porokia romance শেষের পাতায় শুরু – 30 by Pinuram

bangla porokia romance choti. নতুন দিনের আগমন কিন্তু ভীষণ মলিন দিনের আগমন। নতুন দিন নাকি নতুন সূর্য নতুন দিগন্ত মেলে দাঁড়ায়, কিন্তু এই মলিন দিন ওদের জীবনের এক বিভীষিকা ময় দিনের করুন সুর বাজিয়ে দিয়েছে। ওয়েব চেক ইন করেই দিয়েছিল রিশু, তাই ওদের সিট নিয়ে কোন ঝামেলা হয়নি। এক সারির তিনটে পাশাপাশি সিট ছিল ওদের। ঝিনুকের পা যেন আর চলছিল না একদম। সিকিউরিটি চেক পর্যন্ত তিন মেয়ের মুখে কোন কথা ছিল না।

ঝিলিক আর দিয়ার মধ্যে তাও একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস, কারণ রিশু আসল ঘটনার কিছুই জানায়নি দিয়ার মাকে। কিন্তু ঝিনুক কিছুতেই নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিল না যে বিয়ের পরে প্রথমবার বাড়ি একা একা এই দুরাবস্থা নিয়ে ফিরবে। কার কাছে কি মুখ দেখাবে ঝিনুক? ফিরে কোথায় যাবে? সল্টলেকে নিজের বাড়িতে নাকি ঢাকুরিয়ায় রিশুর বাড়িতে?

মা বাবা যদি কোন রকমে এই কথা কোনদিন জানতে পারে তাহলে ওর বিষ খাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আর কি মুখ নিয়ে মামনির সামনে দাঁড়াবে ঝিনুক? যে ভাবে ঝাঁঝিয়ে রিশুর মুখের ওপরে মামনির নামে ওই বাক্য উচ্চারন করেছে তারপরে কোন মুখে দাঁড়াবে? ঠান্ডায় নয়, এক অজানা আশঙ্কায় ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়।

porokia romance

সিকিউরিটি চেকের পরে ফ্লাইটের ওয়েটিং এরিয়ার দিকে হাঁটতে হাঁটতে দিয়া আর ঝিলিককে জিজ্ঞেস করে ঝিনুক, “তোরা কি কিছু খাবি?”

এতক্ষন পরে দিদির গলার আওয়াজ পেয়ে ফিরে তাকায় ঝিলিক, মাথা নাড়ায় না, একটু চুপ করে থেকে ওকে বলে, “তুই সেই গতকাল বিকেল থেকে কিছুই খাস নি, তুই কিছু খা।”

দিয়া ঝিনুকের বাজু ধরে মৃদু নাড়িয়ে বলে, “তুমি কিছু খাও না হলে শরীর খারাপ করে যাবে।”

দিয়ার গালে হাত রেখে কেঁপে ওঠে ঝিনুকের ঠোঁট, “আমি শেষ, আমার খাওয়া না খাওয়া এক ব্যাপার।”

এই কথার জবাব ওই দুই সপ্তদশী তরুণীর কাছে নেই।

ঠিক তখনি ঝিনুকের মায়ের ফোন আসে ঝিনুকের কাছে। ওর হাত কেঁপে ওঠে ঠোঁট জোড়া কেঁপে ওঠে, বুক ভরে শ্বাস নিয়ে দিয়া আর বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে ফোন উঠায়, “হ্যালো।” porokia romance

পিয়ালী মেয়েকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে রে? তোরা নাকি ফিরে আসছিস?”

দিয়া ইশারায় ওকে বলে, ওর দাদা গাড়িতে বসে ওর মাকে যে কথা বলেছিল সেই কথাই বলতে। ঝিনুক ছোট উত্তর দেয়, “হ্যাঁ আমরা তিনজনেই ফিরছি। কিন্তু তোমাকে কে বলল?”

পিয়ালী উত্তর দেয়, “এই মাত্র আম্বালিকা আমাকে ফোন করল। হটাত করে কি হয়েছে?”

ঝিনুক একটু চুপ করে থেকে উত্তর দেয়, “বাড়ি এসে সব বলব।” বলে ফোন কেটে দেয়।

বেশ কিছু পরে, ওরা প্লেনে উঠে বসে পরে। দিয়া দাদাভাইকে একটা মেসেজ করে জানিয়ে দেয়, যে ওরা প্লেনে বসে গেছে। দাদাভাইয়ের ছোট একটা উত্তর আসে, পৌঁছে ফোন করিস।

প্লেনটা দিল্লীর মাটি ছাড়তেই বুক কেঁপে ওঠে ঝিনুকের, এই বুকে কি আর ফিরে আসতে পারবে এই জীবনে? জানা নেই ওর। চোখ বুজে সিটের ওপরে মাথা পেছন করে হেলিয়ে দেয় ঝিনুক। porokia romance

ঝিনুক কাঁচের দরজার ওপাশের ভিড়ে হারিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত স্থাণুবৎ সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল রিশু। দুর থেকেও সেই ভিড়ের মধ্যে তুঁতে রঙের সালোয়ার কামিজ পরিহিত মেয়েটাকে খুঁজে বেড়ায় ওর তৃষ্ণার্ত নয়ন। হাতে ফোন নিয়ে বেশ কিছুক্ষন নড়াচড়া করতে করতে ট্যাক্সি স্টান্ডের দিকে হাঁটা লাগায়। দিনটা রবিবার, ভেবেছিল সবাই কে নিয়ে শপিং করতে যাবে, কিন্তু বিধি সেই সুখ ওর কপালে লিখে যায়নি। মাকে ফোন করে ছোট ভাবেই জানিয়ে দেয় ওদের প্লেন ছাড়ার কথা। ক্যাবে চেপে শুন্য বাড়িতে ফিরতে ভীষণ কষ্ট হয় রিশুর।

বাড়িতে পা রাখতেই ফাঁকা বাড়ি ওকে চেপে ধরে। জানালা দরজায় ঝিনুকের কেনা ঝিনুকের পছন্দের পর্দা ঝুলানো, নতুন কেনা সোফার কভার। খাওয়ার টেবিলে সাজানো একটা চামচের স্টান্ড সেটাও ঝিনুকের পছন্দের। শোয়ার ঘরে ঢুকে আলমারি খুলতেই নীলচে রঙের শালটা ওর হাতের ওপরে পরে যায়। রোজ দিন বাজারে যাওয়ার সময়ে এই শালটাকে ঝিনুকের গলায় জড়িয়ে দিত রিশু। শালটা নাকের ওপরে চেপে ধরে, এখন ওর ভালোবাসার গন্ধ রয়েছে, মুছে যায়নি। বুকের ভেতরে মিশ্র অনুভূতি জাগ্রত হয়। porokia romance

