bangla trilogy love story choti. হসপিটাল পৌঁছাতে অন্যদিনের চেয়ে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল রিশুর। সারাটা রাস্তা শুধু মাত্র মনে হচ্ছিল ছুটি নিলে ভালো হত, কিন্তু কর্তব্য সবার আগে আর এডমিন ডিপার্টমেন্টে ওর পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। হসপিটালে ঢুকে সব থেকে আগে এইচওডির সাথে দেখা করে যে ইমেল এসেছিল সেটার একটা প্রিন্টআউট নিয়ে ডক্টর ধিলোনের একটা চিঠি নিয়ে এডমিন ডিপার্টমেন্টে জমা দিয়ে দেয়। এপ্রন আর গলায় স্টেথো ঝুলিয়ে চেম্বারের দিকে হাঁটতে হাঁটতে মাকে ফোন করে রিশু।
আম্বালিকা ছেলের ফোন পেয়েই একটু আহত কন্ঠে বলে, “কি রে কাল রাতে আর ফোন করলি না?”
মাথা চুলকে অপরাধীর হাসি হেসে উত্তর দেয়, “মানে ওই ডিনার করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেল তাই আর ফোন করা হয়নি। পাপা বেড়িয়ে গেছে?”
হেসে ফেলে আম্বালিকা, “হ্যাঁ তোর পাপা অনেক আগেই বেড়িয়ে গেছে। তোর কি খবর? তোরা কেমন আছিস?”
মাথা চুলকে লাজুক হাসি দিয়ে উত্তর দেয়, “পা বাড়িয়েছি, মাম্মা।”
ছেলের ভালোবাসার কথা শুনে আম্বালিকার বুক ভরে যায়, ধরা গলায় আশীর্বাদ করে ছেলেকে বলে, “আশীর্বাদ করি বাবা তোরা যেন ভালো থাকিস।”
trilogy love story
মায়ের ধরা গলা শুনে রিশুর দৃষ্টি মুহূর্তের জন্য ঝাপসা হয়ে যায়, “মাম্মা…”
ছেলের গলায় মা ডাক বড় মধুর। আম্বালিকা চোখের কোল মুছে হাসি মুখে ছেলেকে বলে, “না রে কিছু না, আমার সেই ছোট্ট ছেলেটা আজকে অনেক বড় হয়ে গেল তাই…”
রিশু ধরা গলায় মাকে বলে, “প্লিজ মাম্মা।” একটু থেমে মাকে জানায়, “আচ্ছা শোনো না, জানুয়ারির ফার্স্ট উইকে একটা সেমিনারের জন্য আমাকে লন্ডন যেতে হবে।”
ওর মা ওকে জিজ্ঞেস করে, “ঝিনুককে নিয়ে যাচ্ছিস কি?”
মাথা নাড়ায় রিশু, “না গো, বেড়াতে যাচ্ছি না, হসপিটালের কাজে যাচ্ছি।”
ওর মা ওকে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে ঝিনুক কোথায় থাকবে? যাওয়ার আগে তাহলে ওকে কোলকাতায় পৌঁছে দিয়ে যা।”
রিশু উত্তরে বলে, “আমি ওকে বলেছিলাম কোলকাতায় যেতে, কিন্তু ও কিছুতেই কোলকাতা যেতে চাইছে না।”
ছেলের কথা শুনে হেসে ফেলে আম্বালিকা, নিজেও এক সময় প্রেম করেছে তাই ঝিনুকের মনের অবস্থা ওর বুঝতে বিন্দু মাত্র অসুবিধে হয় না, “সে তো বুঝলাম কিন্তু একা একা কি করে থাকবে?” trilogy love story
একটু ভেবে রিশু মাকে বলে, “আমি বলছিলাম কি যদি বোন দিন দশেকের জন্য এখানে আসতে পারে।”
একটু ভেবে ওর মা ওকে বলে, “আচ্ছা দেখছি কি করা যায়, ফেব্রুয়ারিতে ফাইনাল এক্সাম শুরু হবে। পড়াশুনা তো এমনিতে করেই না।”
রিশু মুচকি হেসে বলে, “আরে মাত্র দশ দিনের তো কথা, আমি বলে যাবো ও পড়াশুনা করবে।”
হেসে ফেলে আম্বালিকা, “হ্যাঁ তোর বোন কত কথা শোনে জানা আছে।” একটু ভেবে বলে, “তোর পাপার সাথে কথা বলে দেখি কি বলে। দিয়া গতকাল পিয়ালির বাড়িতে গেছে, দিয়া যাবে শুনলে হয়ত ঝিলিক ও যেতে চাইবে, তার ও তো দিদির বাড়ি।”
মাথা দোলায় রিশু, ওর একটা ভীষণ দুষ্টু মিষ্টি শ্যালিকা আছে তবে সেইভাবে সেই শ্যালিকার সাথে কোনদিন মন খুলে আলাপ পরিচয় হয়নি, তাই মাথা দুলিয়ে মাকে বলে, “আচ্ছা তাহলে দুইজনকেই পাঠিয়ে দিও, আমি বিকেলের মধ্যে ওদের টিকিট কেটে পাঠিয়ে দেবো।”
ওর মা হেসে ফেলে, “আরে বাবা, আগে তোর পাপার সাথে কথা বলে দেখি পিয়ালির সাথেও কথা বলে দেখি ওরা কি বলে।”
রিশু মাকে হেসে বলে, “কাকে কি ভাবে ম্যানেজ করবে সেটা তোমার ব্যাপার, আমি টিকিট কেটে তোমাকে জানিয়ে দেবো।”
আম্বালিকা পারলে ফোনের মধ্যে থেকেই হাত বাড়িয়ে রিশুর কান টেনে যেন বলে, “তুই সেই ছোট বেলা থেকে বড্ড জেদি, সব কিছু আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিস।” trilogy love story
হেসে ফেলে রিশু, “তুমি সব পারো মাম্মা। আচ্ছা এখন আমার ওপিডি আছে, দেরি হয়ে যাচ্ছে পরে ফোন করব, রাখছি।”
