bangla romantic golpo choti. ছুটির পরে ছোটমা আমাকে নিতে আসেন। প্রতিবারের মতন সেবারেও সবার বুকে যেন বিচ্ছন্নের সুর বাজে। আমি ওদের সকলকে জানাই যে ফাইনাল পরীক্ষার পরে আমি অনেকদিনের জন্য বাড়িতে থাকব।
দুষ্টু আমার কানেকানে বলে, “পিসি, তুমি কিন্তু এবারেও আমার কথা রাখলে না।”
ওর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতন ক্ষমতা ছিলনা আমার। আমি চুপ করে ছোটমায়ের সাথে গাড়িতে উঠে পরি।
বেশ কিছুদিন আমি সুপ্রতিমদাকে ফোনে চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু প্রতিবারে সেই এক উত্তর, “নাম্বার ডায়েল করার আগে এক বার চেক করে নিন।”
একরাতে খাওয়ার পরে আমি বসার ঘরে বসে টিভি দেখছিলাম। সেইসময়ে ছোটমা বাবুর কথোপকথন আমার কানে ভেসে আসে। সেই সংলাপের মানে আমি সেদিন বুঝিনি, অনেকদিন পরে সেই সংলাপের মানে বুঝেছিলাম।
romantic golpo
বাবু, “কি করা যায় বলত? পরী নিশ্চয় লুকিয়ে লুকিয়ে কারুর সাথে যোগাযোগ রেখেছে।”
ছোটমা, “একদম বাজে ব্যাপার তাহলে। কিন্তু ও কি করে যোগাযোগ করতে পারে?”
বাবু, “আমার মনে হয় ও করেনি। আমি একদিন ওর ফোনের লগ দেখেছিলাম, তাতে ত কোন অন্তর্জাতিক কল ছিলনা।”
ছোটমা, “আমি এইসবের মানে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।”
বাবু, “আমিও কিছুই বুঝতে পারছিনা এ সব কি?”
ছোটমা, “এই নিয়ে কোন কথা না বলাই ভালো। কিন্তু আজকাল কোথায় ও? এক বছর আগে একবার ফোন করেছিল তারপরে আর করেনি।”
বাবু, “হ্যাঁ তা করেছিল, কিন্তু তারপরে ত ল্যান্ডলাইনে আর করেনি বা ওর ফোনেও করেনি মনে হয়।”
ছোটমা, “পরীকে একবার জিজ্ঞেস করলে হত না?”
বাবু, “না, তুমি কি পাগল হয়ে গেলে যে পরীকে এইসব কথা জিজ্ঞেস করতে যাবে?”
ছোটমা, “জানো মাঝে মাঝে ওর কথা খুব মনে পরে। আমার একমাত্র ছেলে, সেইসাথে কি করে পরীকে একা ছেড়ে দেই, আমি যে মাসিমাকে কথা দিয়েছি যে ওকে আমি আমার মেয়ের মতন করে রাখব।” romantic golpo
ছোটমা আর বাবু কথায় আমি সেদিন এই টুকু বুঝতে পেরেছিলাম যে ও আমাকে কোন ভাবে যোগাযোগ করেনি। কিন্তু সেইসাথে আমার মনে প্রশ্ন জাগে, কি করছে তাহলে, কেমন আছে, সত্যি কি ভুলে গেছে যে ওর প্রেমিকা ওর জন্য অপেক্ষা করছে? প্রতিসন্ধ্যের সাথে আমার হৃদয়ের আশার আলো দিগন্তের রেখায় ম্লান হয়ে যায়।
কলেজ শুরু হয়, ফাইনাল পরীক্ষার আর কয়েক মাস বাকি। সেদিন লাঞ্চের পরে ফ্রি পিরিওড ছিল। আমি ক্লাসে বসে আমার প্রাক্টিকাল খাতা লিখছিলাম, অনেক বাকি। তাড়াহুড়ো তে সেদিন আমি খাবার আনতে ভুলে গিয়েছিলাম। ক্লাসে খুব ছাত্রছাত্রী বসে ছিল। দেলিসা, দেবব্রত বা তিস্তা কেউ ক্লাসে ছিল না। সময়ের ঠিক খেয়াল ছিল না।
এমন সময়ে কেউ আমার কাঁধে হাত দেয়। আমার মনোযোগের ধারায় ব্যাঘাত ঘটে আমি একটু বিরক্ত বোধ করে ছেলেটার দিকে তাকাই। দেবব্রত আমার দিকে একটু রেগে তাকিয়ে একটা স্যান্ডউইচ আমার সামনে ধরে বলে, “লেডি বিদ্যাসাগর, লাঞ্চ না খেয়ে ক্লাসে ফার্স্ট আসতে চাও।”
আমি ওকে বলি, “তোকে কে বলল যে আমার খিদে পেয়েছে?”