ওর অর্ধেক শরীর ভীষণ ভাবেই ঝিনুককে দুই হাত বাড়িয়ে ধরতে চাইছে। বাকি অর্ধেক বিতৃষ্ণায় ধিক্কার জানায় সেই মেয়েকে যে মেয়েটা ওর মাকে অপমান করেছে। কাজের মেয়ে রোজি এসে কাজ করে রান্না সেরে চলে যায়, ওর প্রচুর প্রশ্ন দিদি হটাত করে কেন চলে গেল। রিশু মৃদু বকুনি দেয়, কাজ সারো। কারুর সাথে তখন কথা বলার ইচ্ছে ছিল না ওর।

প্লেন কোলকাতার মাটি ছুঁতেই এক শূন্যতা ভর করে আসে ঝিনুকের বুকের মধ্যে। সুটকেস নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বেরনোর সময়ে দিয়া বাড়িতে আর দাদাকে ফোনে জানিয়ে দেয় ওদের পৌঁছে যাওয়ার কথা। দাদাভাইয়ের গলা নিরুত্তাপ, এক রাতেই গলা বসে গেছে। দাদাভাইয়ের এত হিমশীতল কন্ঠস্বর এর আগে কোনদিন শোনেনি দিয়া। দুই বোনকে নিয়ে এয়ারপোরট ছেড়ে বেড়িয়ে এসে দেখে দিয়ার গাড়ির ড্রাইভার, সন্তোষ ওদের জন্য অপেক্ষা করছে।

সন্তোষ ওদের হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে গাড়িতে রেখে দেয়। তিনজনে গাড়িতে উঠে পরে। সন্তোষ জিজ্ঞেস করাতে ঝিনুক বলে সল্টলেকে ওদের বাড়িতে আগে যেতে তারপরে ঢাকুরিয়া যেতে। পেছনের সিটের এক কোনায় ঝিনুক আর অন্য কোনায় দিয়া, ঝিলিক সামনের সিটে বসে। গাড়ি সল্টলেকে ঢুকে ওদের বাড়ির সামনে থামে। সন্তোষ নেমে ঝিলিকের ব্যাগ বের করে দেয়। porokia romance

ঝিলিক মাথা উঠিয়ে দুই তলার ওদের ফ্লাটের বারান্দায় দেখে ওর মা দাঁড়িয়ে আছে। ঝিনুক তখন গাড়ির মধ্যে চুপচাপ বসে, মুখের সামনে ডান হাত মুঠো করে কোন এক অজানা জগতে হারিয়ে গেছে।

দিয়া ঝিনুকের হাত ধরে আলতো চাপ দিয়ে নরম গলায় বলে, “ঝিনুকদি বাড়ি এসে গেছে।”

কোথায় যাবে, কি করবে এই সব খেয়ালেই হারিয়ে গেছিল ঝিনুক। দিয়ার হাতের স্পর্শে সম্বিত ফিরে পেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দেখে। সত্যি গাড়িটা ওদের ফ্লাটের সামনে দাঁড়িয়ে। ঝিলিক ওর দিকের দরজার পাশে সুটকেস হাতে দাঁড়িয়ে। সন্তোষ ড্রাইভার সিটে বসে পরে অপেক্ষা করছে।

ঝিনুক ওর দরজার কাঁচ নামিয়ে বোনের দিকে দেখে বলে, “তুই বাড়ি যা। দেখি বিকেলের দিকে আমি আসতে পারি।” বলে ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে বলে দেয়।

গাড়ি ছেড়ে দিতেই ঝিনুকের মায়ের ফোন আসে ওর কাছে, “কি রে বাড়ি এলি না?”

বুক ভরে শ্বাস নিয়ে, চোখের কোল মুছে উত্তর দেয় ঝিনুক, “না গো ভীষণ টায়ার্ড লাগছে। বাড়ি গিয়ে তোমাকে ফোন করছি।” porokia romance

রবিবার সকালের রাস্তায় যানজট কম ছিল। সল্টলেক থেকে ঢাকুরিয়া দিয়ার বাড়িতে পৌঁছাতে গাড়ি বেশি সময় নেয় না। সারাটা রাস্তা সিটের একপাশে দিয়া চুপ অন্যপাশে ঝিনুক চুপ করে বসে। গাড়ি দিয়ার বাড়ির সামনে দাঁড়াতেই দিয়া ঝিনুকের হাতে আবার আলতো চাপ দিয়ে ওর সম্বিত ফিরিয়ে আনে। সারা রাত ঘুম হয়নি, প্লেনেও ঘুমাতে একটু চেষ্টা করেছিল কিন্তু চোখ বুজলেও নিদ্রা ওকে ছেড়ে বহুদুর চলে গেছে।

শুন্য নয়নে দিয়ার দিকে একবার দেখে চোখের কোল মোছে ঝিনুক। দিয়া আর ঝিনুক গাড়ি থেকে নেমে দেখে দরজার সামনে দীপ দাঁড়িয়ে আর ওপরের বারান্দায় ওদের অপেক্ষায় রিশুর মা আর পাপা দাঁড়িয়ে। ঝিনুক ওপরের দিকে একবার দেখে দিয়ার দিকে তাকায়।

দিয়া ওর পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে হাতেও ওপরে আলতো চাপ দিয়ে বলে, “চলো, সব ঠিক হয়ে যাবে।”

মেয়েটা সত্যি অনেক বোঝে, হয়ত মামনির শিক্ষাদীক্ষার ফল। বাড়ির মধ্যে পা রাখতেই দীপ দিয়ার হাত থেকে সুটকেস নিয়ে নেয়। সিঁড়ি বেয়ে উপরে চড়ে বসার ঘরে ঢুকে সব থেকে আগে দিয়ার বাবার পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করে ঝিনুক। তারপরে রিশুর মায়ের দিকে অপরাধীর মতন তাকিয়ে থাকে। porokia romance

আম্বালিকা ভুরু কুঁচকে ওর দিকে এগিয়ে এসে ওকে জিজ্ঞেস করে, “তোকে অমন কেন দেখাচ্ছে? ফ্লাইটে ঘুমাসনি?”
মামনির গলা পেয়ে, মামনিকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে ঝিনুক। কাঁধের ওপরে মাথা গুঁজে চুপ করে থাকে। আম্বালিকা নরম হাত ওর মাথার ওপরে বুলিয়ে শান্ত করে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে রে, মা?”

