক এই ঘরে এনে রেখে দিয়েছিল।

সারাদিন ঘুম হয়নি ওর তার ওপরে মানসিক অবস্থা ভালো নয়, খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে। যে সুটকেসে ওর সাধারন দৈনন্দিনের জিনিসপত্র ছিল সেটা হাতে নিয়ে বিছানার ওপরে রাখার সময়ে বুঝতে পারে যে দরজায় কেউ একজন দাঁড়িয়ে। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে যে যার সাথে একটু আগে বিয়ে হয়েছে সেই রিশু দরজার পর্দা সরিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেছে। ধুক করে এক লহমার জন্য ওর হৃদপিণ্ড গলার কাছে এসে আটকে যায়। এত কিছু হয়ে গেল কিন্তু কেউই এক বারের জন্য মুখ খোলেনি। যেন কারুর কিছুই বলার নেই কারুর কাছে। new valobasar golpo

রিশু বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে ঝিনুকের দিকে। লাল বেনারসি পরিহিত, কপাল জুড়ে এখন লাল সিঁদুর মাখা, গালে নাকের ওপরেও লাল সিঁদুরের ছোপ ছোপ দাগ। কি ভাবছে ঝিনুক? লাজুক স্বভাবের কোনদিন নয় রিশু যে মেয়েদের সাথে কথা বলতে দ্বিধা বোধ করবে, কিন্তু এই মেয়েটার দিকে তাকাতেই কেমন যেন সব গুলিয়ে আসে ওর মাথার মধ্যে। ঝিনুক একা একাই সুটকেস খুলতে চেষ্টা করাতে এগিয়ে যায় রিশু।

রিশু এগিয়ে এসে বলে, “দাঁড়াও আমি খুলে দিচ্ছি।”

চুপচাপ সুটকেসের পাশ থেকে সরে দাঁড়ায় ঝিনুক। এটা ওর সাথে দ্বিতীয় বার কথা বলেছে।

সুটকেস খুলে দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে রিশু, “যে অয়েন্মেন্টটা বলেছিলাম সেটা লাগিয়েছিলে?”

মাথা দোলায় ঝিনুক, হ্যাঁ, এনেছিল এবং সেটা নিয়ম মতন লাগিয়েছিল আঁচড়ের দাগের ওপরে। ছেলেটার গলার আওয়াজ বেশ রাশভারী, ভীষণ ভাবেই কাছে ডাকে, দূরে সরে থাকতে চাইলেও যেন দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব নয়।

রিশু ওকে বাথরুম দেখিয়ে দিয়ে বলে, “যাও, আগে ফ্রেশ হয়ে নাও।” new valobasar golpo

সুটকেস থেকে রাতে পড়ার একটা নতুন কেনা মাক্সি আর তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পরে ঝিনুক। বাথরুমটা বেশ বড়, এক পাশে একটা বড় বাথটাব। গিজার চালিয়ে গরম জল করে এক এক করে নিজের সাজ খুলে ফেলে, সাবান দিয়ে মুখ হাত ধুয়ে নেয়। কপালের সিঁদুর ধুতে গিয়ে হটাত করেই কেমন যেন বাঁধা পরে যায় ওর মন, না এটা এমন থাকুক, হয়ত এটাই নিয়তি। আয়নায় নিজের গালের দিকে দেখে, এতক্ষন সাজের পেছনে লুকিয়ে ছিল দাগ গুলো, মেকআপ ধুয়ে যেতেই সেই অস্পষ্ট দাগ বেড়িয়ে পরে।

গালের দাগ এখন একটু আছে তবে হাতের আঁচড়ের দাগ তেমন আর নেই। মাক্সিটা পরে গায়ে তোয়ালে জড়িয়ে পরনের ভারী বেনারসি আর বাকি কাপড় হাতে বেড়িয়ে আসে বাথরুম থেকে। বেড়িয়ে এসে দেখে রিশু হাতে নিজের জামা কাপড় নিয়ে বাথরুম খালি হওয়ার অপেক্ষায়।

রিশু নিজের আলমারি খুলে একটা ঢিলে প্যান্ট আর একটা টি শারট বের করে নেয় পড়ার জন্য। বাথরুমের ভেতর প্রথমে কোন আওয়াজ না পেয়ে একটু ভাবনায় পরে যায়। ঝিনুক সকাল থেকে কিছুই খায়নি, খেয়েছে সেই রাতে বিয়ে শেষ হওয়ার পরে তাও আবার খুব অল্প। প্রেসার লো হয়ে মাথা ঘুরে পরে গেল না ত বাথরুমের মধ্যে? দেরি দেখে দরজায় একবার টোকা দেওয়ার কথা ভাবে, তারপরে ভাবে না, এটা ঠিক হবে না, মেয়েদের সাধারণত দেরি হয়। new valobasar golpo