দেবব্রত, “তোমার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। যাই হোক তুই খেয়ে নাও না হলে কিন্তু আমি তোমার মাথা ফাটিয়ে দেব।”
আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, “এইসব কেন করছিস তুই আমার সাথে?”
দেবব্রত আমার কোন কথায় কান দিলনা, আমার মুখের মধ্যে জোর করে স্যান্ডউইচটা ঢুকিয়ে দিল। আমি ওর আচরনে অবাক হয়ে যাই। গলার মধ্যে হটাত করে শুকনো স্যান্ডউইচ ঢুকতে গলা কেমন শুকিয়ে আসে। romantic golpo
আমি ওকে জোর গলায় বলি, “কুত্তা, আমার লাগছে, ছাড় আমাকে।”
ঠোঁটের কাছে স্যান্ডউইচ ধরে থাকে আর আলতো করে আমার গালের ওপরে আঙুল ছুঁইয়ে দেয়। আমার রাগ দেখে যেন মজা পেয়ে গেছে দেবব্রত। ঠিক সেই সময়ে আমি লক্ষ্য করে দেখি যে দরজার কাছে তিস্তা দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। ওর সেই কালো চোখ দুটিতে কেমন বেদনা মাখা। আমার গালে দেবব্রত্র হাথ দেখে কেমন ওর চোখে জল চলে আসে। আমি দেবব্রতর হাথ আমার গাল থেকে একরকম জোর করে সরিয়ে দিলাম।
ওকে বললাম, “চলে যা এখান থেকে।”
তিস্তা চুপচাপ আমার পাশে এসে বসে পরে। আমি ওর মুখের দিকে তাকাতে পারিনা, মনের মধ্যে মনে হয় যেন আমি ওর ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছি। মাথা নিচু করে আমার পাশে বসে পরে। ক্লাস পুরো নিস্তব্ধ আমার চেচানি শুনে, আমি তিস্তার বুকের ঝড় শুনতে পাই।
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেবব্রতর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি, “কি রে, তুই বাড়ি যাবি না?”
দেবব্রত, “কেন?”
আমি, “আর ত কোন পিরিওড নেই, তাহলে এখানে কার জন্য অপেক্ষা করে আছিস?”
ব্যাগ উঠিয়ে নিয়ে আমার বেঞ্চের কাছে এসে দাঁড়ায়। একবার আমার দিকে একবার তিস্তার দিকে তাকায়। তিস্তা তখন মাথা নিচু করে বসে। দেবব্রত আমাকে জিজ্ঞেস করে যে তিস্তার কি হয়েছে।
আমি ওর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উলটে ওকে জিজ্ঞেস করি, “তুই কার জন্য অপেক্ষা করছিস?” romantic golpo
ফিসফিস করে উত্তর দেয় দেবব্রত, “তোমার জন্য, মিতা।”
আমি আড় চোখে লক্ষ্য করি যে দেবব্রত ওই কথা শুনে তিস্তার শরীর টানটান হয়ে যায়, বেঞ্চের নিচে হাতের মুঠি করে নিজেকে শান্ত করতে চেষ্টা করে। দেবব্রত তিস্তার ব্যাপার বুঝতে পারেনা, আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।
আমি ওকে বলি, “আমার বাড়ি যেতে দেরি আছে, আমি প্রাক্টিকাল শেষ করে তবে বাড়ি যাব।”
দেবব্রত, “ঠিক আছে, ক্লাস তোমার একার নয়। আমি এখানে বসে থাকব তাহলে।”
আমি দাঁতে দাঁত পিষে ওকে বলি, “তোর কিছু করার না থাকলে, এখুনি ক্লাস থেকে বেড়িয়ে যা।”
আমার রাগ দেখে থমকে যায় দেবব্রত। ভাষা হীন চোখে তাকিয়ে আস্তে আস্তে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে যায়। দেবব্রত ক্লাস থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পরে আমি তিস্তার পিঠে হাথ রাখি। তিস্তা আমার হাথের ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে ওঠে, ঠিক যেন একটা ছোটো আমের পল্লব বৈশাখী ঝরে আক্রান্ত। আমি ওর মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে নিজের দিকে ধরি। ও চোখ বন্ধ করে থাকে। আমি ওর গালের ওপরে চোখের জল মুছিয়ে দেই। romantic golpo
আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, “কেন তুই আমাকে খুলে বলিস নি তোর মনের কথা?”