“মা” ডাক ঝিনুকের কানে যেতেই ওর বুকের ভেতরে আটকে থাকা বন্যা দুই চোখের বাঁধ ভেঙ্গে বেড়িয়ে পরে। ধিরে ধিরে ঝিনুকের পিঠ ফুলে ওঠে। আম্বালিকা টের পায় ওর কাঁধ ঝিনুকের চোখের জলে ভিজতে শুরু করেছে। দিয়াকে প্রশ্ন করাতে কোন সঠিক উত্তর পায় না। আম্বালিকার বুঝতে বিন্দু মাত্র কষ্ট হয়না যে আসলে দিয়া অথবা ঝিলিকের কিছুই হয়নি, যা হয়েছে এই দুইজনের মধ্যেই কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু এই একটু আগেই রিশুকে ফোন করেছিল, কিছুই তো বলল না ছেলেটা। ওইদিকে দিয়াও কোন কথা বলছে না।

অনেকক্ষণ পরে মামনির কাঁধ থেকে মাথা উঠিয়ে ধরা গলায় মৃদু হেসে বলে, “তোমায় অনেকদিন দেখিনি তাই।”

আম্বালিকা বড় বৌমার থুঁতনি ধরে আদর করে বলে, “এই তো এসে গেছিস। তাই বলে কাঁদতে আছে নাকি রে বোকা মেয়ে।”

এতক্ষন পর ঝিনুক যেন ধড়ে প্রান ফিরে পেল। ডান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে মৃদু হেসে বলে, “খুব খিধে পেয়েছে, মামনি।”

আম্বালিকার সাথে সাথে দিয়াও হেসে ফেলে ঝিনুকের কথা শুনে। আম্বালিকা ওকে জিজ্ঞেস করে, “গলদা চিংড়ির মালাইকারি খাবি?”

বাচ্চা মেয়ের মতন মাথা দোলায় ঝিনুক, “তুমি যা দেবে তাই খাবো।” porokia romance

ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “আচ্ছা যা, স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে নে। আমি সন্তোষকে বাজার পাঠিয়ে এক কিলো চিংড়ি আনাই।”

রিশুর ঘরের মধ্যে ঢুকে বুক ভরে শ্বাস নেয় ঝিনুক। বুকের ব্যাথাটা অনেক কমে গেছে। বাথরুমে ঢুকতে যাবে তখন নিজের ভীষণ হাসি পায়, রাগের মাথায় হাতের কাছে যা পেয়েছিল তাই ল্যাপটপের ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছিল। বেশ কয়েকটা ব্রা পান্টি টুথব্রাশ চিরুনি আর ছোট একটা সিঁদুরের কৌটো, সেটা শেষ মুহূর্তে আনতে ভোলেনি। আলমারি খুলে রিশুর একটা শার্ট আর একটা পায়জামা বার করে।

শার্টটা বিশাল বড়, ওর শরীরের অধিকাংশ রিশুর শার্টেই ঢেকে যাবে কিন্তু শুধু মাত্র শার্ট পরে তো আর মামনির সামনে পাপার সামনে যাওয়া যায় না। নিজের বাড়ি হলে আলাদা কথা, সেখানে কি কেউ ওকে দেখতে যেত নাকি? দিল্লীতে দুপুরে স্নানের পরে একটা তোয়ালে গায়ে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে নিশ্চিন্ত মনে শোয়ার ঘরে ঢুকে পড়তে পারত। দিয়াকে ডেকে ওর একটা পায়জামা চাইতেই দিয়া হেসে ফেলে।

দিয়া ঝিনুককে জিজ্ঞেস করে, “তুমি সত্যি কিছুই আনোনি?”

ঝিনুক মাথা নাড়ায়, “না”। porokia romance

দিয়ার কানে ভেসে আসে মায়ের গলা, ফোনে নিশ্চয় দাদাভাইয়ের সাথেই কথা বলছে মা। “হুম… এই তো ঢুকলও একটু আগেই… তুই কি ওকে বকাবকি করেছিস নাকি?… কেন?… (একটু হাসির) আচ্ছা বাবা ওকে বকাবকি করব না… রোজি এসেছে?… তুই খেয়েছিস কিছু?… হ্যাঁ, গলদা চিংড়ির মালাইকারি খাবে বলল তাই সন্তোষকে বাজারে পাঠিয়েছি… তোর তো গলা বসে গেছে দেখছি… (একটু হাসির আওয়াজ)… হ্যাঁরে বাবা তুই তো বড় সার্জেন, এখন আর মায়ের কথা কেন শুনবি… আচ্ছা বাবা গারগেল করিস… প্যাকিং হয়ে গেছে?… আচ্ছা, ভালো তো… ”

বাড়ির পরিবেশ সরল হয়ে গেছে দেখে দিয়া চেঁচিয়ে ওর মাকে বলে, “মা, তোমার বৌমা জামা কাপড় না নিয়েই চলে এসেছে।”

কথাটা ওর মায়ের কানে যায়নি কারণ তখন ওর মা ওর দাদাভাইয়ের সাথে ফোনে কথা বলছিল। ঝিনুক আদর করে দিয়ার কান টেনে দেয়। দিয়া ওর একটা জোড়া পাজামা আর টপ ঝিনুককে পড়তে দেয়। ঝিনুক সেই নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পরে। সেই প্রথম দিনেই এসে দেখেছিল, বাথরুমটা অনেক বড় ওদের শোয়ার ঘরের মতন। গিজার চালিয়ে গরম জল করে বাথটাবে বসে থাকে বেশ কিছুক্ষন। বাড়ির পরিবেশ হয়ত সরল হয়ে আসবে কিন্তু যার বুকে শক্তিশেল বিঁধেছে সে কি আর ওকে কাছে ডাকবে? porokia romance

স্নান সেরে বেড়িয়ে আসে ঝিনুক। বিয়ের পরে কয়েক ঘন্টার জন্য এই বাড়িতে ছিল, বেশির ভাগ সময় ওর রিশুর ঘরের মধ্যেই কেটে গিয়েছিল। বাড়িটা সেই ভাবে সেদিন দেখা হয়নি। বিশাল বসার ঘরের এক পাশে একটা দেয়াল জুড়ে আলমারিতে প্রচুর ছবি। সবার এখানে আলাদা আলাদা করে ঘর আর ঘর গুলো বিশাল। অনেক দিনের পুরানো বাড়ি হলেও আভিজাত্যের ছোঁয়া দেয়ালের প্রতিটি ইঞ্চিতে আঁকা।

মাঝে মাঝে অবাক লাগে ঝিনুকের, এত বড় বাড়ির ছেলে রিশু কিন্তু কত অনায়াসে দিল্লীতে দুই কামরার একটা ছোট ফ্লাটে এত বছর ধরে রয়ে গেল। সারাটা দিন এই ভাবেই কেটে যায় ওর, দিয়া দীপের সাথে গল্প করে, মামনি পাপার সাথে গল্প করে। ড্রাইভার পাঠিয়ে বাড়ি থেকে নিজের পুরানো জামা কাপড় আনিয়ে নেয়। কিন্তু সারাদিনে যার গলার আওয়াজ শোনার জন্য ভীষণ ভাবেই অপেক্ষা করেছিল, তার ফোন সেই নামে আর বেজে ওঠে না।