তারপরে যখন জলের আওয়াজ পায় তখন ধড়ে প্রান ফিরে পায়, না ঠিক আছে ঝিনুক। এক ধাক্কায় এতবড় একটা দায়িত্ব ওর ওপরে এসে পড়েছে, সেই সাথে ভীতি ওর বুকের মাঝে ছায়া ফেলে, মানিয়ে নিতে পারবে ত? এরপর একে নিয়ে দিল্লী ফিরে যেতে হবে, জানা হয়নি ঝিনুকের পছন্দ অপছন্দ, আসলে চেনেই না যার সাথে হটাত করে বিয়ে হয়ে গেল। বাথরুম থেকে ঝিনুক বেড়িয়ে আসতেই ওর চোখ আটকা পরে যায় ঝিনুকের মুখের দিকে।

এতক্ষন মেকি সাজের নিচে লুকিয়ে থাকা মেয়েটার আসল সৌন্দর্য বেড়িয়ে এসেছে। পানপাতার মতন মুখ বয়াব, টানাটানা ভাসা ভাসা দুই চোখ, ওর দিকে তাকিয়ে যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। গালের দিকে চোখ যায় ওর, এখন আঁচড়ের দাগ মিলিয়ে যায়নি। কপাল নাক জুড়ে তখন সিঁদুরে মাখামাখি দেখে মনে মনে হেসে ফেলে রিশু। রিশুর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায় ঝিনুক।

রিশু ঢুকে পরে বাথরুমের মধ্যে। ধুতি পাঞ্জাবী খুলে, হাত মুখ ধুয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে দেখে ঝিনুক আলো নিভিয়ে ওর বিছানার ওপরে এক কোনায় চুপচাপ হাঁটু মুড়ে মাথা নিচু করে কুঁকড়ে বসে। রিশু ঘরের ডিম লাইট জ্বালিয়ে দেয়, হাল্কা নীল আলোয় ভরে ওঠে ঘর। দরজা বন্ধ করে দেয় রিশু, দরজা বন্ধের আওয়াজে কেঁপে ওঠে ঝিনুক, ভাসা ভাসা চোখে ওর দিকে দেখে। new valobasar golpo

কি করতে চলেছে এবারে, এবারে কি ঝাঁপিয়ে পড়বে নাকি ওর ওপরে? হাল্কা নীলাভ আলোয় রিশু পরিস্কার দেখতে পায় যে ঠান্ডার জন্য হোক কি কোন অজানা আশঙ্কায় ঝিনুকের কমনীয় শরীরে কাঁপন ধরেছে। বিছানার দিকে এগিয়ে যায় রিশু। ওকে এইভাবে এগিয়ে আসতে দেখে ঝিনুক আরও কুঁকড়ে যায়। ঝিনুকের এই ভাবে কুঁকড়ে যাওয়ায় রিশু খুব ব্যাথা পায়, এইভাবে কাউকে ব্যাথা দিতে কোনদিন চায়নি।

ঝিনুকের দিকে দেখে নরম গলায় বলে, “ঝিনুক যে অবস্থায় আমাদের…”

কথাটা শেষ করতে দেয় না ঝিনুক, ভগ্ন হৃদয়ে চাপা কন্ঠে চেঁচিয়ে ওঠে, “আমাদের বিয়ে হয়েছে বলে আপনি আমাকে কিনে নেন নি।”

সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর মুখে “আপনি” সম্বোধন শুনে হেসে ফেলে রিশু, “এখন আপনি ধরেই বসে আছো?” ঝিনুক চোয়াল চেপে ওর দিকে রক্ত চক্ষু হেনে তাকিয়ে তখন। রিশু নরম গলায় বলে, “আমি জানি তোমার মনের অবস্থা।”

ঝিনুক ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “না, আপনি কিছুই জানেন না। আমার দিকে এক পাও এগোবেন না।”

হাত তুলে শান্ত ঝিনুককে শান্ত করিয়ে বলে, “প্লিজ এত ফরমালিটি কর না, আপনি নয় তুমি করেই বল। আমরা সত্য যুগে বসবাস করছি না।” ঝিনুক হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারে না। নরম গলায় ঝিনুকের রাগ প্রশমিত করার জন্য বলে, “এত রাতে এইভাবে চেঁচাতে নেই। বাইরে মা পাপা আমার ভাই বোন তোমার বোন সবাই আছে।” ঝিনুক নিজের ভুল বুঝতে পেরে চুপ করে যায়। মাথা নাড়ায় রিশু, “না সত্যিই আমি কিছুই জানি না।” new valobasar golpo

কথা বাড়ায় না ঝিনুক, লেপটা গায়ের ওপরে টেনে নিয়ে এক কোনায় কুঁকড়ে শুয়ে পরে। বিছানার পাশের কাউচে চুপচাপ বসে পরে রিশু, ওর দিকে পেছন করে ঝিনুক শুয়ে। হাল্কা নীলাভ আলোয় পরিষ্কার বুঝতে পারে যে শায়িত ঝিনুকের দেহ থেকে থেকে ফুলে ফুলে উঠছে, চাপা কান্নার আওয়াজ ওর কানে ভেসে আসে।