তিস্তা কেঁদে ফেলে, “আমি তোমাকে কি বলতাম? তুমি জানো, দেবব্রত আমার দিকে ফিরেও তাকায় না। ও এখন ভাবে যে আমি সেই আগের তিস্তা। আমি সেই তিস্তা নই, মিতা, আমি ওর জন্য অনেক বদলে নিয়েছি নিজেকে।”
আমি ওর কথা শুনে হেসে বলি, “পাগলি মেয়ে, এতদিনে তাহলে তোর মনের কথা ওকে বলিস নি কেন?”
তিস্তা, “কি করে বলতাম? ওযে শুধু তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তোমার মনের কথা আমি কি করে জানব?”
আমি, “হ্যাঁ ভগবান, ঠিক আছে, কাঁদিস না, কলেজ শেষ হওয়ার আগে আমি তোদের দুজনকে মিলিয়ে দিয়ে তবে যাবো।”
তিস্তা আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “মানে, তোমার মনে কি…”
আমি ম্লান হেসে এক বাক্যে আমার মনের কথা জানিয়ে দেই ওকে, “আমার ভালোবাসা আমার কাছে নেই। অনেকদিন আগেই আমার হৃদয় কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে। যা আমার কাছে নেই তাত আমি কাউকে দিতে পারিনা।”
একটু থেমে ওকে বলি, “এর চেয়ে বেশি কিছু জিজ্ঞেস করতে যাস না, আমি উত্তর দিতে পারব না। শুধু এইটুকু জেনে রাখ যে আমার ভালোবাসা আর আমার সাথে নেই।” খুব জোরে জড়িয়ে ধরে আমার কাঁধে মাথা রাখে তিস্তা। আমি ওর পিঠের ওপরে হাথ বুলিয়ে দিয়ে বলি, “আমি আপ্রান চেষ্টা করব তোদের দুজনকে একসাথে আনার জন্য।” romantic golpo
ফাইনাল পরীক্ষা সামনে। এমএসসি ফাইনাল পরীক্ষার সিডিউল বেড়িয়ে গেছে। পড়ার জন্য ছুটি পরে যাবে আর কিছুদিনের মধ্যেই। লাস্ট পিরিওড শেষ, আমি ব্যাগের মধ্যে আমার বই খাতা ঢুকাচ্ছিলাম। তিস্তা ক্লাসের মধ্যে বসে ছিল। আমি ওকে জিজ্ঞেস করি যে ও বাড়ি যাবে কি না। মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয় যে কিছু পরে যাবে। আমার বাড়ি ফেরার একটু তাড়া ছিল তাই ওকে ছেড়ে দিয়েই ক্লাস থেকে বেড়িয়ে আসি।
করিডরে এসে দেখি দেবব্রত আমার দিকে হেঁটে আসছে। আমি ওকে দেখে ভদ্রতার খাতিরে একটু হাসি আর এগিয়ে যাই। এগিয়ে যেতেই দেবব্রত আমার হাথ ধরে টান দেয়। আমি ওর ওপরে পরে যাই। রাগে অপমানে আমার মাথায় রক্ত চলে আসে। আমার বুক ওর ছাতির ওপরে চেপে যায়। আমার হাথ কিছুতেই ছাড়ে না দেবব্রত। আমি ওর এই আচরনে প্রচন্ড রেগে যাই।
দেবব্রত আমার মুখের কাছে ঠোঁট নামিয়ে এনে বলে, “কলেজের দিন শেষ হওয়ার আগে তোমাকে কিছু বলতে চাই।”