রাতে শোয়ার সময়ে বিশাল ঘরের মধ্যের বিশাল বিছানার ওপরে ভীষণ ভাবেই একা মনে হয় নিজেকে। প্রথম রাতের কথা ভীষণ ভাবেই মনে পরে যায়, বিছানার পাশে রাখা সোফাটার দিকে শুয়ে শুয়েই অনেকক্ষণ চেয়ে থাকে। সেই রাতে এই সোফায় বসে কাটিয়ে দিয়েছিল রিশু। porokia romance

রিশু সারাদিন ওর ল্যাপটপ খুলে পড়াশুনা করেই কাটিয়ে দেয়। মাঝে একবার মায়ের সাথে বোনের সাথে ফোনে কথা হয়েছিল কিন্তু ঝিনুকের সাথে কথা বলার ইচ্ছে হয়নি ওর। রাতে একা একা খেতে বসে ভীষণ ভাবেই একা লাগে। বিয়ের আগে একাই খেত কিন্তু এই কয়দিনের মধ্যে ওর জীবন অনেক বদলে গিয়েছিল। রাতে শুতে এসে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে অনেকক্ষণ ফোন হাতে নিয়ে নড়াচড়া করে।

পরেরদিন সোমবার, যথারীতি সকাল সকাল হসপিটাল বেড়িয়ে যায়। হেলমেট পরে বাইকে স্টার্ট দিয়ে আপনার হতেই ওর ডান হাত উপরের দিকে উঠে যায়, দুই তলার নিজের ফ্লাটের বারান্দার দিকে দেখে হাত নাড়ায়। না ওখানে কেউ দাঁড়িয়ে নেই ওর জন্য, প্রচন্ড খালি ওই জায়গাটা। মাথা ঝাকায় রিশু, হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ল। সারাদিন ওপিডিতে ভীষণ ব্যাস্ত।

ওপিডি শেষে ফাইল আর রিপোর্ট বানাতে ব্যাস্ত ছিল রিশু। এমন সময়ে রিতিকার ফোন আসে ওর কাছে, “কি করছ? ডিউটি শেষ হল?”

প্রখর গ্রিস্মের তাপে মানুষ ছায়া খোঁজে তাই মৃদু হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ ডিউটি শেষ। কাল বেড়িয়ে যাবো তাই আমার পেসেন্টের রিপোর্ট গুলো বানিয়ে দিচ্ছি। তোমার কি খবর?” porokia romance

রিতিকা মৃদু হেসে উত্তর দেয়, “চলছে এই আর কি। তুমি কখন বের হবে?”

জিজ্ঞেস করে রিশু, “কেন কিছু কাজ ছিল নাকি?”

রিতিকা উত্তর দেয়, “না না, শুধু কাজ থাকলেই কি তোমাকে ফোন করা যেতে পারে?”

হেসে ফেলে রিশু, “না না, এমনিতেও ফোন করতে পারো।”

রিতিকা জিজ্ঞেস করে, “ডিনার?”

একটু ভেবে রিশু উত্তর দেয়, “বাড়িতেই।”

রিতিকা জিজ্ঞেস করে, “রান্না আছে কি?”

মাথা নাড়ায় রিশু, “না মনে হয়। কিছু একটা বানিয়ে নেবো।”

রিতিকা ওকে জিজ্ঞেস করে, “আমি কিছু নিয়ে আসব নাকি?”

একটু ভেবে উত্তর দেয় রিশু, “তুমি বাড়িতে আসবে?”

রিতিকা উত্তর দেয়, “অসুবিধে আছে নাকি? তাহলে থাক।” porokia romance

মাথা নাড়ায় রিশু, “না না, তোমার অসুবিধে না থাকলে আমার কোন অসুবিধে নেই।”

রিতিকা মুচকি হেসে উত্তর দেয়, “না থাক, বাড়ি নয়। তোমাদের বাড়ির পাশে একটা চাইনিজ রেস্তোরাঁ আছে সেখানে।”

রিশু উত্তর দেয়, “ওকে, এক ঘন্টার মধ্যে।”

মুচকি হাসে রিতিকা, “শিওর ডিয়ার।”

শেষের সম্বোধন শুনে রিশু হেসে ফেলে। নতুন বছরের দ্বিতীয় দিন, ও জানত যে সন্ধ্যের পরে বাড়ির পাশের সেই রেস্তোরাঁতে জায়গা পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে। রেস্তোরাঁতে ফোন করে দুই জনের জন্য একটা টেবিল রিসার্ভ করে নেয়। রেস্তোরাঁর মালিক আবার ওদের ব্লকের বাসিন্দা, বাঙালি, তাই জায়গার জন্য কোন অসুবিধে হয়নি। যথারীতি কাজ সেরে বেড়িয়ে পরে রিশু। সারাদিনে দুই বার বাড়িতে ফোন করেছে ঠিকই কিন্তু তাকে আর ফোন করেনি। ওর মনে একটাই প্রশ্ন, এখন ঝিনুক কেন ওর বাড়িতে?

নিজের বাড়িতে কেন ফিরে যায়নি? সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ রেস্তোরাঁতে পৌঁছে যায় রিশু। অনেক ভিড় কিন্তু যেহেতু ওর টেবিল রিসার্ভ করা ছিল তাই জায়গা পেতে অসুবিধে হল না। রিতিকা তখন এসে পৌঁছায়নি। একটা মকটেল নিয়ে রিতিকার অপেক্ষা করে আর হাতে ফোন নিয়ে আবার নড়াচড়া শুরু করে দেয়। কেমন আছো? হটাত করেই আপন মনে জিজ্ঞেস করে। ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে ঝিনুকের মিষ্টি হাসি হাসি মুখটা। ছবিটা শালিনী তুলে দিয়েছিল সেদিন, যেদিন ঝিনুক শাড়ি পরেছিল আর সবাই ডিনারে গিয়েছিল। porokia romance

একটা নরম হাতের ছোঁয়া কাঁধে এসে পরে, “হাই…”

মাথা উঠিয়ে দেখে, রিতিকা। মৃদু হেসে উত্তর দেয় রিশু, “হাই।”

মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে রিতিকা, “দেরি হয়ে গেল নাকি?”