চেম্বারে ঢুকতেই দেখে প্রচুর রুগী ওর জন্য অপেক্ষা করছে। ভেবেছিল একবার ঝিনুককে একটা মেসেজ করবে কিন্তু সেটা আর করা হল না। কয়েকজন জুনিয়ার ডাক্তারদের নিয়েই একের পর এক রুগী দেখা শুরু করে দিল। রুগী দেখতে দেখতেই মাঝে মাঝে ওর চোখ মোবাইলের দিকে চলে যায়, এতক্ষনে নিশ্চয় বান্ধবীর সাথে শপিং করতে বেড়িয়ে পড়েছে।
টুং করে মোবাইলে আওয়াজ হতেই ক্ষনিকের বিরতি নিয়ে মোবাইল খুলে প্রেয়সীর ছোট মেসেজ পড়ে নেয়, “আমরা বেড়িয়ে গেছি।” প্রেস্ক্রিপসান লিখতে লিখতেই অন্যহাতে মোবাইল কি-প্যাড টিপে উত্তর দেয়, “সাবধানে যেও, লাভ ইউ।” সঙ্গে সঙ্গে ওর প্রেয়সীর উত্তর আসে, একটা চুম্বনের ইমোজি সেই সাথে অসংখ্য লাল হৃদয়ের ইমোজি।
ট্যাক্সিতে বাড়ি থেকে রিশুর হসপিটাল পৌঁছাতে বেশি সময় লাগে না। হসপিটালের বিশাল বিলডিং দেখে ঝিনুক আর রিতিকা দুইজনেই বেশ ধন্ধে পরে যায়, কাকে কি জিজ্ঞেস করবে? বুকে বল নিয়েই কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে অরথোপেডিক ডিপার্টমেন্টে পৌঁছে যায় ওরা। ওদের দেখে ডিপার্টমেন্টের বাইরে দাঁড়ানো দারোয়ান জিজ্ঞেস করাতে ঝিনুক জানায় যে ডক্টর অম্বরীশ সান্যালের স্ত্রী। দারোয়ান ওদের রিশুর চেম্বার দেখিয়ে দিয়ে চলে যায়। চেম্বারের বাইরে বিশাল ভিড় দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পরে ঝিনুক। trilogy love story
রিতিকা ফিসফিস করে ওকে জিজ্ঞেস করে, “উফফ কি ভিড় রে বাবা। তোর ডক্টর কোথায়?”
ভিড় ভর্তি চেম্বারের মধ্যে উঁকি মেরে ঝিনুক রিশুকে দেখতে চেষ্টা করে। একটা টেবিলের পাশে তিনজন ডাক্তার বসে রয়েছে, একটা বড় চেয়ারে চশমা পরে বসে রিশু কোন এক রুগীর চিকিতসায় ব্যাস্ত। ঝিনুক রিতিকার বাজু টেনে রিশুর দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলে, “ওই যে বসে আছে।”
রিতিকা রিশুকে দেখে বড় বড় চোখ করে বলে, “মাই গুডনেস, করেছিস কি? ওই হ্যান্ডুটা তোর ডক্টর?”
লাজুক হেসে মাথা দোলায় ঝিনুক, “হুম…”
রিতিকা ওর কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, “ডাক, একটু কথা বলি।”
চেম্বার ছেড়ে বেড়িয়ে এসে রিতিকাকে বলে, “তোর মাথা খারাপ নাকি? ও এখন ব্যাস্ত আছে, কাজ শেষ হোক তারপরে ডাকবো।”
রিতিকা বিষণ্ণ গলায় ওকে বলে, “মানে? কতক্ষন দাঁড়াতে হবে কে জানে।”
মিষ্টি হেসে ঝিনুক উত্তর দেয়, “আমি তো এখানেই ওর জন্য ওয়েট করবো।”
রিতিকা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “শপিং?” trilogy love story
হেসে ফেলে ঝিনুক, “সারপ্রাইজ আগে তারপরে শপিং, তার জন্য যদি আমাকে এখানে দুই ঘন্টাও বসে থাকতে হয় তাতেও আমি রাজি।”
রিতিকা ঝিনুককে আলতো ধাক্কা মেরে মুচকি হেসে বলে, “উফফফ পারি না, ডারলিং একদম মজে গেছে মাইরি।”
লাজুক হাসি হেসে ঝিনুক বলে, “চল বাইরে চল দেখি কোথাও বসার জায়গা পাওয়া যায় নাকি।”
বাইরে বের হতেই একজন ডাক্তারের সাথে ওদের দেখা হয়। সেই ডাক্তার ওদের দিকে হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “মিসেস সান্যাল?”
ঝিনুক ভুরু কুঁচকে সেই আগন্তুক ডাক্তারকে নিজের পরিচয় দিয়ে বলে, “ইয়েস, ইটস মি।”
সেই ডাক্তার ওর হাতে হাত মিলিয়ে হেসে নিজের পরিচয় দেয়, “আমি ডক্টর ব্রিজেশ সিনহা, সান্যালের কলিগ।” রিশুর চেম্বারে উঁকি মেরে দেখে ওদের আক্ষেপ করে বলে, “দুটোর আগে ফ্রি হবে না মনে হচ্ছে।”
ম্লান হাসি দেয় ঝিনুক, “দ্যাটস ওকে, আমি ওর জন্য ওয়েট করবো।”
মুচকি হাসি দেয় ব্রিজেশ, “তুমি দাঁড়াও আমি দেখি ওকে বলে।”
ব্রিজেশ চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পরে চেম্বার ছেড়ে বেড়িয়ে ঝিনুককে দেখে ভীষণ ভাবেই অবাক হয়ে যায় রিশু, “তুমি? এই সময়ে? এখানে?”
ওর পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মিষ্টি হেসে উত্তর দেয়, “সারপ্রাইজ…” তারপরে পাশে দাঁড়ানো রিতিকার সাথে পরিচয় করিয়ে বলে, “আমার বান্ধবী, রিতিকা, যার কথা তোমাকে গতকাল বলছিলাম।” trilogy love story
রিতিকার দিকে একবার তাকিয়ে সুন্দরী প্রেয়সীর আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে অবাক হয়েই ফিসফিস করে বলে, “তুমি না পাগল আছো। এই সময়ে আসতে হত তোমাকে?”