আমি ওর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকি। আমি জানতাম যে একদিন আমাকে এই কথার সম্মুখিন হতে হবে, হয়ত আগে থেকে যদি বাঁধা দিতাম তাহলে হয়ত হত না, কিন্তু জানিনা কেন দিতে পারিনি। আমার মুখের ওপরে ওর উষ্ণ শ্বাস বয়ে চলে। একটু ঝুঁকে আমার কাজল কালো চোখের দিকে এক ভাবে তাকিয়ে থাকে। বুকের ওপরে আমি ওর বুকের ধুকপুকানি অনুভব করি। সারা শরীরে হটাত করে একটা বিজলি চমকে যায়। আমার রাগ যেন জল হয়ে আসে ওর ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়ে।
গলার স্বর নামিয়ে আমার কানেকানে বলে, “মিতা, আমি একটা বাইক কিনেছি। আমার খুব ইচ্ছে তুমি প্রথম আমার বাইকে চড়ো।”
আমি ওর কথা শুনে গলতে শুরু করে দেই। কিন্তু কোনোরকমে দাঁত পিষে মন শক্ত করে নেই আমি। আমি কি শেষ পর্যন্ত বয়ে চলে যাচ্ছি ওর ভালোবাসার কাছ থেকে? না, আমি তা হতে দিতে পারিনা। আমি শেষ পর্যন্ত সাহস সঞ্চয় করে ওর বুকের ওপরে হাথ রেখে ওকে ঠেলে দিয়ে ওর দিকে রেগে তাকাই।
আমি ওকে রেগে বলি, “এই রকম করিস না দেবব্রত।”
দেবব্রত করুন সুরে বলে, “কেন, মিতা, আমি কি খারাপ ছেলে?” romantic golpo
আমি, “নারে তুই খারাপ ছেলে নয়। যা কিছু খারাপ সে আমার মধ্যে। তুই যা চাস তা আমি তোকে দিতে পারিনা। তোর জন্য অন্য কেউ অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে।”
দেবব্রত, “কে?”
আমি ওর হাথ ধরে টানতে টানতে ক্লাসের মধ্যে ঢুকে পরি। তিস্তা আমাদের ক্লাসে ঢুকতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আমি ওর দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবব্রত কে বলি, “ও তোর জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে।”
আমাকে জিজ্ঞেস করে দেবব্রত, “তুমি?”
আমি ওর দিকে জোর গলায় বলি, “আমি কি আমি? তুই কি ওর চোখে নিজের ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছিস না? ওই তোর সেই ভালোবাসা যাকে তুই অনেকদিন ধরে খুজছিস।”
আমি তিস্তার কাছে দেবব্রতকে টানতে টানতে নিয়ে এসে ওর হাতে তিস্তার হাথ রেখে দেই। তিস্তা আমার দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলে। আমার বুকের কাছেও এক অব্যাক্ত কান্না ঠেলে বের হওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু আমি সেই কান্নাকে চেপে দেই। দেবব্রত্র বুকের মাঝে একটা আলোড়ন শুনতে পাই তিস্তার হাথ ধরে।
দেবব্রত তিস্তাকে বলে, “আমার প্রেম বুঝতে তোর পাঁচ বছর লাগলো?”