দুই পাটি মুক্তো সাজানো দাঁতের সারি মেরুন রঙের নরম ঠোঁটের মধ্যে থেকে ঝিলিক মারে। রিতিকার সাথে ঝিনুকের কেন রেশারেশি ছিল সেটা অনুধাবন করতে বিন্দুমাত্র অসুবিধে হয় না রিশুর। রিতিকা ভীষণ সুন্দরী দেখতে। পরনে একটা কালো জিন্স, গায়ে গলা উঁচু ফ্যাকাশে সাদা রঙের সোয়েটার, একটা মেরুন রঙের লম্বা ওভারকোট, বেল্ট বাঁধা না থাকার ফলে সামনের দিক খোলা। সাদা রঙের সোয়েটার রিতিকা পীনোন্নত নিটোল বক্ষ যুগল বাঁধনে বাঁধতে অক্ষম তাই ভীষণ ভাবে সামনের দিকে উঁচিয়ে।

চেহারায় যৎসামান্য প্রসাধনী হয়ত অফিস ছিল তাই বিশেষ সাজেনি তাও চোখের কোনে কাজল, চোখের পাতার ওপরে হাল্কা মেরুন রঙ করা। হাতের নখ গুলো বেশ লম্বা। কোমল কমলালেবুর মতন ঠোঁট জোড়া ওভারকোটের রঙের সাথে মিলিয়ে মেরুন রঙে রঞ্জিত। মাথায় বেশ লম্বা চুল তবে ঝিনুকের মতন রঙ করা নয়, আষাঢ়ের মেঘের মতন ঘন কালো। কাঁধের ব্যাগ আর হাতে ফাইল টেবিলের ওপরে রেখে ওর বিপরিত দিকের চেয়ারে বসে পরে রিতিকা। porokia romance

রিশু উত্তর দেয়, “না দেরি কিসের। কিছুর তাড়া নেই তাই এখন হাতে অনেক সময়।” একটু থেমে ওকে বলে, “থারটি ফার্স্টের জন্য সরি।”

রিতিকা ওর হাতের ওপরে নরম হাতের ছোঁয়ার প্রলেপ লাগিয়ে মৃদু হেসে বলে, “ধ্যাত, ওর জন্য সরি বলতে নেই। মাঝে মাঝে হয়ে যায়।” হাতে মেনু কার্ড নিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি খাবে বলো।”

হেসে ফেলে রিশু, “তুমি খাওয়াচ্ছ নাকি?”

রিতিকা মুচকি হাসি দেয়, “না না, হাফ হাফ, আমারটা তুমি পে করবে, তোমারটা আমি পে করব।” বলেই খিলখিল করে হেসে ফেলে।

রিশুও হেসে ফেলে ওর কথা শুনে। চিকেন মোমো দিয়েই শুরু হয় ওদের খাবার।

রিশুর হসপিটালের গল্প, রিতিকার অফিসের নানান গল্প করতে করতে এক সময়ে রিতিকা ওকে জিজ্ঞেস করে, “ঝিনুক ওর বাড়িতে না… কি…” বাকিটা উহ্য রেখে দেয় রিতিকা।

রিশু খাওয়া থামিয়ে রিতিকার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে উত্তর দেয়, “না, আমার বাড়িতে।”

মাথা দুলিয়ে মুচকি হাসে রিতিকা, “হুম বুঝতেই পারছি ভীষণ মিস করছ ওকে, তাই না।” উত্তর জানা নেই রিশুর তাই চুপ করে থাকে। রিতিকা ওর চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি হটাত করেই বিয়ে করতে কেন গেলে?”

প্রশ্নটা শুনে ঘাবড়ে যায় রিশু, “মানে?” porokia romance

খাওয়া থামিয়ে পালটা প্রশ্ন করে রিতিকা, “মানে, এক রাতে তুমি সোজা কোলকাতা গেলে। একেবারে অচেনা অজানা একজনের সাথে বিয়ে হয়ে গেল। কেন? কি জন্য?” রিশু রিতিকার চোখের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন। বুঝতে চেষ্টা করে কি সঠিক বলতে চাইছে রিতিকা। রিতিকা মুচকি হেসে বলে, “ঝিনুক ভীষণ সুন্দরী আর এম বি এ করেছে তাই বিয়ে করে নিলে?”

ম্লান হাসে রিশু, কথাটা অতটা সত্যি নয়। কোন সন্দেহ নেই, ঝিনুক ভীষণ সুন্দরী তবে। মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয় রিশু, “না তা ঠিক নয়।”

পালটা প্রশ্ন কর রিতিকা, “তাহলে?”

একটু ভেবে রিশু উত্তর দেয়, “ওর মা, আমার মায়ের ভীষণ ভালো বান্ধবী। আর মায়ের পছন্দ ছিল তাই শেষ পর্যন্ত বিয়েটা করেই নিলাম।”

কাঁটা চামচ দিয়ে শেষ মোমোটা চেপে ধরে মুখের কাছে এনে রিশুকে বলে, “তাহলে মায়ের পছন্দের জন্য বিয়ে করেছ?”

একটু ভাবুক মৃদু হাসি দেয় রিশু, “হ্যাঁ, তা বলতে পারো।”

মোমোটা শেষ পর্যন্ত মুখের মধ্যে দিতে গিয়েও দিল না রিতিকা। রিশুর চোখে চোখ রেখে ভুরু কুঁচকে একটু খানি তাকানোর পরে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে যখন ওকে এটা বললে যে, তোমায় আজ থেকে ফ্রিডম দিলাম তখন তোমার মায়ের কথা মনে পরে নি? মনে হয়নি বাড়িতে আন্টি জানতে পারলে কি ভাববে?” porokia romance

কথাটা শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় রিশুর, “কি বলতে চাইছ তুমি?”

মৃদু হাসি দেয় রিতিকা, “না না, আমি কিছু ভাঙতে আসিনি। কিছু গড়তেও আসিনি।”

হসিটা ভালো লাগে না রিশুর তাই চাপা স্বরে বলে, “হেঁয়ালি ছেড়ে সোজাসুজি বল কি বলতে চাও।”

দুই জনার পাতেই শেষ মোমো পরে থাকে। খাওয়া থামিয়ে দেয় রিতিকা, তারপরে বলতে শুরু করে, “ঝিনুক নিশ্চয় তোমাকে বলেছে আমাদের কলেজের কথা।”

মাথা নাড়ায় রিশু, “না।” রিশু সম্পূর্ণ না জানলেও এটা জানে যে কলেজে পড়াকালীন রিতিকার আর ঝিনুকের সম্পর্ক সুহৃদ ছিল না।

রিতিকা বলে, “ওহ আচ্ছা। কলেজে আমাদের মধ্যে বিশেষ ভালো সম্পর্ক ছিল না, জানো। মেয়েলি ব্যাপার স্যাপার। আমি আমার ব্যাচের টপ টেনের মধ্যে ছিলাম, সেদিক থেকে ঝিনুক ব্রিলিয়ান্ট হলেও কেন জানি না ঠিক ভাবে র‍্যাঙ্ক করতে পারত না।”

মুচকি হেসে ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে নাকের অপর থেকে চুল সরিয়ে মরালী গর্দান আর ডান কানের ফর্সা লতি উন্মুক্ত করে লাজুক হেসে বলে, “আর একটু এই মেয়েলি ব্যাপারে আমাদের মধ্যে রেশারেশি ছিল। কে বেশি সুন্দরী।” কথাটা শুনে মৃদু হাসি দেয় রিশু। রিতিকা প্রশ্ন করে, “পার্থের ব্যাপার আশা করি জানো?” porokia romance