আলমারি খুলে একটা মোটা শাল গায়ে জড়িয়ে চুপ করে সারা রাত কাউচে বসে কাটিয়ে দেয় রিশু। চোখের দৃষ্টি সাদা বিছানায় শায়িত ক্রন্দনরত ললনার দিকে নিবদ্ধ। এক দুশ্চিন্তায় ডুবে যায় ওর মন, যে মেয়ে বাবা মাকে অমান্য করতে পারে সে অনায়াসে ওর বাড়ির লোককে অমান্য করবে। মায়ের ছোট বেলার বান্ধবী তার বড় মেয়ে তাও মনের কোনায় এক বড় কিন্তু জাগে ওর। এর আগেও একজনের ওপরে বিশ্বাস করেছিল, কিন্তু সেই তৃতীয় ব্যাক্তি মায়ের মাতৃস্নেহ সঠিক অর্থে অনুধাবন করতে পারেনি।

ঝিনুক বদরাগী জেদি মেয়ে একদম ওর স্বভাব বিরুদ্ধ। বাবা মায়ের কথা অমান্য করে কেউ যদি বারেবারে আত্মহত্যার ভয় দেখায় সেই মেয়েকে জীবন সঙ্গিনী করা ভীষণ বিপদ। নিজেকেই প্রশ্ন করে রিশু, মা কি শুধু মাত্র বান্ধবীর মুখের দিকে চেয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে? একবারের জন্য মনে হয়েছিল যে বলে, মা মেয়েটা খুব বদরাগী আর জেদি, মনে হয় একে ওদের মাঝে এনে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। new valobasar golpo

কিন্তু মায়ের চোখে তখন মহামায়ার রূপ, কি করে একটা ভেসে যাওয়া মেয়েকে বাঁচাবে সেটাই চিন্তা ঘোরাফেরা করছিল ওর মায়ের মাথায়। সহজ সরল রেখায় ওদের জীবন ধারা অগ্রসর হবে না সেটা সেই রাতেই অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিল রিশু।

কয়েক বছর আগের কথা মনে পরে যায়, বেশ কয়েকবার চন্দ্রিকার সাথে বাড়ি নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছিল, কয়েকবার বুঝাতে চেষ্টা করেছিল ওর সাথে ওর বাড়ির সম্পর্ক। কিন্তু যা ভেঙ্গে গেছে সেটা শেষ পর্যন্ত জোড়া লাগাতে কোনদিন চেষ্টা করেনি রিশু, খানিকটা অহম ভাব জেগে উঠেছিল শেষের দিকে, যার জন্য কোনদিন চন্দ্রিকাকে ক্ষমা করতে পারেনি রিশু। কিন্তু এখানে ঝিনুকের ওপরে সেই রাগ সেই ক্ষোভ দেখাতে পারবে না রিশু, নিজের অহম ভাবটাকে ঢেকে রাখতে হবে শুধু মা আর দিয়ার মুখ চেয়ে।

মা হয়ত কোনদিন চাইবে না ওর প্রিয় বান্ধবীর সাথে আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাক অথবা এই দরজার বাইরে ওই ওর বোন আর বান্ধবী যে ভাবে হেসে খেলে বেড়াচ্ছে সেটাকেও ভেঙ্গে দিতে ওর মন চায় না। লেপের মুড়ি দেওয়া ঝিনুকের ঢেউ খেলানো দেহ পল্লবের দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা তখন চাপা কান্নায় কেঁপে চলেছে। new valobasar golpo

ভোরের দিকে তন্দ্রা ভাব এসে গেছিল রিশুর, দরজায় আলত ঠকঠকের আওয়াজ পেয়েই সেই তন্দ্রা ভাব কেটে যায়। জানালায় দিয়ে নতুন ভোরের আলো ওর সাদা বিছানার ওপরে এসে পড়েছে। চোখ ডলে, চশমা পরে দেখে গলা পর্যন্ত লেপ জড়িয়ে বিছানায় বসে ওর দিকে তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে তাকিয়ে ঝিনুক। ভুরু নাচিয়ে প্রশ্ন করে ঝিনুককে, কি হয়েছে?