তিস্তা দেবব্রতর কোমর জড়িয়ে ধরে ফেলে। দেবব্রত ওর মাথা নিজের পেটের ওপরে চেপে ধরে থাকে। আমার দিকে কৃতজ্ঞতার চোখে তাকিয়ে থাকে দেবব্রত।
আমি তিস্তার গাল ছুঁয়ে বলি, “আমি আমার কথা রেখেছি, এবারে তোর হাথে সব, ছারিস না যেন একে।”
আমি ওদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি। তিস্তা দেবব্রতকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরতে চায়। আমি ওকে ইশারায় জানাই যে আমি ভালো আছি, ঠিক আছি। ওদের প্রেম শুরু ওদের এবারে এক নতুন জীবন। ওদের প্রেম দেখে আমার চোখে জল চলে আসে। romantic golpo
আমি ধিরে ধিরে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গিয়ে করিডরে দাঁড়িয়ে থাকি। চোখ বন্ধ করে নেই আমি। ডান দিকে তাকিয়ে দেখি যে একটা ধবধবে সাদা ঘোড়া আমার দিকে ধিরে ধিরে এগিয়ে আসছে। বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখি যে উর্বর মাটি ফুঁড়ে একটা ছোটো ধানের শীষ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে। আমি ধানের শীষের দিকে ফিরে একপা এগিয়ে সেই ধানের শীষ পায়ের তলায় মথে দেই আর তারপরে একপা পেছনে সরে এসে আমার ভালোবাসার সাদা ঘোড়ার জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকি।
এমএসসি ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। আমি জানতাম যে আমার ফলাফল ভাল হবে, সেইজন্য আমার বিশেষ কোন চিন্তা ছিল না। আমি অন্য আরেক কারনে বেশ খুশি ছিলাম। আমি মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম যে আমি এই সোনার খাঁচা ছেড়ে উড়ে যাব। মনের মধ্যে যেন এক স্বচ্ছ মলয় বয়ে চলে।
সেদিন সকালে বাড়িতে কেউ ছিলনা, আমি মাকে ফোন করি, “মা, আমার পরীক্ষা শেষ, আমি তোমার কোলে ফিরে আসছি মা।”
মায়ের কোলে মেয়ে আবার ফিরে আসবে শুনে মায়ের গলা ধরে আসে, “হ্যাঁ রে পরী আমি তোর অপেক্ষা করে আছি রে। কতদিন তোকে দেখিনি, ফিরে আয় আমার কোলে।”
আমি, “হ্যাঁ মা, এবারে আমি তোমার কোলে আবার ফিরে আসব। আমি ওখানে থেকেই চাকরি খুজব মা।”
মা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “অভিমন্যুর কোন খবর পেলি কি?”
বুক ভরে শ্বাস নিয়ে উত্তর দেই, “না মা এখন আমার সাথে কোনোরকমের যোগাযোগ করেনি। কিন্তু আমার মন বলছে যে ও আমার কাছে ফিরে আসবে। আমি ওর জন্য অপেক্ষা করব মা, আমি জানি ও আসবে।” romantic golpo
মা, “ঠিক আছে, তুই কবে আসছিস?”
আমি, “এই কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই চলে আসব।”
মা, “একটা ভালো খবর আছে রে।”
আমি, “কি?”
মা, “কল্যাণীর বাচ্চা হবে।”
আমি খুব খুশি হয়েছিলাম ওই খবর শুনে। মায়ের সাথে কথা বলার পরে আমি কল্যাণীকে ফোন করি, “কিরে তুই নাকি মা হতে চলেছিস?”
কল্যাণীর গলা খুব ক্ষীণ, কিন্তু বেশ খুশি ছিল, “হ্যাঁ রে। এই দুমাস হল। আমি লাস্ট মেন্স মিস করেছিলাম, একটু চিন্তিত ছিলাম, কিন্তু ডাক্তার দেখানর পরে সব ঠিক হয়ে যায়।”
আমি খুব খুশি ওর খবর শুনে। আমি প্রায় চেঁচিয়ে বলি, “আমি ফিরে আসছি রে, আমি এবারে তোর পাশে থাকব আর তোকে দেখব, তোর কোন চিন্তা নেই।”
কল্যাণী, “আমি তোর জন্য অপেক্ষা করে আছিরে।”
আমি তারপরে তিস্তাকে ফোন করি, “কিরে মেয়ে কেমন আছিস।”
তিস্তা আমার গলা শুনে অবাক হয়ে যায়, “কি ব্যাপার বলো তো, বেশ আনন্দিত মনে হচ্ছে?”
আমি, “হ্যাঁ তা একটু খুশি। আমি এবারে গ্রামের বাড়ি ফিরে যাবো।” romantic golpo
তিস্তা আমার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়, “তুমি ফিরে যাবে, মানে? তুমি আর কোনদিন কোলকাতা আসবে না?”
আমি ওকে শান্তনা দিয়ে বলি, “আরে বাবা, আমি ফিরে যাচ্ছি তাঁর মানে এই নয় যে আমি এই জগত ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তোর সাথে আমার যোগাযোগ থাকবে ত, চিন্তা করছিস কেন?”