ঝিনুক একটু মুখ ভার করে বলে, “আমি এসেছি বলে তোমার অসুবিধে হচ্ছে? ভাবলাম একটা সারপ্রাইজ দেব। আমি কিন্তু তোমাকে ডাকতে যাইনি, তোমার বন্ধুটা বলল না হলে আমি তো এখানে তোমার লাঞ্চ আওয়ার পর্যন্ত জন্য ওয়েট করতাম।”
এই সাজে ওর রূপসী প্রেয়সী সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে ওর সামনে আবির্ভূত দেখে চোখ ফেরাতে অক্ষম হয়ে পরে রিশু। প্রেয়সী ললনার গভীর কাজল কালো চোখের তারায় প্রেমের ঝলকানি দেখে সব কিছু ভুলে যায় রিশু। বড় বড় কালো চোখের মণির মাঝে নিজের প্রতিফলন দেখে একটু হেসে বলে, “ইউ আর ম্যাড।”
হিল তোলা থাই হাই বুট পড়ার জন্য ঝিনুকের মাথা রিশুর কাঁধ ছাড়িয়ে যায়। রিশুর মুখে হাসি দেখে দুই হাতে ওর বাজু জড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে গলা নামিয়ে বলে, “ফর ইউ ওনলি।”
হসপিটাল ভর্তি লোকের সামনে রিশুর প্রেয়সী ওর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকাতে ভীষণ ভাবেই অপ্রস্তুতভাব বোধ করে রিশু। ঝিনুকের কোমল হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, “চলো একটু ক্যান্টিনে গিয়ে বসি।” trilogy love story
ঝিনুক চারপাশে তাকিয়ে দেখে অনেকেই ওদের দিকে কেমন যেন একটা ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে, সেই দেখে ভীষণ ভাবেই অপ্রস্তুত হয়ে রিশুর হাত ছেড়ে একটু তফাতে দাঁড়িয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “না না, এই তো তোমার সাথে দেখা হয়ে গেল, আমরা যাচ্ছি তুমি পেসেন্ট দেখো।”
মেয়েটা সত্যি পাগল, এই দুই মিনিটের জন্য দেখা করতে এসেছিল নাকি? যত দেখে তত যেন নতুন মনে হয় এই সুন্দরীকে। পরনে হাল ফ্যশানের ছেঁড়া জিন্স আর গলা উঁচু চাপা সোয়েটার তার ওপরে গাড় নীল রঙের ওভারকোট, ললনাকে দেখে গতরাতের শাড়ি পরিহিতা রূপসী স্ত্রী বলে মনেই হচ্ছে না, মনে হয় কোন ম্যাগাজিনের পাতা থেকে উঠে আসা অপূর্ব সুন্দরী এক মডেল। এতদিন এমন আধুনিকা সুন্দরীরদের থেকে একটু দুরেই থাকত রিশু, একটু হীনমন্যতায় ভুগত, তবে ওর অবচেতন মন ভীষণ চাইত এমন সুন্দরীদের একটু ছোঁয়া পেতে।
রিশু ওকে বলে, “তোমরা ফার্স্ট টাইম আমার হসপিটালে এসেছ, এক কাপ কফি হয়েই যেতে পারে।” নিজের চেম্বারে উঁকি মেরে ইশারায় ব্রিজেশকে ওর কাজ দেখতে অনুরোধ করে।
ঝিনুক ওকে আস্বস্থ করে বলে মিষ্টি হেসে বলে, “আরে না না, আমি চাইনা তোমার কোন অসুবিধে হোক। তুমি শুধু ঠিক সময়ে লাঞ্চ করে নিও।”
হেসে ফেলে রিশু, “ওকে, বাই দ্যা ওয়ে, চল তোমাদের বাইরে পর্যন্ত ছেড়ে আসছি।” trilogy love story
রিশুর বাম বাজু দুইহাতে জড়িয়ে ধরে ওর পাশে হাঁটতে হাঁটতে চারপাশে তাকিয়ে দেখে ঝিনুক, অসংখ্য মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এই হসপিটালে আসে চিকিৎসা করাতে, কতজনের কত ধরনের রোগ। কথায় কথায় রিশু জানায়, দিল্লীর এমস ভারতের সব থেকে নামকরা হসপিটাল, সেটা শুনে গর্বে ঝিনুকের বুক ফুলে যায়, ওর রিশু ভারতের সব থেকে নামকরা হসপিটালের ডাক্তার। নিজে চোখেই দেখছে এই জনসমুদ্র।
সুন্দরী স্ত্রীর দিক থেকে কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছিল না রিশু, বারে বারে ওর তৃষ্ণার্ত চোখ ঝিনুকের কোমল অধর আর গভীর কালো চোখের দিকে চলে যাচ্ছিল। রিশুর আবেগঘন চোখের চাহনিতে ভীষণ ভাবেই আন্দোলন জেগে ওঠে ঝিনুকের ছোট হৃদয়ের অভ্যন্তরে। হসপিটালের বাইরে বেড়িয়ে শীতকালের মিষ্টি রোদে মাখামাখি করে ওরা তিনজনে আরো কিছুক্ষন গল্প করে।
রিতিকা বিশেষ কথা না বললেও বারেবারে ওর চোখ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল রিশু আর ঝিনুককে। ট্যাক্সিতে ওঠার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত রিশুর পাশ ছাড়তে একদম ইচ্ছে করছিল না ঝিনুকের, এই মিষ্টি রোদে দাঁড়িয়ে গল্প করার মজাই আলাদা। trilogy love story
ট্যাক্সিতে ওঠার আগে রিতিকা রিশুর দিকে হাত বাড়িয়ে মৃদু হেসে বলে, “তোমার কার্ড পাওয়া যাবে?”
পার্স থেকে নিজের কার্ড বের করে রিতিকার হাতে দিয়ে ওকে বলে, “তোমরা সাবধানে যেও।”
বান্ধবীর কাঁধে হাত রেখে মিষ্টি হেসে উত্তর দেয় রিতিকা, “তোমার বৌকে সাবধানেই নিয়ে যাবো।”
লাজুক হেসে রিশুর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে মিষ্টি হেসে ঝিনুক ওকে বলে, “ঠিক সময়ে লাঞ্চ করে নিও আর আমি মেসেজ করব।”
ট্যাক্সি ছাড়তেই রিতিকা ঝিনুকের বাজুতে আলতো ধাক্কা দিয়ে ইয়ার্কি মেরে বলে, “ফাক বেব, কি হাত মেরেছিস মাইরি। সোজা এমসের অরথোপেডিক সার্জেন?”
মৃদু হাসে ঝিনুক, “দেখলি তো কত বিজি মানুষ, আবার নেক্সট মান্থে লন্ডন যাচ্ছে।”
আশ্চর্যচকিত রিতিকা ওকে জিজ্ঞস করে, “বাপরে, লন্ডন? তুইও যাচ্ছিস নাকি?”