নামটা শুনে শরীর জ্বলে ওঠে ওর, মাথা দোলায় রিশু, “হ্যাঁ। বেশ ভালো ভাবেই।”

রিতিকা মাথা নাড়িয়ে বলে, “না, তুমি কিছুই জানো না। আমি বলছি তোমাকে।” রিশু ভেবে পায়না রিতিকা আসলে কি বলতে চাইছে। রিতিকা বলতে শুরু করে, “ফার্স্ট সেমেস্টারের শেষের দিকে ওদের মধ্যে প্রেম হয়, প্রেম না বলে বলো এই ফ্লারটিং, ভালো লাগা, ওই বয়সে যা হয়ে থাকে আর কি। জানো, মানুষ বন্ধুর চেয়ে শত্রুর খোঁজ বেশি রাখে। আর মেয়েদের জন্য পরনিন্দা পরচর্চা, গল্প করার জন্য ভীষণ ভালো উপাদান।

তাই ভীষণ ভাবেই আমিও ওর খবর রাখতাম। পার্থের সাথে কবে কোথায় যাচ্ছে, কোন ডিস্কোথেকে, কোন পাবে, কবে কোথায় পার্টি করছে সব। তার কারণ ছিল, বলতে পারো আমাদের রেশারেশি। মাঝে মাঝেই কলেজে এসে গল্প করত আজকে এইখানে পার্থের সাথে গেছে, কালকে ওর সাথে ওইখানে যাবে। আরো অনেক কিছু।

আমিও সেইদিনে ডিস্কোতে যেতাম। কলেজে আমাকেও তো শুনাতে হবে।” বলেই মুচকি হাসি দেয়। “কখন আমি একটা হাই হিল কিনলাম তার পরের দিনে ওর পায়েও দেখি একটা দামী হাই হিল। কখন ও পার্টিতে যাওয়ার জন্য একটা বডিকন ড্রেস কিনেছে, আমিও ঠিক সে রকম না হলেও একটু ভালো কিম্বা একটু মন্দ একটা বডিকন পার্টি ড্রেস কিনে ফেলতাম।” porokia romance

একটু থেমে চোখ টিপে রিতিকা মুচকি হাসি হেসে বলে, “আমার ড্রেস গুলো বেশির ভাগ আমার তখনের বয়ফ্রেন্ড, হরিশের পকেট মেরে কেনা। সেখানে ঝিনুক নিজের পয়সায় ড্রেস কিনত। ওর বাবা খুব বড়লোক। রানীগঞ্জে কোলিয়ারিতে ম্যানেজার ছিল। আর কোলিয়ারির ম্যানেজার মানে হাতে প্রচুর টাকা। ঝিনুক কলেজে আসত নিজের গাড়িতে, রোজ সকালে ড্রাইভার গাড়ি করে ওকে কলেজে ছেড়ে যেত।

তবে কলেজের পরে পার্থের সাথে বেড়িয়ে যেত। কতবার দেখেছি, পার্থের সাথে বাইকের পেছনে বসে সিগারেট টানছে। ঝিনুক একটু পয়সার দেমাক একটু দেখাত সবাইকে। প্রত্যেক সপ্তাহে পার্লার যাওয়া চাই। চুলে রঙ করিয়েছে, হাইলাইটিং করিয়েছে, এইসব গল্প শুনাত সবাইকে। আমি সেটা পারতাম না, কারণ আমি জামসেদপুর থেকে কোলকাতা এসে পেয়িং গেস্ট থাকতাম।

বাবা যা টাকা পাঠাত তাতেই আমাকে চালাতে হত, আমার খাওয়া দাওয়া, বাড়ি ভাড়া, গাড়ি ভাড়া, সব কিছু। মাঝে মাঝে অনলাইন কিছু বইয়ের প্রুফ রিডিং করে দিতাম, কখন কোন মেডিকেল ডেটা আপলোড করে দিতাম, তাতে আমার হাতে মোটামুটি কিছু চলে আসত।”

একটু থেমে এক চুমুক জল খায় রিতিকা। তারপরে আবার বলতে শুরু করে, “কোলকাতায় কেন এমন বড় বড় শহরে প্রচুর এমন মেয়ে আছে যাদের বাড়ির দেওয়া টাকায় চলে না, তখন তারা অনেক কিছু করেই টাকা কামিয়ে নেয়। আমাদের ব্যাচের মধ্যে তিন চারজন এমন ছিল। তাদের হাতে কাঁচা টাকা, এক রাতের মধ্যে পনেরো থেকে কুড়ি। অপর্ণা বলে আসানসোলের একটা মেয়ে ছিল। porokia romance

কোন মাসে ওর হাতে চল্লিশ থেকে পঞ্চাস হাজার টাকা চলে আসত। তার সাথে ঝিনুকের খুব ভাব ছিল। অপর্ণা যেটা করতে পারত, সেটা আমি পারিনি।” একটু থেমে যায় রিতিকা। রিশু খাওয়া ভুলে ওর দিকে চেয়ে থাকে এক ভাবে। “এই অপর্ণা পার্থের সাথে ঝিনুকের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।” বলে থেমে যায়। কথাটা শুনে কান গরম হয়ে যায় রিশুর।

প্লেটের শেষ মোমোটা মুখের মধ্যে পুরে রিশুকে জিজ্ঞেস করে, “এরপর কি কিছু আর খাবে?”

খিধে ছিল কিন্তু রিতিকার কথা শুনে খাওয়া ভুলে গেছে রিশু। মাথা নাড়ায়, “না আর কিছু না।”

একটা দুষ্টু মিষ্টি হাসি দেয় রিতিকা, “আমার কিন্তু এখন খিধে আছে ডক্টর সান্যাল।”

হেসে ফেলে রিশু, “কি অর্ডার করতে চাও?”

চোখ টিপে ওকে বলে, “তুমি পে করছ?”

হেসে ফেলে রিশু, “নিশ্চয়, সেটাই আমাদের শর্তে ছিল তাই না।” বলেই দুইজনেই হেসে ফেলে।

রিতিকা দুই প্লেট চিকেন নুডুলস অর্ডার দিয়ে আবার বলতে শুরু করে, “এই অপর্ণার ব্যাপারটা আমাদের ব্যাচের অনেকেই জানত না। আমি জেনেছিলাম কারণ একবার হরিশের সাথে একটা রেস্তোরাঁতে ডিনার করতে গিয়ে আচমকা দেখা হয়ে যায়।” একটু থেমে কড় গুনে বলে, “ওহ সরি, একবার নয় তিনবার দেখা হয়। আলাদা আলাদা জায়গায়, আলাদা আলাদা মানুষের সাথে। porokia romance