তিস্তা, “তোমার সাথে আমার এখুনি দেখা করতে ইচ্ছে করছে।”
আমি, “আমি কথা দিচ্ছি, গ্রামের বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে আমি তোদের সাথে দেখা করে যাব।”
ওর গলা ধরে এসেছিল, “সত্যি কথা দিচ্ছ ত?”
আমি, “হ্যাঁ রে বাবা, কথা দিচ্ছি।”
আমি ছোটমাকে জানাই যে আমি গ্রামের বাড়ি ঘুরতে যেতে চাই। ছোটমা মানা করেননি আমার আবদারে। আমি আমার আসল অভিপ্রায় ছোটমার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখি। আমি জানাই না যে আমি একবার বাড়ি ফিরে গেলে আর আসব না। আমি জানতাম যে আমি যদি ছোটমার কাছে থাকি, তাহলে ছোটমা আমাকে বিয়ে দিয়ে দেবে। আমি আমার ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা করতে পারব না।
প্রায় সাতশ তিরিশ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে আমি ওর গলার আওয়াজ শুনেছি। রোজ রাতে আমি একবার করে ওর “অপটিক্স নোটবুক” বার করতাম আর তার মধ্যে আমার মনের যাতনা, মনের আনন্দ লিখে রাখতাম। প্রত্যেক পাতায় আমি আমার লাল ঠোঁটের ছোঁয়া লাগিয়ে দিতাম, অনেক পাতায় আমার চোখের জলের দাগ পরে যায়। romantic golpo
ছিন্ন নাড়ির টান
ছোটমা মায়ের জন্য শাড়ি আর বাকি সবার জন্য বিভিন্ন উপহার কেনাকাটায় ব্যাস্ত হয়ে পরে। ছোটমা খুব খুশি, অবশেষে ছোটমা তাঁর কথা রেখেছেন। আমার মুখে হাসি দেখে ছোটমা বাবু দুজনেই অনেক আনন্দিত। আমার সেই হাসি মুখের পেছনের আসল উদ্দেশ্য আমি গোপন করে যাই। আমার জন্মদিন পরের মাসে, আর মাত্র দের মাস বাকি।
প্রতকে রাতে নিজেকে প্রশ্ন করতাম আমি, তুমি কবে ফিরবে? আমি আর থাকতে পারছিনা তোমাকে ছেড়ে। তোমার স্বপ্ন আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় প্রতি রাতে। আমি রাতে ঘুমাতে পারিনা, সারা রাত বিছানায় জেগে বসে থাকি, তুমি আসবে আর আমাকে ঘুম পারাবে। সেই প্রথম রাতের কথা আমার খুব মনে পরে, কি ঝগড়া না করেছিলাম দুজনে। সেই সকাল, উম, কি সুন্দর তারপরের দিনের সকাল। তুমি কোথায় আমার সাদা ঘোড়া, এবারে আমি তোমার পিঠে চেপে ঘুরব, আর আমি উড়তে চেষ্টা করব না।
একবার উড়তে চেষ্টা করে আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি। এবারে তুমি আমাকে তোমার পিঠে চড়িয়ে নিয়ে সেই ঢালাও প্রান্তরে ঘুরতে নিয়ে যাবে, সেই উঁচু উঁচু বিপিন দেবদারুর বনে, সেই পাইন কেদার গাছের তলায়। তোমার আলিঙ্গনে নিজেকে সঁপে দিয়ে শান্তিতে একটু ঘুমাতে চাই। romantic golpo
একদিন দেবব্রত আমাকে ফোন করে বলে যে আমার সাথে দেখা করতে চায়। আমি ওদের আমার বাড়িতে ডেকে নেই। সেদিন আবহাওয়া কেমন যেন একটু গুমোট ছিল। বাইরে যেন বাতাস ছিলনা। কয়েক ঘন্টা পরে তিস্তা আর দেবব্রত আমার বাড়ি পৌঁছে যায়। তিস্তা একটা সাধারন সুতির সালোয়ার পরে, আমি ওকে দেখে অবাক।
আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, “কিরে কি হয়েছে তোর?”