ঝিনুক ম্লান হেসে উত্তর দেয়, “না রে আমি যাচ্ছি না, আমার পাসপোর্ট কোলকাতায় আছে এখানে আনা হয়নি। ওর একটা সেমিনার আছে সেইজন্য যাচ্ছে। ও খরচা হসপিটাল দিচ্ছে সো আমি যাচ্ছি না।”
রিতিকা ওকে চোখ টিপে প্রশ্ন করে, “হানিমুনে এখন গেলি না?” trilogy love story
ঝিনুক লাজুক হেসে উত্তর দেয়, “এই তো কোলকাতা থেকে দিল্লীতে এসেই আমাদের হানিমুন হচ্ছে।” একটু থেমে ওকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা এখানে কাছাকাছি কোথায় পার্লার আছে জানিস?”
রিতিকা প্রশ্ন করে, “কেন রে?”
মুচকি হেসে ঝিনুক ওকে উত্তর দেয়, “অনেক দিন গ্রুমিং করা হয়নি।”
রিতিকা হাসিতে ফেটে পরে, “যাহ্ তেরি, এতদিন তাহলে এনাকোন্ডা জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছিল নাকি?”
রিতিকার বাজুতে কিল মেরে লাজুক হেসে বলে, “ইউ আর আ বিচ, রিয়ালি। বল না পার্লার কোথায় আছে?”
রিতিকা একটু ভেবে বলে, “তোর এরিয়াতে খুঁজে দেখতে পারিস।” ফোনে গুগুলে খুঁজে দেখে ওকে দেখিয়ে বলে, “তোর বাড়ির কাছেই একটা পার্লার আছে, শপিং এর পরে না হয় যাওয়া যাবে?”
মুচকি হাসে ঝিনুক, “শপিং আজকে করতে হবে না, চল আগে পার্লার যাই তারপরে দেখা যাবে।”
ট্যাক্সি ঝিনুকের বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে অনুরোধ করে। হরিশের ব্যাপারে জানতে চাইলে রিতিকা জানায় যে ওদের মাঝে ছাড়াছাড়ি অনেকদিন আগে হয়ে গেছে। হরিশ ব্যাঙ্গালোরে একটা কোম্পানিতে চাকরি পায়, প্রথমে রিতিকাকে ব্যাঙ্গালোর যেতে বলেছিল হরিশ। ব্যাঙ্গালোরে দুইজনে লিভ-ইন রিলেশানে থাকত, কিছুদিনের মধ্যেই অন্য একটা চাকরি পায় রিতিকা, সেখানে ওর মাইনে হরিশের চেয়ে বেশি হয়ে যাওয়াতে হরিশের মনের মধ্যে হীনমন্যতা জাগে। trilogy love story
বাড়ির বেশির ভাগ খরচ খরচা ওকেই বহন করতে হত, মাঝে মাঝেই হরিশ মদ খেয়ে বাড়ি ফিরত, যদিও রিতিকাও মদ খায় তবে হরিশ প্রায় রোজদিন মাতাল হয়েই ঘরে ঢুকত। এই নিয়ে অনেকবার ওদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়, শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে, রিতিকা দিল্লীতে চাকরি নিয়ে চলে আসে। সব শুনে ঝিনুক আক্ষেপ করে বলে, মেয়েদের ব্যাথা খুব কম পুরুষ বুঝতে পারে। কথায় গল্পে ঝিনুক তার আগের রাতের ডিনার পার্টির গল্প করে।
সব শুনে রিতিকা ম্লান হেসে বলে, “সব মানুষ কি আর তোর মতন লাকি, এমন একটা ডাক্তার পেয়েছিস, নিজে ড্রিঙ্ক না করলেও তোর ড্রিঙ্ক করাতে ওর আপত্তি নেই।”
ওর কথা শুনে গর্বে ঝিনুকের বুক ফুলে যায়, ঠোঁটে দুষ্টুমি মাখানো হাসি দিয়ে বলে, “আমি লাকি কিনা জানিনা তবে আমারটা না ভীষণ শয়তান।” বলেই ঠোঁট চেপে হেসে ফেলে।
পার্লার ঢোকার আগে রিশুকে একটা মেসেজ করে দেয় ঝিনুক, পার্লার যাচ্ছি। উত্তর আসে সঙ্গে সঙ্গে, আজকে সত্যি মারবে নাকি? ঝিনুক উত্তর দেয়, একদম দুইজনে মিলে একসাথে মরব। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরো। রিশুর উত্তর আসে, ডেফিন্টলি হানি। হানি শব্দটা পড়ে ঝিনুকের মনময়ূরী নেচে ওঠে, একগাদা চুম্বনের ইমোজি পাঠিয়ে দেয়। trilogy love story
পার্লারে ঢুকে দুই বান্ধবী নিজেদের সাজিয়ে তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। চুলে নতুন করে রঙ করতে হবে, সেই সাথে কয়েক গোছা হাইলাইটিং করাতে হবে, আইব্রো ট্রিমিং, ওয়াক্সিং, ফেসিয়াল, থ্রেডিং পেডিকিওর ম্যানিকিওর ইত্যাদি সারতে সারতে প্রায় ঘন্টা চার পাঁচ লেগেই যাবে।
প্রসাধনি করার সময়ে দুই বান্ধবী গল্পে মেতে ওঠে, পুরানো দিনের কলেজের গল্প। পার্থের কথা জিজ্ঞেস করাতে সংক্ষেপে জানিয়ে দেয় ছেলেটার উদ্দেশ্য বিশেষ ভালো ছিল না তাই শেষ মুহূর্তে বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে। রিশুর পরিচয় দেয় ঝিনুক, ওর মায়ের প্রিয় বান্ধবীর বড় ছেলে তাই সেই বিয়ের দিনেই ওদের বিয়ে হয়ে যায়।
ঝিনুক বেড়িয়ে যাওয়ার পর থেকে রিশুর চোখের সামনে শুধু মাত্র রূপসী তন্বী ললনার ছবি ভেসে বেড়ায়। ওর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বারেবারে যখন নিজের চুলে হাত দিচ্ছিল তখন পাগল হয়ে গেছিল রিশু। পিচ ফলের মতন লালচে কোমল গালের লালিমা দেখে ভীষণ ইচ্ছে করছিল একটা চুমু খেতে। বারে বারে ডান হাত দিয়ে ডান কানের ওপরে চুল সরিয়ে যেন ওকে কানের লতিতে চুমু খেতে আহবান করছিল ওর প্রেয়সী। ফর্সা মসৃণ মরালী গর্দানের দর্শন পেয়ে ভীষণ ইচ্ছে করছিল ওর মসৃণ ত্বকের ওপরে জিবের ডগা দিয়ে লালার দাগ ফেলে দেয়। trilogy love story