যেমন তার ড্রেস ছিল তেমন ছিল তার সেই মানুষের সাথে ব্যাবহার, একদম গায়ে ঢলে যাওয়া আর কি।” চোখ টিপে বলে, “মেয়েলি মন, খোঁজ লাগালাম, তারপরে জানতে পারলাম যে অপর্ণার হাতে কি করে এত টাকা আসে। যাই হোক সেটা অন্য ব্যাপার। ব্যাপার যেটা সেটা হচ্ছে এই পার্থ আর ঝিনুক।”

কথাটা কানে যেতেই রিশুর চোয়াল কঠিন হয়ে যায়। এই পার্থের সাথে একবার শেষ দেখা করতেই হবে।

রিতিকা না থেমেই বলে, “আমি এটা বলতে চাই না, যে অপর্ণার সাথে মিশে ঝিনুক সেই পথে গেছে। এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আমি যেটা করতে পারিনি সেটা ঝিনুক ও পারেনি। কারণ একটাই, ওর চোখ মুখ দেখেই বোঝা যেত ঝিনুক অন্ধের মতন বিশ্বাস করত পার্থকে। পার্থের আসল পরিচয় ঝিনুক জানত না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস অপর্ণার আসল উদ্দেশ্য অথবা অপর্ণার আসল চরিত্র ঝিনুক জানত না। পার্থ শুধু মাত্র ঝিনুককে খেলায় নি, আরো অনেক মেয়েকে খেলিয়েছে।

আর আমি, যেহেতু তখন আমাদের মধ্যে একটা রেশারেশি আমরা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী তাই আমিও শুধু মাত্র মজা দেখতাম। জানতাম একদিন ঝিনুক হোঁচট খাবে তখন আর ওঠার শক্তি থাকবে না। তখন আমি প্রান খুলে হাসব।” শেষের কথাটা বলতে বলতে রিতিকার চেহারায় একটু কালো মেঘের ছায়া দেখা দেয়। একটু থেমে মুচকি হেসে রিশুকে বলে, “আমি জানি তোমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে এই সব কথা শুনে।” porokia romance

পার্থের ব্যাপারে এত কথা শোনার পরে সত্যি রিশুর শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটতে শুরু করে দেয়, “একদম হচ্ছে। হাতের সামনে পেলে …”

হেসে ফেলে রিতিকা, “হাতের সামনে পেলে কি করবে, ডক্টর? মেরে ফেলবে?” হটাত করে এই প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে ভেবে পায় না রিশু। রিতিকা বুক ভরে এক দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে, “ঝিনুককে ধোঁকা দেওয়ার উচিত শিক্ষা ভগবান পার্থকে দিয়ে দিয়েছে। আমি গতকাল সকালেই আমার কোলকাতার এক বন্ধুকে ফোন করেছিলাম, জানতে চেয়েছিলাম পার্থের কথা। সে খবরা খবর নিয়ে আমাকে বলল, তোমাদের বিয়ের এক সপ্তাহ পরে পার্থের একটা এক্সিডেন্টে হয়। তারপর থেকে পার্থ ব্রেন ডেড অথবা বলতে পারো কোমায় চলে গেছে।

শরীরের প্রচুর হাড়গোড় নাকি ভেঙ্গে গেছে। ওর নাকি অনেক পাওনাদার ছিল, কারুর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে একটা ব্যাবসা করবে বলেছিল। কিন্তু পার্থের ছিল টাকার লোভ আর মদের নেশা মেয়ের নেশা। ব্যাবসা কি করবে, এদের পেছনেই টাকা উড়িয়ে দিয়েছিল। ঠিক সময়ে পাওনাদারেরা টাকা পায়নি। তাই ওরা নাকি এক্সিডেন্ট করিয়েছে। মেরে ফেলতেই চেয়েছিল। ওর গাড়িটা নাকি ভেঙ্গে এমন দুমড়ে গেছিল যে গাড়ির দরজা কেটে পার্থকে বার করতে হয়েছিল।” porokia romance

একটানা এত কথা বলার পরে রিতিকা একটু থেমে একটু জল খায়। তারপরে বলে, “তুমি ডাক্তার, অনেক পড়াশুনা করেছ, বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছ, তুমি হয়ত ভগবান বিশ্বাস কর না। তবে কি জানো, একটা শক্তি কোথাও আছে। পাপের শাস্তি হয়।” বলে বড় একটা শ্বাস ছাড়ে রিতিকা।

যে রাগটা পার্থের ওপরে হয়েছিল রিশুর সেটা মিলিয়ে যায়। রিতিকাকে প্রশ্ন করে রিশু, “তুমি কি এই খবর ঝিনুককে দিয়েছ নাকি?”

হাসিতে ফেটে পরে রিতিকা, “তুমি পাগল নাকি? আমি হয়ত ওর শত্রু হতে পারি কিন্তু মরার ওপরে খাঁড়ার ঘা আমি মারি না।”

হেসে ফেলে রিশু, “এখন ওর শত্রু?”

মুচকি হেসে ভুরু নাচায় রিতিকা, “একটু একটু…”

হাসির তাৎপর্য অনুধাবন করতে বিন্দুমাত্র অসুবিধে হয় না রিশুর তাই সেই সাথে ও হেসে ফেলে, “শালী সাহেবা…”

রিতিকাও সেই হাসিতে যোগদান দিয়ে বলে, “ডক্টর সাব, আধি ঘরওয়ালি হু ম্যায়।”

নুডুলস এসে যাওয়াতে খাওয়া শুরু করে রিশু আর রিতিকা। সেই সাথে রিতিকা বলতে শুরু করে, “তুমি জানো ঝিনুক দারুন নাচতে পারে?”

মাথা দোলায় রিশু, “হ্যাঁ এটা ও আমাকে বলেছে।” porokia romance

মৃদু হাসে রিতিকা, “আমাদের ফাইনাল ইয়ারের এনুয়াল ফাঙ্কশানে ঝিনুক একটা সোলো ড্যান্স করেছিল। দিল তো পাগল হ্যায় এর ফেমাস গান। মুঝকো হুই না খবর, চোরি চোরি ছুপ ছুপ কর… করিশ্মা কাপুরের নাচ। ঝিনুকের সোলো পারফর্মেন্স। মারাত্মক নেচেছিল ঝিনুক, উফফফ পাগল যাকে বলে। স্টেজে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। ওডিটোরিয়াম হাততালিতে ফেটে পড়েছিল। ছেলেরা জামা ছিঁড়ে ফেলেছিল সেই নাচ দেখে। সিনেমা করার সময়ে সেই নাচে করিশ্মা কাপুর কতবার রিটেক করেছিল জানি না।

কিন্তু ঝিনুক এক বারে, কোন রিটেক ছাড়া সেই দুর্ধর্ষ নাচ নেচেছিল। আমি পরে কৃষ্ণা, আমাদের একটা কমন ফ্রেন্ড, তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ঝিনুক কোথায় নাচ শেখে রে? ওর উত্তর শুনে আমি থ হয়ে গেছিলাম। ঝিনুক কোথাও নাচ শেখেনি। কিন্তু ঝিনুক নাচের জন্য পাগল। বাড়িতে টিভিতে দেখে দেখে সেই নাচ প্রাকটিস করেছিল।”