ঝিনুক মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, কিছু না। সারা রাত কাঁদার ফলে ওর চোখ জোড়া ফুলে উঠেছে, কিন্তু স্বান্তনার সঠিক ভাষা খুঁজে পায় না। কাকে দেবে স্বান্তনা, নিজেকে না বিছানায় বসা মেয়েটাকে।

দরজা খুলতে যাওয়ার আগে, ঝিনুকের দিকে গায়ের শাল এগিয়ে দিয়ে বলে, “এটা গায়ে দাও না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে। এখন উঠে পর, ব্রাশ করে মুখ ধুয়ে নাও।”

কথা বাড়ায় না ঝিনুক। সারা রাত জেগেছিল, লেপের তলায় অন্য পাশে মুখ ফিরিয়ে শুয়েও ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানে বিছানার পাশের কাউচে বসে সারা রাত ওর দিকেই তাকিয়েছিল রিশু। ওর হাত থেকে শাল নিয়ে, সুটকেস খুলে ব্রাস বের করে বাথরুমে ঢুকে পরে ঝিনুক। রিশু আড়ামোড়া ভেঙ্গে, ঘুম থেকে ওঠার ভান দেখিয়ে দরজা খুলে দেখে দিয়া আর ঝিলিক একটা ট্রে তে চা নিয়ে দাঁড়িয়ে। new valobasar golpo

দিয়া দাদার মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেলে, “কি দাদা ভাই, ঘুম হয়েছে?”

ঝিলিকের ঠোঁটে দুষ্টুমি ভরা হাসি, বান্ধবীকে ঠেলে ইয়ারকি মেরে বলে, “ধ্যাত তুই না, ঘুম কি আর হয়। দুইজনে সারা রাত প্রেমালাপ করেছে।”

ওদের কথা শুনে হেসে ফেলে রিশু, “তোরা দুটো না বড্ড শয়তান হয়ে গেছিস।”

ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে দুইজনে। ঝিলিক জিজ্ঞেস করে, “দিদি কোথায়?”

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বাথরুম দেখিয়ে দিয়ে উত্তর দেয় রিশু, “বাথরুমে।”

ঝিনুক বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এসে দেখে দিয়া আর ঝিলিক ওদের ঘরে উপস্থিত। রিশু ঘাড় ঘুরিয়ে নতুন ভোরের সদ্য ফোটা ফুলের দিকে তাকিয়ে দেখে। কপালের সিঁদুর ধুয়ে ফেলেছে বইকি কিন্তু এখন যেন মাথার চুলে একটু লেগে রয়েছে। শাল জড়িয়ে মুখে হাসি টেনে দিয়া আর ঝিলিকের দিকে তাকায় ঝিনুক। ভেতরে খানিক ইতস্তত ভাব, বুদ্ধিমতী ঝিনুক সেই ভাব আড়াল করে রিশুর দিকে তোয়ালে এগিয়ে দিয়ে চোখের ইশারায় বাথরুমে ঢুকে যেতে বলে। এই টানাটানা চোখের হুকুম অমান্য করা ওর সাধ্যের বাইরে। new valobasar golpo

তোয়ালে নেওয়ার সময়ে দুইজনের আঙ্গুল ক্ষনিকের জন্য একে অপরের সাথে ছুঁয়ে যায়। জোর করে রিশুর হাতের মধ্যে তোয়ালে গুঁজে দিয়ে মিষ্টি হেসে দিয়া আর ঝিলিককে নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। রাতের ওই ঝড়ের পরে ভোরের বেলায় ঝিনুকের ঠোঁটের হাসি দেখে বিভোর হয়ে যায় রিশু, দরজা দিয়ে বেড়িয়ে না যাওয়া পর্যন্ত নিস্পলক ওর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থাকে।। সকালের খাওয়া দাওয়ার পর থেকেই তোড়জোড় শুরু, সন্ধ্যের ফ্লাইটে ফিরে যেতে হবে দিল্লী।

ঝিনুকের বাবা মা কিছু পরে উপস্থিত হয়ে যায় আম্বালিকার বাড়িতে। জিনিস পত্র গুছাতেই সময় চলে যায় ওদের। বড় বড় তিনটে সুটকেস ভর্তি জিনিস পত্র, একটা রিশুর দুটো ঝিনুকের। বারবার আম্বালিকা ঝিনুককে জানিয়ে দেয় যে দিল্লীতে প্রচন্ড ঠান্ডা, যেন একটু সাবধানে থাকে। গত রাতের যে আড়ষ্ট ভাব ছিল সেটা মায়ের দেখা পেয়ে অনেকটাই কেটে যায় ঝিনুকের। যদিও ঠিক ভাবে এই সম্পর্ক মানতে নারাজ তাও সবার মুখের দিকে চেয়ে ঠোঁটে হাসি মাখিয়ে থাকে। new valobasar golpo

সারাদিনে হ্যাঁ, না, মাথা দোলান ছাড়া বিশেষ কোন কথা হয়না রিশুর সাথে। লাজুক নতুন বউয়ের মতন ভাব দেখিয়ে এড়িয়ে গেছে রিশুকে। বিকেলের দিকেই সবাই রওনা হয় এয়ারপোরটের জন্য। সন্ধ্যের পরে ফ্লাইট, দিল্লী পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে যাবে, বাড়ি পৌঁছাতে আরো অনেক রাত হবে। আম্বালিকা বারেবারে ওদের বলে ছিল যে এয়ারপোরটে যেন কিছু খেয়ে নেয়। বাধ্য ছেলে মেয়ের মতন মাথা দুলিয়ে সায় দেয় রিশু আর ঝিনুক।