নিজের চেম্বারের দিকে পা বাড়াতেই ওর অনেক সহকর্মী ডাক্তার বন্ধুরা ওকে ঘিরে ধরে। ব্রিজেশ ইতিমধ্যে ওদের ডিপার্টমেন্টের মধ্যে কথা ছড়িয়ে দিয়েছে, ডক্টর অম্বরিশ সান্যালের স্ত্রী কোন বড় ম্যাগাজিনের সেন্টারফোল্ড মডেলের মতন দেখতে। সেই কথা নিয়ে দুপুরে লাঞ্চের সময় খুব হাসাহাসি হয় ওদের বন্ধুদের মধ্যে। লাঞ্চের পরে বেশ কয়েকবার মেসেজেই কথাবার্তা হয় ঝিনুকের সাথে। তাতেই জানতে পারে বাড়ির কাছের কোন পার্লারে গেছে সাজতে, সেটা শুনে মনে মনে হেসে ফেলে রিশু, রাতে হৃদরোগে না আক্রন্ত হয়।
লাঞ্চের পরে ব্রিজেশকে বলে হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে পরে, বিয়ের পরে কোন উপহার কিনে দেওয়া হয়নি ওর রূপসী প্রেমিকাকে। হসপিটালের কাছেই একটা বড় মার্কেট, সেখানে অনেকগুলো বড় বড় গয়নার দোকান। চোখ বুজে প্রেয়সীর ফর্সা মরালী গর্দান একবার বুকের ভেতরে এঁকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত একটা মুক্তোর লকেট দেওয়া সোনার হার কেনে। আংটি কেনার ইচ্ছে ছিল, ভেবেছিল মুখের মধ্যে আংটি রেখে প্রেয়সীর নরম চাঁপার কলি আঙ্গুল মুখের মধ্যে নিয়ে পড়িয়ে দেবে, কিন্তু আংটির সঠিক মাপ না জানাতে হার কেনে। trilogy love story
অন্যদিকে ওর জন্য সাজতে ব্যাস্ত ওর মদালসা রূপসী স্ত্রী, যত দেখে তত যেন নতুন করেই ধরা দেয়, অবশ্য এই কয়দিনে ঠিক ভাবে দেখাই হয়নি ঝিনুকের দিকে। আগে সর্বদা শালোয়ার কামিজে দেখছে, বিয়ের দিন আর গতকাল ডিনারেই শাড়িতে দেখেছিল, কিন্তু যে পোশাকে ওর হসপিটালে দেখা দিয়েছে তাতে ভীষণ ভাবেই অবাক হয়ে গেছে। চোখ বুজলেই চোখের সামনে নীল ছেঁড়া জিন্স পরিহিত অসম্ভব সুন্দরী একজন নর্তকীকে দেখতে পায়।
জিনসের প্যান্ট ঝিনুকের কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত ওতপ্রোত ভাবে লেপটে গিয়ে দুই মোটা কদলি কান্ডের মতন জঙ্ঘার আকার অবয়াব অতি সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলে, পায়ে থাই হাই বুট জোড়া ভীষণ ভাবেই ঝিনুকের সাজের সাথে মিলে গেছে। পিচ ফলের মতন নরম মিষ্টি লালচে গালের দৃশ্য মনে পড়তেই ভীষণ ভাবেই প্রেয়সীকে চুম্বনে চুম্বনে অস্থির করতে ইচ্ছে হয়।
হার কিনে হসপিটাল পৌঁছে নিজের চেম্বারে বসে ঝিনুককে ফোন করে রিশু, “কি করছ?”
অন্যপাশ থেকে প্রেয়সীর মিষ্টি সুরেলা কন্ঠস্বর ভেসে আসে, “এই তো, ওয়াক্সিং করাচ্ছি। তুমি লাঞ্চ করেছ?”
রিশু একটু হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ অনেক আগে হয়ে গেছে।” ভীষণ ভাবেই দেখতে ইচ্ছে করছিল প্রেয়সীকে তাই ওকে বলে, “একটা সেলফি পাঠাও না প্লিজ?” trilogy love story
খিলখিল করে হেসে ফেলে ঝিনুক, গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলে, “ধ্যাত শয়তান, তোমার কোলেই তো ফিরে যাবো।”
“ধ্যাত শয়তান” বলে প্রেয়সীর খিলখিল হাসির কলতান রিশুর বুকের মধ্যে বিঁধে যায়, “তুমি না মহা দুষ্টু মেয়ে।”
মুচকি হাসি দিয়ে ঝিনুক উত্তর দেয়, “এতদিন পরে জানলে?”
হেসে ফেলে রিশু, “না না, তোমাকে দেখার আগেই জেনেছি।”
ক্ষনিকের জন্য মুখের ভাব বদলে যায় ঝিনুকের সঙ্গে সঙ্গে রিশুকে প্রশ্ন করে, “কি এমন জেনেছ শুনি?”
কথাটা ঠিক হয়নি বুঝতে পেরেই রিশু হেসে বলে, “তুমি না, সব কিছুতেই উল্টো মানে খুঁজতে যাও। আই ওয়াজ জাস্ট জোকিং।”
ফোনের মধ্যেই রিশুর উদ্দেশ্যে একটা চুমু ছুঁড়ে দিয়ে বলে ঝিনুক, “কখন বাড়ি ফিরবে?”
ওর কথা শুনে রিশু হেসে ফেলে, “তুমি এখন সাজতে ব্যাস্ত তারপর আবার রিতিকার সাথে শপিং করবে। আমি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে কি করব? আমিও একটু কাজ সেরে তবেই বাড়ি ফিরব।”
ঝিনুক উত্তর দেয়, “না না আজকে আর শপিং করতে যাবো না। এই পার্লার থেকে সোজা বাড়িতেই ফিরব।”
মাথা নাড়ায় রিশু, “না না সেটা নয়। তোমার বান্ধবীর সাথে ঠিক ভাবে পরিচয় হল না, একদিন ডিনারে ইনভাইট কর ওকে।” trilogy love story
ঝিনুক মুচকি হাসি দিয়ে বলে, “সকালে বললে ওর ওপরে বিশ্বাস নেই আবার এখন বলছ ডিনারে ইনভাইট করতে, কি ব্যাপার ডক্টর, দুইদিনেই কি আমি পুরানো হয়ে গেলাম নাকি?”