লাজুক হেসে দেবব্রতর দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “ও আমার জিন্স পরা পছন্দ করে না তাই সালোয়ার।”
আমি হেসে ফেলি তিস্তার লাজুক চেহারা দেখে, “বাপরে, প্রেম যেন উথলে পড়ছে।”
দেবব্রত আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, একটু পরে বলে, “এই দুই বছরে আমরা এত কাছাকাছি থেকেও আজ মনে হচ্ছে যেন আমি তোমাকে চিনি না। সত্যি বলোত তুমি কে? তুমি আমার চেয়ে বড় তাই একবার …”
আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, “কি বলতে চাস?”
দেবব্রত, “না থাক। তোমাকে দেখে আমি আমার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।” romantic golpo
দেবব্রতর গলা কথা বলার সময়ে ধরে এসেছিল। তিস্তা ওর পিঠে হাথ বুলইয়ে দেয়। তিস্তা আমার দিকে দেখে বলে, “সত্যি মিতা, তুমি আমাদের জন্য যা করলে। তোমাকে কি বলে কৃতজ্ঞতা জানাবো জানিনা। তোমাকে দেখে অন্য জগতের মেয়ে বলে মনে হয়। তোমাকে একটা খুব ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করতে পারি কি?”
আমি জানতাম কি সেই ব্যাক্তিগত প্রশ্ন, আতি আমি আগে থেকেই তিস্তাকে বারন করে দিলাম, “আমি জানি তুই আমাকে কি জিজ্ঞেস করবি। জিজ্ঞেস করিস না, আমি তাঁর উত্তর দিতে পারব না।”
দুজনে আমার উত্তর শুনে মাথা নাড়িয়ে বলে, “ঠিক আছে, জিজ্ঞেস করব না। শুধু উপরয়ালার কাছে প্রার্থনা করব যার জন্য তুমি এতদিন অপেক্ষা করে আছো, সে যেন তোমার কাছে ফিরে আসে।”
আমি জানি রে সে কথা, শুধু আমার সময় আমার সাথে নয়।
জুন মাসের মাঝামাঝি, গ্রীষ্ম কাল। আমি সকাল বেলার জলখাবার করতে রান্না ঘরে ব্যাস্ত ছিলাম। ছোটমা স্কুল ফেরত সেদিন আমাদের বাড়ি যাওয়ার কথা বলেছিলেন। আমি খুব খুশি ছিলাম যে মায়ের সাথে ছোটমার দেখা হবে। ফোন বেজে ওঠে।
ছোটমা ফোন ধরে আঁতকে ওঠে, “কি, কখন। না…”
আমি ছোটমা আঁতকে ওঠা শুনে দৌড়ে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে আসি। কার ফোন, কার কি হয়েছে, এইসব ভেবে মনের ভেতরে ভিতির সঞ্চার হয়। ছোটমা আমার দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলে। আমার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, ছোটমার চোখে জল দেখে।
আমি ছোটমার দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠি, “কার কি হয়েছে, ছোটমা?”
ছোটমা কোন উত্তর দেন না। কোনোরকমে কান্না চেপে ফোনে বলেন, “না, আমরা এখুনি আসছি। ওখানে থাক তোরা, আমি মেয়েকে নিয়ে শ্মশানে যেতে চাইনা রে।” romantic golpo
আমি ছোটমায়ের কথা শুনে তাঁর দিকে দৌড়ে যাই। ছোটমায়ের জল ভরা চোখ আর ঠোঁটের কাপুনি দেখে থেমে থাকতে পারিনা। ছোটমা ফোন ছেড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বাবুকে তাড়াতাড়ি একটা গাড়ির ব্যাবস্থা করতে বলেন। আমি বুঝে উঠতে পারিনা কার কি হয়েছে। বাবু ছোটমায়ের কথা শুনে থমকে দাঁড়িয়ে কারন জিজ্ঞেস করেন।
ছোটমা আমার মাথা বুকে চেপে ধরে বাবুকে বলেন, “মাসিমা… তাড়াতাড়ি একটা গাড়ি ডাকো তুমি।”