জল ভরা চোখে সবাইকে বিদায় জানিয়ে এয়ারপোরটের কাঁচের দরজা দিয়ে ঢুকে পরে দুইজনে। আম্বালিকা আর পিয়ালী, দুই মা, ওদের দিকে জল ভরা চোখ নিয়ে বিদায় জানায়।

রিশু সারা দিনে ঠিক ভাবে চোখ ভরে দেখার অবকাশ পায়নি ঝিনুকের দিকে। সর্বদা ওকে ঘিরে কেউ না কেউ ছিল, বিয়ের পরের দিনেই এই ভাবে ফিরে যেতে হবে বলে সবার খুব মন খারাপ, কিন্তু কিছু করার নেই, রিশু ডাক্তার কর্তব্য দায়িত্ব সবার আগে। এয়ারপোরটে ঢুকে লাগেজ চেক করানোর সময়ে তাকিয়ে থাকে ঝিনুকের দিকে। যদিও ঝিনুকের পছন্দ অপছন্দ ওর জানা নেই তাও বেশ কয়েকটা দোকান ঘুরে একটা দামি তুঁতে রঙের সালোয়ার কামিজ কিনেছিল, সেই সাথে গাড় নীল রঙের কলার দেওয়া লম্বা ওভারকোট। new valobasar golpo

ঝিনুকের পরনে ওর দেওয়া সেই সালোয়ার কামিজ দেখে বেশ ভালো লাগে। দুই কাজল টানা চোখের দিকে তাকায় রিশু, যেন ওকেই জিজ্ঞেস করছে, এত কি হা করে দেখছ? ঠোঁটে গাড় লাল রঙের লিপস্টিক, মাথার চুল একপাশে করে আঁচড়ান, গাড় বাদামি রঙের চুল মাথার পেছনে বেশ সুন্দর করে বাঁধা, সাজতে জানে মেয়েটা তাহলে। বাঁকা পাতলা ভুরুর মাঝে ছোট্ট লাল রঙের টিপ আর সিঁথিতে সিঁদুরের দাগ।

ওভারকোটটার বেল্ট কোমরে বাঁধা থাকার ফলে কোমর বেশ পাতলা দেখায়, দুই হাতে সোনার গয়না আর সদ্য বিবাহিতার নিদর্শন স্বরূপ সোনায় বাধানো শাঁখা পলা, লম্বা নখে লাল রঙের নেল পলিশ।

রিশুকে ওইভাবে তাকিয়ে থাকাতে দেখে ভীষণ বিব্রত বোধ করে ঝিনুক। বুকের ওপরে হাত ভাঁজ করে অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে থাকে। অত কি ফ্যালফ্যাল করে দেখছে ছেলেটা, এর আগে কি মেয়ে দেখেনি নাকি। এতক্ষনে ঠিক ভাবে কথাও হয়নি, কথা বলার মতন মানসিকতা ছিল না একদম। শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়েই গেল আর এই মানুষটার সাথে কেমন নির্বিকার ভাবে চলেও যাচ্ছে দিল্লীতে। new valobasar golpo

নিজের ওপর ভীষণ রাগ হয় ঝিনুকের, তোর নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছে বলতে কি কিছু নেই নাকি যে চলে যাচ্ছিস? আপন মনে হটাত করেই মাথা নাড়ায়, না চলে যাওয়া ছাড়া ওর কাছে আর কোন উপায় নেই।

সিকিউরিটি চেকের আগে ওর হাতে বোরডিং পাস ধরাবার সময়ে আঙ্গুলের সাথে আঙ্গুলের ছোঁয়া লাগে। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের লাইন বেশ লম্বা, ঝিনুকের তাড়াতাড়ি চেকিং হয়ে যায়। বেড়িয়ে এসে কোথাও রিশুকে দেখতে না পেয়ে ব্যাকুল হয়ে যায় ওর হৃদয়, নিজের অজান্তেই শুন্য হয়ে যায় মনের কানা গলি, গেল কোথায়? এই ত দাঁড়িয়েছিল লাইনে। এদিকে ওদিকে তাকিয়েও খুঁজে পায় না। হাওয়ায় মিলিয়ে গেল নাকি?