প্রেয়সীর কথা শুনে হাসিতে ফেটে পরে রিশু, “তুমি না…”
ঝিনুক ও হেসে উত্তর দেয়, “খুব দুষ্টু তাই না…”
হাসি শুনে বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে, প্রেয়সীকে হেসে উত্তর দেয় রিশু, “খেয়ে ফেলব কিন্তু।”
কথাটা শুনে হৃদয় ভীষণ ভাবেই চঞ্চল হয়ে ওঠে ঝিনুকের, ভীষণ একটা দুষ্টুমিতে পেয়ে বসে রূপসী ললনাকে, “কামড়ে না কেটে?”
রিশু ফিসফিস করে উত্তর দেয়, “একেবারে দুই হাতে চটকে।”
কথাটা শুনে ঝিনুকের সারা শরীরের সকল রোমকূপ একত্রে উন্মিলিত হয়ে ওঠে, “এই শয়তান, তোমার ওই ডিপ ভয়েস শুনলে আমার বুকের ভেতরে কিছু একটা হয়, চুপ কর প্লিজ।”
এইভাবে ফোনে কারুর সাথে কোনদিন কথা বলেনি, কিন্তু নিজের স্ত্রীর সাথেই এইভাবে পরকীয়া প্রেম করাতে ওর শরীরের রক্ত ভীষণ ভাবেই টগবগ করে ফুটতে শুরু করে দেয়, “আচ্ছা বাবা, তবে আজকে কিন্তু সত্যি বলছি…” trilogy love story
মিলনের ইচ্ছায় উন্মাদিনী প্রেমিকার হৃদয় ডাক ছেড়ে ওঠে, রিতিকার কান বাঁচিয়ে যথাসম্ভব গলা নামিয়ে বলে, “তোমার জন্যেই তো পার্লার এসেছি।”
বুকের বাঁ দিকে কিল মারে রিশু, “ইউ আর ইরেসিস্টেবেল, তোমার পার্লার না গেলেও চলত।”
ভালোবাসার মানুষের মুখে রূপের প্রশংসা শুনে বুক ভরে ওঠে ঝিনুকের, ওকে প্রশ্ন করে, “ধ্যাত তুমি ও না। আচ্ছা শোনও না, চুলে কি কালার করাব? ডার্ক ব্রাউন না রেডিস ব্রাউন?”
হেসে ফেলে রিশু, “যাঃ বাবা, তোমার চুল তুমি কি রঙ করাবে তুমি জানো।”
আদুরে কন্ঠে ঝিনুক ঝামটা দিয়ে ওঠে, “ধ্যাত, তুমি না, এই প্লিজ বলো না কি কালার করাবও?”
রিশু মুচকি হেসে উত্তর দেয়, “আচ্ছা তোমাকে যদি জিজ্ঞেস করি যে হুমেরাসে কম্পাউন্ড ফ্রাকচার হয়েছে…”
সঙ্গে সঙ্গে ঝিনুক ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “হ্যাঁ হ্যাঁ হয়েছে, কেন মরতে তোমাকে জিজ্ঞেস করতে গেছিলাম কে জানে।” গলা যথাসম্ভব নামিয়ে এনে ভীষণ লজ্জা মাখানো কন্ঠে রিশুকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা আরো একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল।”
রিশু ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি?” trilogy love story
ঝিনুকের গাল কান লাল হয়ে তপ্ত হয়ে ওঠে তাও লজ্জার মাথা খেয়ে শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেই ফেলে, “পুরো ক্লিন না বাটারফ্লাই না স্ট্রিপ?”
কথাটার অর্থ কিছুই বোধগম্য হয় না রিশুর তাই আবার ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি এইগুলো?”
ঝিনুক ভীষণ লজ্জা পেয়ে উত্তর দেয়, “থাক কিছু না সরি।”
পুরো পাগলি মেয়ে, মাথা ঝাঁকিয়ে রিশু ওকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা এত যে সাজ সাজছ, টাকা কোথায় পেলে?”
মুচকি হেসে ঝিনুক উত্তর দেয়, “আছে আমার কাছে।”
রিশু ওকে প্রশ্ন করে, “আছে মানে? আমার কাছ থেকে টাকা নিতে দোষ?”
হেসে ফেলে ওর প্রেয়সী, “আচ্ছা দাও তাহলে, ছয় হাজারের মতন খরচ হবে দুইজন মিলিয়ে বারো।”
রিশু উত্তরে বলে, “আচ্ছা দিয়ে দেবো। তবে বেশি দেরি কর না। কিন্তু বারো হাজার কেন?”
গলা নামিয়ে ঝিনুক উত্তর দেয়, “রিতিকার একটু মুখ ফুলে গেছে, শপিং এর জন্য লিভ নিয়েছিল কিন্তু তোমার সাথে হসপিটালে দেখা করলাম সেখানে বেশ টাইম চলে গেল তারপরে বললাম যে পার্লার যাবো তাতে অনেক টাইম যাবে তাই ভাবলাম ওর পার্লারের খরচ দিয়ে দেই না হলে মুখ ফুলিয়ে থাকবে।” trilogy love story
হেসে ফেলে রিশু, “ওকে বুঝলাম, তাও যদি তোমার ইচ্ছে হয় তাহলে শপিং এ যেতে পারো।”
মাথা দোলায় ঝিনুক, “না না, এখান থেকে সোজা বাড়ি তারপরে তুমি আর আমি…”
সন্ধ্যের পরে বাড়িতে কি হবে সেটা ভেবেই রিশুর হৃদয়ে এক অদ্ভুত হিল্লোল দেখা দেয়, “তাড়াতাড়ি এসো তাহলে।”
ঝিনুক ফোনের মধ্যে থেকেই মিষ্টি ছোট্ট একটা চুমু ছুঁড়ে দেয় রিশুর দিকে, “মুহআআয়া… ওকে বেবি।”
চুম্বনের আওয়াজে ওর মস্তিকের সকল স্নায়ু উন্মাদ ঘোড়ার মতন ভীষণ ভাবেই লাফালাফি দাপাদাপি শুরু করে দেয়, “আমি হসপিটালে আছি ডারলিং, এমন করলে আমি মারা পড়ব।”
ঝিনুক ও কম যায়না, খিলখিল করে হেসে উত্তর দেয় দয়িতকে, “হু স্টারটেড বেবি?”