এতক্ষন শোনার পরে রিশু মুখ খোলে, “হ্যাঁ এই ব্যাপারটা আমাকে বলেছে। ওর বাড়ি থেকে ওকে নাচ শিখতে দেওয়া হয়নি তাই তারপর থেকে এক প্রকার জেদি হয়ে যায়।” porokia romance

মাথা দোলায় রিতিকা, “হ্যাঁ সেটাই। বাড়ির সবাইকে ওর শত্রু বলেই মনে হত, তাই বাইরে যা পায় তাতেই নিজের শান্তি খুঁজে বেড়ায়। তাই বলে এটা বলতে চাই না যে ওর বাবা মা ওকে ভালোবাসে না। নিশ্চয় ভালোবাসে। তবে কি জানো, কখন কোন কথা গায়ে লেগে যায় আর তার কি যে পরনিত ঘটতে পারে সেটা কেউ জানে না।” খাওয়া থামিয়ে দেয় রিতিকা। “ওর মধ্যে জানো, কচি ভাবটা এখন রয়ে গেছে। তোমার সাথে মার্কেট গিয়ে নিজের হাতে তোমাকে ফুচকা খাইয়েছে নাকি?”

কথাটা শুনে হেসে ফেলে রিশু, “এটাও বলেছে তোমাকে?”

মৃদু হাসে রিতিকা, “হ্যাঁ আমাকে বলেছে। কথাটা বলার সময়ে ওর চেহারার ভাবটা তোমার একবার দেখা উচিত ছিল, জানো। একটা বাচ্চা মেয়ে, যখন তার সাধের ভাঙা পুতুলকে আবার কেউ জোড়া লাগিয়ে তার হাতে তুলে দেয়, তখন সেই বাচ্চা মেয়ের ঠোঁটে যে হাসি ফুটে ওঠে, তেমন ভাবে হাসি ফুটে উঠেছিল ওর ঠোঁটে।”

সব তো বুঝলো কিন্তু এই মেয়ে কি সত্যি ওর পরিবারকে ভালবাসতে পারবে? বড় প্রশ্ন সেখানেই। রিশু ম্লান হেসে মাথা দোলায়, “হুম।”

রিতিকা একটু থেমে রিশুর চোখে চোখ রেখে বলে, “ঝিনুক বড্ড নরম আর ইমোশানাল মেয়ে, রিশু।”

শেষের কথাটা বলতে বলতে গলা ধরে আসে রিতিকার। রিশুর চোখের দিকে অনেকক্ষণ চুপ করে চেয়ে থাকে রিতিকা।

রিতিকা আলতো মাথা নাড়িয়ে ম্লান হেসে বলে, “মেয়ে মানুষ জলের মতন রিশু, তাই তো নদী স্ত্রীলিঙ্গ। যে পাত্রে রাখবে সেই পাত্রের মতন নিজেকে ঢেলে সাজিয়ে নেবে।” porokia romance

রিশু শেষ পর্যন্ত রিতিকাকে প্রশ্ন করে, “কি বলতে চাইছ তাহলে? তুমি ওইখানে ছিলে। সব কিছুই জানো সব কিছুই দেখেছ শুনেছ। তারপরেও?” শক্ত চোয়াল, শীতল চাহনি। একটু চুপ করে থেকে রিতিকাকে বলে, “দুধ খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো হাই প্রোটিন থাকে। লেবু খাওয়াও শরীরের পক্ষে ভালো, ভিটামিন সি থাকে। তাই বলে দুধের সাথে আমরা লেবু খাই না। আলাদা আলাদা করেই খাই।”

কথাটা শুনে ম্লান হাসে রিতিকা, “আমার চেয়ে তুমি অনেক অনেক বড়। অনেক বেশি শিক্ষিত। এমসের মতন একটা বড় হসপিটালের অরথোপেডিক সার্জেন তুমি। এর বেশি আর আমি তোমাকে কিছুই বলতে চাই না।”

বাকি খাওয়া চুপচাপ সেরে ফেলে দুইজনে। খাওয়া শেষে, রিতিকা রিশুকে জিজ্ঞেস করে, “কাল কখন ফ্লাইট?”
রিশু উত্তর দেয়, “রাত একটায়।”

রিতিকা প্রশ্ন করে, “সুটকেস গুছানো হয়ে গেছে?”

রিশু বলে, “না গো অর্ধেক হয়েছে। আমি ঠিক ভাবে গুছাতে পারি না…” বলেই হেসে ফেলে।

রিতিকাও হেসে ফেলে, “যা বাবা। উলের মোজা কিনেছ?”

মাথা দোলায় রিশু, “না না ও সব লাগবে না।”

হেসে ফেলে রিতিকা, “লন্ডন যাচ্ছও, মাইনাসে টেম্পারেচার থাকবে। গ্লাভস আছে?”

রিশু মাথা দোলায়, “আছে। কিন্তু নেওয়া হয়নি।” porokia romance

হেসে ফেলে রিতিকা, “তুমি না সত্যি কিছুই পারো না। চল, তোমার সুটকেস গুছিয়ে দিচ্ছি।”

রিশু বাইকে উঠে বলে, “তোমার বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যাবে যে।”

বাইকের পেছনে উঠে রিশুর কাঁধে হাত রেখে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, “আধি ঘরওয়ালি হু ম্যায়। সো কিছু তো খেয়াল রাখতেই হয়।”

হেসে ফেলে রিশু। রাত প্রায় ন’টা বাজে।

শেষের পাতায় শুরু – 29 by Pinuram

কেমন লাগলো গল্পটি ?

ভোট দিতে হার্ট এর ওপর ক্লিক করুন

সার্বিক ফলাফল / 5. মোট ভোটঃ

কেও এখনো ভোট দেয় নি

7 thoughts on “porokia romance শেষের পাতায় শুরু – 30 by Pinuram”

    • apnar kache golpo ta faltu lage, dakle r porte mon chai na ki tai to? tahole golpo ta ignor koren. daklai ki golpo ta porte hobe? sudhu apnar valo lagar jonno ki next part uplod hobe na! golpo ta apnar kamon lage saita comment koren, writter k uplod dite mana korer apni k?

      Reply
  1. karo kase faltu laglao, amar kase onak valo lage. proti din ek ta kore uplod day,porte o valo lage. tobe golpo ta boro howar karon holo ei khane onak choritro ache. ami mone kori golpo ta march er 1st soptahe end hole valo hoy.

    Reply
  2. পাঠকেরা অনেক কিছুই বলে
    সেসব কথায় কান না দিলেই চলে
    পিনুদা তুমি তোমার মতো লেখ
    তোমার অনেক ভক্ত আছে সে খবর কি রাখ?

    Reply

Leave a Comment