এমন সময়ে কাশির আওয়াজ শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে ওর পেছনে দাঁড়িয়ে। খুব বলতে ইচ্ছে করছিল, কোথায় গেছিলেন, এতক্ষন লাগে নাকি? না বলতে পারেনি ঝিনুক কেমন যেন বাধো বাধো ঠেকেছিল তখন। রিশু ইশারায় জানায় যে ফ্লাইটের আরো বেশ কিছু দেরি আছে। ঝিনুক ফোন করে মাকে জানিয়ে দেয় যে ওদের সিকিউরিটি চেক হয়ে গেছে, দিল্লীতে পৌঁছে জানিয়ে দেবে। একটা চেয়ার খালি দেখে ঝিনুক কে বসতে অনুরোধ করে রিশু। new valobasar golpo

অন্ধকার নেমে এসেছে বেশ আগেই, বড় কাঁচের জানালা পাশে দাঁড়িয়ে রিশু, কাঁধে ওর ল্যাপটপের ব্যাগ। চেয়ারে বসে ফোন দেখতে দেখতে আড় চোখে রিশুর দিকে তাকিয়ে দেখে। পরনে একটা জিন্স আর শারট, দেখে মনেই হয় না যে আগের দিন ওদের বিয়ে হয়েছে। ছেলেটাকে খুব সাধারন দেখতে কিন্তু কেমন যেন একটা আকর্ষণ আছে ওর বুদ্ধিদীপ্ত চোখে আর গুরু গম্ভির আওয়াজে। এই কয়দিনে ঠিক ভাবে নিজের ফোন দেখতে পারেনি ঝিনুক, প্রচুর কল আর প্রচুর মেসেজ।

বন্ধু বান্ধবীরা যারা এসেছিল তাদের সবার প্রশ্ন, হটাত কি করে দিল্লীর এত বড় এক ডাক্তারের সাথে ওর বিয়ে হয়ে গেল। বসে বসে ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রাম খুলে পার্থের সাথে যেকটা ছবি দেওয়া ছিল, সব সরিয়ে দেয়। ফেসবুকে, মোবাইলে প্রচুর মেসেজ কিন্তু কারুর মেসেজের উত্তর দেওয়ার মতন মানসিকতা ছিল না ওর।

কাঁচের জানালার অন্যপাশে ঘন অন্ধকার, সারি দিয়ে প্লেন দাঁড়িয়ে। কাঁচের জানালায় ঠিক পেছনে বসে থাকা ঝিনুকের প্রতিফলনের দিকে চোখ যায়, মাথা নিচু করে বসে এক মনে ফোন দেখে চলেছে। আশে পাশে প্রচুর মানুষের ভিড়, যারা একা নয় তারা সবাই তাদের সাথের লোকের সাথে গল্প করছে। এপাশে ওপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেশ কয়েকজন দম্পতি চোখে পরে, সবাই কেমন একে অপরকে জড়িয়ে ধড়ে আলাপে মশগুল। ওর সাথে ওর নতুন বিবাহিতা স্ত্রী তাও রিশু বড় একা। new valobasar golpo

ইন্দ্রজিত আর শালিনীকে বলেছিল সাথে আসতে, কিন্তু বিয়ের পরে নিলেশের সাথে ওদের বাড়ি চলে গেল তাই একা একাই ফিরতে হচ্ছে ওদের। ইন্দ্রজিত থাকলে অন্তত ওর সাথে গল্প করতে পারত আর শালিনীকে পেয়ে ঝিনুকের একাকিত্ত্ব ভাব দূর হত। অনেকক্ষণ না খেয়ে রয়েছে হয়ত ওর খিধে পেয়েছে, রিশুর অভ্যেস আছে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা, না খেয়ে থাকা।

কোন কোন দিন টানা পাঁচ ছয় ঘন্টা অপারেশান থিয়েটারে কাটিয়ে যখন বের হয় তখন আর খাওয়ার ইচ্ছে থাকে না। তাও একবার ঝিনুক কে জিজ্ঞেস করা উচিত কিছু খাবে কি না।

দুপুরের পরে কিছুই খায়নি, জল পিপাসাও পেয়েছে, কিছু বলতেও পারছে না ঝিনুক। গত রাতে যেভাবে গলা চড়িয়ে কথা বলেছে তারপর থেকে রিশু ওর সাথে ঠিক ভাবে কথা বলেনি। অতি আবশ্যক না হলে একদম কথাই বলেনি বরং ওকে এড়িয়েই চলে গেছে। ঝিনুক মাথা নিচু করে ফোন দেখলেও ষষ্ট ইন্দ্রিয় সজাগ ছিল ওর। পাশে ছায়া দেখতে পেয়ে মাথা উঁচু করতেই রিশুর সাথে চোখাচুখি হয়ে যায়। new valobasar golpo

ভুরু কুঁচকে ঝিনুক ওর দিকে তাকায়, কি হয়েছে? না মুখে বলেনি ইশারায় কথা হয় ওদের।

রিশু জিজ্ঞেস করে, “কিছু খাবে কি?”