হেসে ফেলে রিশু তারপরে একটু থেমে ওকে বলে, “আচ্ছা, আমি মাকে ফোন করেছিলাম, আমি লন্ডন যাচ্ছি সেটা জানালাম। মাকে বললাম যদি পারে তো দিয়াকে সেই সময়ে হয়ত পাঠিয়ে দেবে এখানে।”
কথাটা শুনে ঝিনুক হেসে ফেলে, “সকালেই তোমার বেড়িয়ে যাওয়ার পরেই আমার সাথে ঝিলিক আর দিয়ার কথা হয়ে গেছে। তবে এখন মামনিকে ফোন করা হয়নি। ওরা কিন্তু এখানে আসার জন্য এক পায়ে খাড়া।” trilogy love story
মাথা নাড়িয়ে হেসে ফেলে রিশু, ওর মনের কথা গুলো মনে হয় ওর প্রেয়সী আগে থেকেই বুঝে যায়, “তাহলে টিকিট কেটে ফেলবো কি?”
একটু ভেবে ঝিনুক ওকে বলে, “তুমি যা ভালো বোঝ সেটাই কর। একটু তাড়াতাড়ি ফিরতে চেষ্টা করো। আচ্ছা শোন আমি এখন ফেসিয়াল করব এখন রাখছি, মুয়াআহহহহহ।” বলে ফোনের মধ্যে ছোট একটা চুমু খেয়ে ফোন রেখে দেয় ওর প্রেয়সী।
ওপিডি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ওয়ার্ডে রাউন্ড দেওয়া হয়ে গেছে, ইন্টার্ন ডাক্তারদের রোগীর ব্যাপারে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ক্যান্টিনে বসে কফি খাচ্ছিল রিশু। ঝিনুককে একবার ফোন অবশ্য করেছিল, ওর প্রসাধনি তখন শেষ হয়নি, কি কি নাম বলল সেই সব বাকি, আন্ডারআর্মস থ্রেডিং কি সব বলল যার একটারও অর্থ ওর বোধগম্য হয়নি।
তাও ফোন হাতে নিয়ে নরাচড়া করতে করতে মনে মনে হেসে ফেলে। এরপর প্রেয়সী ধ্যাতানি দেবে, তর সইছে না নাকি? ঠিক তখন, মোবাইলে একটা অচেনা নাম্বারের ফোন আসে। সারাদিনে প্রচুর এমন অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে ওর কাছে, কখন কোন ক্রেডিট কার্ড, কখন কোন মেডিকেল রিপ্রেসেন্টটেটিভ ইত্যাদি। trilogy love story
ফোন উঠিয়ে চিরাচরিত ভাবেই ইংরেজিতে প্রশ্ন করে, “আপনি কে বলছেন?”
ওপাশ থেকে পরিষ্কার ইংরেজিতে ভেসে আসে এক মহিলার সুরেলা কন্ঠ, “হাউ আর ইউ ডুইং, ডক্টর সান্যাল?”
কন্ঠস্বর ভীষণ চেনা চেনা মনে হয় রিশুর, হটাত করেই শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে ওর, তাও সংশয় দুর করার জন্য প্রশ্ন করে, “হু আর ইউ?”
সেই কন্ঠস্বর একটু হেসে উত্তর দেয়, “ভুলে গেলে আমাকে? এবারে আমি কিন্তু আর তোমাকে ফোন করে ডিস্টার্ব করিনি। আমি জানি তুমি খুব বিজি, তাই তোমার ডিউটি শেষ হওয়ার অপেক্ষা করেছি।”
কিছুক্ষন চুপ করে চোখ বুজে চাপা সংশয় আয়ত্তে আনে রিশু, ঠান্ডা গলায় চন্দ্রিকাকে জিজ্ঞেস করে, “এতদিন পরে?”
ম্লান হাসে চন্দ্রিকা, “এমনি জাস্ট। পারকিঙ্গে তোমার বাইকের কাছেই আমি দাঁড়িয়ে আছি।”
কথাটা শুনে চোয়াল কঠিন হয়ে যায় রিশুর, কফি খেতে আর ইচ্ছে করল না ওর। এপ্রন, স্টেথো ল্যাপটপ ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে আরো একবার ঝিনুকের জন্য কেনা হারের বাক্সটা দেখে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ার আগে প্রশ্ন করে, “কিছু কাজ ছিল কি?” trilogy love story
চন্দ্রিকা ঠান্ডা গলায় উত্তর দেয়, “কাজ না থাকলে কি দেখা করা যায় না?”
বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মাথা দোলায় রিশু, “না ঠিক তা নয়, কিন্তু এতদিন পরে ফোন করলে তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
ভীষণ একটা অস্বস্তিবোধ নিয়েই পারকিঙ্গের দিকে পা বাড়ায়। ভুলতে চেয়েছিল, ভুলে গেছিল চন্দ্রিকাকে, বারে বারে চঞ্চলা হরিণীর চুম্বন মনে পরে যায়, কানের মধ্যে বেজে ওঠে, “মুয়াআহহহহ…” পারকিঙ্গে পৌঁছে চন্দ্রিকাকে দেখতে পেয়ে ধির পায়ে নিজের বাইকের দিকে এগিয়ে যায়।
চন্দ্রিকার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে রিশু, ওর চোখে মুখে একটু হাসি একটু সংশয়। আগের থেকে একটু গোলগাল হয়ে গেছে, শেষ দেখা ছয় বছর আগে রিশুর এমএস পড়ার আগেই চন্দ্রিকা ওকে ছেড়ে চলে গেছিল। ওকে দেখতে পেয়ে ম্লান হাসি দিয়ে চন্দ্রিকা ওর দিকে এগিয়ে আসে।
মৃদু হাসি দিয়ে রিশু ওকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কেমন আছো?”