ছোটমায়ের মুখে “মাসিমা” শুনে আমি পাথর হয়ে যাই। আমি চোখ বুজে ফেলি, সারা পৃথিবী আমার চোখের সামনে দুলতে শুরু করে দেয়। আমি ছোটমায়ের কোলে মুখ গুঁজে পরে যাই, তারপরে আর কিছু মনে নেই আমার।
চোখ খুলে দেখি আমি আমার বিছানায় শুয়ে। মাথার কাছে তিস্তা আর দেলিসা। আমি ওদের দেখে পাথর হয়ে যাই। তিস্তা কোনরকমে আমাকে কাপড় পড়িয়ে দেয়। দানিস গাড়ি নিয়ে আসে। আমাকে ধরে ধরে গাড়িতে উঠায়। দুজনে আমার দুপাশে বসে থাকে। মায়ের সেই দুঃসংবাদ আমাকে পাথর করে দেয়।
গাড়ি থেকে নেমে দেখি, আমার মা, অন্তিম শয্যায় শুয়ে আছে উঠানে, তুলসিতলার পাশে। মাথার কাছে বড়দা বসে। সাদা শালুর কাপরে ঢাকা আমার মা। কষ্টে আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুকে যেন কেউ পাথর বসিয়ে দিয়েছে, সেই বিশাল পাথরের নিচে আমার কান্না, আমার কষ্ট আমার বেদনা সব কিছু চাপা পরে যায়। আমি সেই পাথর সরাতে পারিনা, কাঁদতে পারিনা।
আমার ছোটো বৌদি, মৈথিলী সেই এগারো দিন আমার কাছে ছিল, এক মুহূর্তের জন্যেও আমার পাশ ছাড়েনি সে। আমাকে খাওয়ান, আমাকে দেখা সব কিছু ভার সে একা নিয়ে নেয় নিজের হাথে। আমার ভগ্ন হৃদয় জোড়া লাগাতে চেষ্টা করে কিন্তু আমার হৃদয় ততদিনে ভেঙ্গে শত টুকরো হয়ে যায়, কুড়িয়ে কুড়িয়ে সব টুকরো একত্র করে উঠতে পারেনা মৈথিলী। সে এগার দিন আমি নিজেকে আমার ঘরে বন্দিনী করে রাখি। romantic golpo
এগার দিনের কাজে আমার সব আত্মীয় সজ্জন আসেন। ইন্দ্রানিদি, চন্দ্রানিদি আমাকে এসে বলেন যে আমি সব থেকে ভালো হাথে আছি, আমার ছোটমা আর বাবু সর্বদা আমার জন্য আমার পাশে থাকবে। কিন্তু আমি কেউ জানত না যে আমি শুধু মাত্র এক বন্দিনী রাজকুমারীর জীবন জাপন করি সেই সোনার খাঁচায়। আমি জানতাম আমাকে ফিরে যেতে হবে সেই সোনার খাঁচায়, চিরদিনের মতন। আমার নাড়ি ছিঁড়ে গেছে।
দমদমের বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগের দিন বিকেল বেলা আমি একা একা বাড়ির পেছনের বাগানে যাই। সেই আম গাছের কাছে গিয়ে দাড়াই। একটা আমের প্পল্লব তুলে নিয়ে রুমালে বেঁধে নেই। সেই গাছের তলা থেকে এক মুঠ মাট নিয়ে আম পল্লবের সাথে রুমালে বাঁধি।
আমি ওর পোঁতা আম গাছ জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলি, “অভিমন্যু, তোমার পরী আজ মারা গেল।” romantic golpo
কিছু দিন আগে পর্যন্ত যে আশার আলো দেখেছিলাম, সেই ক্ষীণ আশার আলো আমার মায়ের সাথে নিভে যায়। এই বাড়ির সাথে, আমার গর্ভধারিণীর সাথে সাথে নাড়ীর টান ছিন্ন হয়ে যায়। আমি ছোটমা আর বাবু পোষা তোতাপাখি, তাঁরা যা বলবেন এবার থেকে আমাকে তাই করতে হবে, তাঁরা যা করবেন সেটাই ঠিক। অনন্ত সাগর তীরে নিজের অজানা ভাগ্যের হাথে নিজেকে সঁপে দিয়ে আমি একাকী দাঁড়িয়ে থাকি।
====== প্রথম অধ্যায়ের সমাপ্তি ======
খুব ভালো হয়েছে।সামনের পর্বে অভিকে পাশে চাই
সম্ভব না আগামী ১৫ পর্বেও। বিশাল গল্প
Vai porer golpo gulo koi pabo
ভাই এর পরের গল্প গুলো কই পাবো