নিজের ল্যাপটপের ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে উঠে দাঁড়ায় ঝিনুক, রিশুর চোখের দিকে তাকাতে গিয়েও চোখ নামিয়ে বলে, “একটু জল পেলে ভালো হত।”

ছোট্ট উত্তর দেয় রিশু, “আচ্ছা।”

সামনের একটা দোকান থেকে জলের বোতল কিনে ওর হাতে ধরিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আর কিছু চাই? ইঙ্কামিং ফ্লাইট এখন আসেনি তাই ফ্লাইট একটু লেট আছে।”

খিধে পেয়েছিল খুব, কিন্তু কিছুতেই মুখ ফুটে বলতে পারছে না। জল খেয়ে এপাশ অপাশ তাকিয়ে দেখে, বেশ কয়েকটা ফুড স্টল রয়েছে। ঝিনুকের চোখ খাবারের স্টলের দিকে যেতেই মনে মনে হেসে ফেলে রিশু, “পিজ্জা বারগার না দোসা?”

এমনি বন্ধুদের সাথে হলে পিজ্জা না হয় বার্গার এইসব খেত কিন্তু রিশুকে কি বলবে? নিচু গলায় বলে, তুমি যা খেতে চাও। কিন্তু গলা থেকে স্বর বের হয়না ওর, শুধু ঠোঁট কাঁপাটাই রিশুর চোখে পরে। শুনতে না পেয়ে ঝিনুকের দিকে একটু ঝুঁকে পরে রিশু, নাকে ভেসে আসে মাদকতাময় সুঘ্রাণ, বুক ভরে শ্বাস নিয়ে সেই ঘ্রানে নিজের স্নায়ুকে তরতাজা করে নেয় রিশু। আবার জিজ্ঞেস করে, “কি খাবে বল?” new valobasar golpo

কানে কালা নাকি ছেলেটা, নাকি রিশু ইচ্ছে করেই ওর দিকে অমন ভাবে ঝুঁকে? কিঞ্চিত রেগে যায় ঝিনুক, ভুরু কুঁচকে বলে, “না, খিধে নেই আমার।”

মুচকি হাসে রিশু, “লো কস্ট ফ্লাইট, খেতে দেবে না কিন্তু।”

হাসি পেয়ে গেছিল ঝিনুকের তাও ওর সামনে হাসতে খুব বাধো বাধো ঠেকছিল তাই গোমাড়া মুখ করে উত্তর দেয়, “দোসা হলেই চলবে।”

দুটো মসালা দোসা নিয়ে সামনা সামনি চেয়ারে বসে খেতে শুরু করে দুইজনে। দিল্লী পৌঁছাতে কত রাত হবে জানা নেই, এয়ারপোরট থেকে ওর বাড়ি কতদুর সেটাও জানে না, শুধু জানে সিআর পার্ক এলাকায়। দিল্লীতে বেড়াতে এসেছে ঝিনুক কিন্তু সেটা অনেক ছোট বেলায়। গত রাতে পাশে আসেনি, সেটা ঠিক, কিন্তু দিল্লীতে কি করবে? কটা ঘর ওর বাড়িতে, আলাদা শোয়ার ঘর আছে? মনের মধ্যে হাজার প্রশ্ন জেগে ওঠে ওর। যদি রিশু বিছানায় শোয় তাহলে ও মাটিতে শোবে। new valobasar golpo

যদিও ওদের ধর্ম সম্মত বিয়ে হয়েছে কিন্তু তাও এই ভাবে কোন অচেনা অজানা মানুষের কাছে নিজেকে সঁপে দিতে নারাজ। দেখে ত মনে হয় না যে রিশু ওর প্রতি এতটা নিষ্ঠুর হবে। এখন এই প্রশ্নের উত্তর জানা হয়নি, কেন ওকে বিয়ে করেছে। বেশ শিক্ষিত এত বড় ডাক্তার, ইচ্ছে করলে ওর চেয়েও অনেক ভালো মেয়েকে বিয়ে করতে পারত। প্রেমে ধাক্কা খেয়েছে বলে আর বিয়েই করল না? মায়ের মুখে শুনেছে, অম্বরীশ প্রচন্ড মাতৃ ভক্ত ছেলে, ভয় সেখানেই কথায় কথায় হয়ত এরপর মাকে টেনে আনবে।

এই সব মাতৃ ভক্ত অতি ভালো ছেলেদের দেখলেই গা পিত্তি জ্বলে যায়, কেমন যেন ভিজে বেড়াল মনে হয় ওদের। এতক্ষন সামনে বসে থাকলেও ভুলেও চোখ তুলে তাকায়নি ওর দিকে, পাছে চোখাচুখি হয়ে যায় আর ওর মনের ভেতরের হাজার প্রশ্ন পড়ে ফেলে রিশু। তবে রিশুকে দেখে ভিজে বেড়াল বলে একদম মনে হয় না, বরঞ্চ মনে হয় যেন পশুর রাজা সিংহ, শান্ত বুদ্ধিদীপ্ত, মার্জিত শিক্ষিত সেটা ওর চলনে বলনে চেহারায় ফুটে ওঠে। new valobasar golpo