ম্লান হাসি নিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বড় বড় কাজল কালো চোখ মেলে ওর দিকে তাকিয়ে বলে, “চলছে কোন রকমে। তুমি তোমার কথা বল।”
উত্তর দেয় রিশু, “আমি বেশ ভালোই আছি।” বুক ভরে শ্বাস নিয়ে চন্দ্রিকার চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “তোমার হাজবেন্ড কেমন আছে?” trilogy love story
বুকের ওপরে দুই হাত ভাঁজ করে রিশুর দিকে এক পা এগিয়ে আসে চন্দ্রিকা, ওর দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে বেদনা ভরা কন্ঠে বলে, “আই এম সরি রিশু। তোমায় সত্যি ভুল বুঝেছিলাম, পরে অনেক ভেবেছি কিন্তু তোমার সামনে আর আসার সাহস হয়নি।” বুক ভরে শ্বাস নিয়ে একটু থেমে ওকে বলে, “বিজয়ের সাথে আই মিন আমার হাজবেন্ডের সাথে তিন মাস আগে সেপারেশান হয়ে গেছে।
আমি দিল্লীতে ফিরে এসেছি।” রিশুর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ওর হাতের ওপরে হাত রেখে ধরা গলায় বলে, “আমি এম সরি রিশু। আমরা কি আর…” ঠিক তখুনি রিশুর ফোন বেজে ওঠে।
হাতের ওপরে চন্দ্রিকার কোমল হাতের ছোঁয়া পেতেই রিশুর চোয়াল কঠিন হয়ে ওঠে, চন্দ্রিকার শেষ বাক্য শুনে ক্ষনিকের জন্য মাথায় রক্ত চড়ে যায়। ঠিক তখুনি ওর পকেটে রাখা ফোনটা আবার বেজে উঠতেই রিশু নিজের হাত ছাড়িয়ে ফোন বের করে দেখে ঝিনুকের মিষ্টি মুখ ভেসে উঠেছে মোবাইল স্ক্রিনে।
ফোনের স্ক্রিন চন্দ্রিকাকে দেখিয়ে বলে, “আমার মিসেসের ফোন।”
তৎক্ষণাৎ চন্দ্রিকার দুই চোখ ছলকে ওঠে, কাঁপা কন্ঠে ওকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি বিয়ে করেছ?”
ওর প্রশ্নে ছোট্ট উত্তর দেয় রিশু, “হ্যাঁ।” তারপরে চন্দ্রিকার দিকে তর্জনী উঠিয়ে চুপ করতে অনুরোধ করে ফোন তুলে বলে, “কি ব্যাপার কোথায় আছো?”
অন্যপাশে প্রেয়সীর মদির কন্ঠ, “বেড়িয়েছ কি?” trilogy love story
চন্দ্রিকার চোখে চোখ রেখে ফোনে ঝিনুককে উত্তর দেয়, “এই জাস্ট বাইকে উঠব।” কথাটা শুনে চন্দ্রিকার ঠোঁট জোড়া মৃদু কেঁপে ওঠে।
অন্যপাশে উচ্ছল চঞ্চল ঝিনুক মধুর কন্ঠে ওকে প্রশ্ন করে, “এই শোন না, তুমি ফিস ফ্রাই খাবে নাকি ডিমের ডেভিল?”
অবাক হয়ে রিশু প্রশ্ন করে, “তোমার সাজ গোজ শেষ? তুমি এইসব কোথায় পেলে?”
হেসে ফেলে ওর প্রেয়সী, “হ্যাঁ আমার পার্লারের কাজ শেষ, আমি আর রিতিকা এখন মার্কেট ওয়ানে আছি। বেড়িয়ে যখন পড়েছ তখন তুমিও চলে এখানেই চলে এসো।”
চন্দ্রিকা রিশুর সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়। রিশু বাইকের বসে উত্তর দেয়, “জো হুকুম, আমি এই আসছি।” বলে ফোন রেখে দেয়।
বাইকে উঠে কিক মেরে স্টার্ট করে চন্দ্রিকার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে বলে, “বিশ্বাস করে তখন তোমাকে অনেক কিছু বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি সেদিন আমার কোন কথায় কান দাওনি।” একটু থেমে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে চন্দ্রিকাকে বলে, “আজ ছয় বছর পরে তোমার সেপারেশানের পরে আমাকে মনে পড়েছে? আমি আর সেই রিশু নেই, মিসেস চন্দ্রিকা।” শেষের শব্দটা জোরেই বলে রিশু। trilogy love story
কথাটা শুনে চন্দ্রিকার বুক ভেঙ্গে যায় তাও বুকে জোর এনে ওকে বলে, “তুমিও তোমার অহং বোধ ধরে ছিলে। চাইলে তুমিও আমাকে একবার বুঝাতে আসতে পারতে। কিন্তু তুমি সেটা করনি ডক্টর অম্বরীশ। একবার আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখতে, যে অবস্থায় তুমি ছিলে…”
চন্দ্রিকার দিকে তর্জনী উঠিয়ে চুপ করিয়ে কঠিন চোয়াল নিয়ে গুরু গম্ভির কন্ঠে ওকে বলে রিশু, “শালিনী আমার বোন মিসেস চন্দ্রিকা, একটা ভাই আর বোনের সম্পর্ক তুমি এত নিচ চোখে দেখতে পারো সেটা ধারনার বাইরে। তুমি চোখ খুলেও সেটা বিশ্বাস করতে পারনি। জানো, আমার স্ত্রী, ঝিনুক, বিয়ের আগে পর্যন্ত আমাদের কথাও হয়নি, দেখা তো অনেক দুরের কথা। কিন্তু সে চোখ বন্ধ করে আমাকে বিশ্বাস করে আমার সাথে পা বাড়িয়েছে।”
বাইকের এক্সিলারেটরে মোচড় দিয়ে একটু জোরে আওয়াজ করে ওকে বলে, “আস্থা ভরসা বিশ্বাস। অনেক সময়ে আমরা যা দেখি সেটা সত্য হয় না চন্দ্রিকা। দিনের বেলা আমাদের চারপাশে সূর্যের রশ্মি থাকে, আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে পারবে সেই সূর্যের রশ্মি? না দেখাতে পারবে না, কিন্তু আছে আমাদের চারপাশে। আমি মন থেকে বলছি, আমি চাই তুমি ভালো থাকো, সুখে থাকো, তোমার জীবনে কেউ আসুক। তবে আজকের পরে আর কোনদিন আমাকে কল কর না।” trilogy love story
চোখ জোড়া ভীষণ ভাবেই জ্বালা করে চন্দ্রিকার, শেষ মুহূর্তে হাত বাড়িয়ে কিছু একটা পেতে গিয়েও যেন পেলোনা। চন্দ্রিকার উত্তরের অপেক্ষা না করে বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পরে রিশু। ওর রূপসী মদালসা প্রেমিকা ঝিনুক অনেকদিন পরে নিজের খোলস থেকে বেড়িয়েছে, সেই মিষ্টি মধুর হাসি আর বাড়ানো দুই হাতের আহবানে ধরা দিতে ছুটে যায়। পেছনে ফাঁকা বাইক পারকিঙ্গের জায়গায় শুন্য হৃদয় নিয়ে চন্দ্রিকা রাতের অন্ধকারে একাকী দাঁড়িয়ে।