গতরাতে ও যেমন ভাবে রিশুর ওপরে চেঁচিয়ে ছিল অন্য কোন ছেলে হলে সেই মুহূর্তে বাড়ির সবাইকে ডেকে একটা বিহিত করে দিত, হয়ত ওকে টেনে এক থাপ্পড় মেরে চুপ করিয়ে দিত। সেই সব কিছুই করেনি, উলটে ওকে বুঝিয়ে চুপ করাতে চেষ্টা করেছে।

চুপ করে খেতে খেতে মাঝে মাঝে ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে দেখে। এত নিচু মাথা করে কি কেউ খায় নাকি? এরপর মনে হয় থালার মধ্যে ঢুকে পড়বে। ঝিনুকের খাওয়া দেখে ভীষণ হাসি পায় রিশুর, ছোট এক টুকরো নিয়ে কত ভেবে তারপরে মুখের মধ্যে গ্রাস তুলছে। এত কি ভাবছে? কোথায় হারিয়ে গেছে মেয়েটা? মায়ের মুখে অথবা পিয়ালী আন্টির মুখ থেকে যা শুনেছে তার কিছুই মিলছে না। শুনেছে এই মেয়ে নাকি প্রচন্ড কথা বলে, ভীষণ উচ্ছল আর প্রানবন্ত, কোথায় সেই সব?

একটা প্রেমে ধাক্কা খেয়েছে বলে এত মুষড়ে পড়েছে? একদম সঠিক সময়ে সেই ধূর্তের সত্য উন্মোচন হয়েছে বলেই বেঁচে গেছে না হলে সারা জীবন সেই ধূর্তের সাথে কাটাতে হত। তাই বলে এই ভাবে মুষড়ে পড়বে নাকি? চন্দ্রিকা চলে যাওয়ার পরে মুষড়ে যদিও পরেনি তবে কারুর সাথে আর নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে পারেনি। মনে মনে হেসে ফেলে রিশু, রাতে যেভাবে আহত সাপের মতন ওর দিকে ফোঁস করে উঠেছিল তাতেই বোঝা গেছে যে এই মেয়ে ভাঙবে কিন্তু মচকাবে না। new valobasar golpo

ভাবনা চিন্তনের ধারা কেটে যায় রিশুর গলা শুনে, “এত কি ভাবছ?”

সত্যি ধরা পরে গেছে, কান লাল হয়ে যায় ঝিনুকের। মাথা নাড়ায়, না কিছু না এমনি। ওর দিকে তাকাতে ভীষণ বিব্রত বোধ করে। দোসা খাওয়া শেষ, অর্ধেক খেয়েই ওর পেট ভরে গেছে।

রিশু ওর থালার দিকে দেখে বলে, “এই টুকু, ব্যাস, আর খাবে না?”

মাথা দোলায় ঝিনুক, না ব্যাস হয়ে গেছে।

খাওয়া শেষে উঠে পরে দুইজনে। হাঁটতে হাঁটতে গেটের দিকে চলে যায়, হাঁটার সময়ে পাশাপাশি না হেঁটে একটু তফাতে পেছনে পেছনে হেঁটে চলে ঝিনুক। ফোন করে বাড়িতে জানিয়ে দেয় যে ফ্লাইট লেট, ওদের দিল্লী পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে যাবে। যথারীতি, ওর মায়ের সাথে রিশুও কথা বলে। তারপরে যখন রিশু নিজের বাড়িতে ফোন করে তখন ঝিনুক ও বেশ ভালো ভাবেই কথা বলে। শুধু মাত্র যখন দুজনা অন্যজনের সাথে কথা বলে না তখন মনে হয় যেন দুইদিকে দুই তুষের আগুন জ্বলছে ধিকিধিকি করে। new valobasar golpo

বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পরে প্লেনের বোর্ডিং কল হয়। জানালার পাশে ঝিনুকের সিট তার পাশে রিশু। কিছু পরে লম্বা রানওয়ে ধরে অন্ধকার চিড়ে ভীষণ জোরে দৌড়াতে শুরু করে প্লেন, ঝিনুকের বুক কেঁপে ওঠে, গত দশ বছর এই শহরে কাটিয়েছে। প্লেনটা মাটি ছাড়তেই চোখের কোনা ভিজে যায় ওর, রুমাল বার করে রিশুর অলক্ষেই চোখের কোনা মুছে বাইরের দিকে তাকায়।

আলো গুলো ধিরে ধিরে এক এক করে ছোট হয়ে আসছে, আর কি ফিরে আসা হবে এই মাটিতে? চোখ বন্ধ করে জানালার দিকে মুখ ফিরিয়ে হাতের মুঠো শক্ত করে নেয়, বুকের পাঁজর কেঁদে ওঠে, মা গো…

শেষের পাতায় শুরু – 12 by Pinuram

কেমন লাগলো গল্পটি ?

ভোট দিতে হার্ট এর ওপর ক্লিক করুন

সার্বিক ফলাফল / 5. মোট ভোটঃ

কেও এখনো ভোট দেয় নি

Leave a Comment