love story মধ্যরাত্রে সূর্যোদয় 5 – সাদা ঘোড়ার রুপকথা

bangla love story choti. সামনে গরমের ছুটি। একদিন রাতে খাওয়ার সময়ে ছোটমা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “আমি ভাবছিলাম এই গরমের ছুটিতে কোথাও বেড়াতে গেলে ভালো হয়, এই কোন পাহাড়ি জায়গায়। পরী কোথায় যেতে চাস, বল?”

আমি বড় শ্বাস নিয়ে উত্তর দিয়েছিলাম, “আমি কোন পাহারে ঘুরতে যেতে চাই না।”

বাবু আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “কেন, তুমি ত পাহাড় ভালোবাসো, হটাত কি হল?”

আমি সত্যি পাহাড় ভালোবাসি, আর সেই পাহাড় ওই আমাকে চিনিয়েছিল। সাথে যদি ভালোবাসার লোক না থাকে তাহলে পুস্প শয্যাও কণ্টকময় হয়ে ওঠে। আমি বাবুকে উত্তর দিয়েছিলাম, “আমি ভাবছিলাম গরমের ছুটিতে মায়ের কাছে যাবো।”

ছোটমা মাথা নেড়ে বলেন, “ঠিক আছে এই বার না হয় তুই গ্রামের বাড়ি যা, কিন্তু পরের বছর আমরা সবাই মিলে কোন পাহাড়ে বেড়াতে যাবো, এই ধর নৈনিতাল বা কৌসানি।”

love story

আমি মনের ব্যাথা লুকিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “আমাকে কি পরের বছর তোমাদের সাথে যেতেই হবে?”

আমি মজা করে বলি, “তোমাদের বয়স হয়েছে, তোমরা এখন ঘুরতে যাও একা একা।”

বাবু বললেন, “তুমি এখন আমাদের একমাত্র সন্তান, তোমাকে একা ছেড়ে কি করে যাই?”

বাবুর কি গলা ধরে এসেছিল সেই কথা বলার সময়ে, হয়ত হ্যাঁ, ঠিক বুঝতে পারিনি আমি। বাবু, “তুমি যদি আমাদের সাথে না যেতে চাও তাহলে আমরা কোথাও যাবো না।”

ডাইনিং টেবিলের আবহাওয়া কেমন ভারী হয়ে ওঠে ঘুরতে যাওয়ার কথা বার্তা নিয়ে। আমি ওকে ছাড়া পাহাড়ে ঘুরতে যাবার ইচ্ছে নেই, ওদিকে বাবু আর ছোটমা আমাকে ছাড়া ঘুরতে যাবেন না।

আমি শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া সামাল দিয়ে বলি, “ঠিক আছে ছোটমা, পরের বছর আমরা সবাই মিলে কোথাও ঘুরতে যাবো।” love story

ছোটমা আমার মুখে হাসি দেখে খুশি হন। আমি ছোটমায়ের কাছে আব্দার করি, “ছোটমা আমার একটা ওয়াকম্যান চাই।”

বাবু আদর করে বললেন, “ওয়াকম্যান কেন সোনা মা, ওয়াকম্যান অনেক ছোটো। তোমার গান শুনতে ইচ্ছে হলে আমি তোমাকে পরের জন্মদিনে একটা হাজার ওয়াটের সোনির একটা বড় মিউসিক সিস্টেম কিনে দেব।”

আমার মনে হয়েছিল যেন বাবু কে জড়িয়ে ধরে টাকে চুমু খাই। বাবু বুঝে যান আমার মনের কথা আর হেসে ছোটমাকে বলেন, “দেখেছ আমার মেয়ে আবার হাসছে।”

দিনে দিনে আমার খুশি যেন বেড়ে চলে, একদিকে ওর কাছ থেকে সংবাদ পাওয়ার আশায় একদিকে ছোটমায়ের কাছে পাওয়া ভালোবাসা আর স্বাধীনতার জন্য। দিন যায়, কিন্তু ওর কাছ থেকে কোন সংবাদ আসে না। আমি আশা ছেড়ে দেই না, বুকে আশা বেঁধে রেখেছিলাম ও যখন বলেছে তখন একদিন না একদিন কোন সংবাদ নিশ্চয় আসবে।

গরমের ছুটিতে বাবু আমাকে গ্রামের বাড়িতে দিয়ে আসেন। বাবু বলেন যে অনেকদিন বাবু আমাদের গ্রামের বাড়িতে যায়নি তাই একবার মায়ের সাথে দেখা করতে চান। বাবু আমাকে খুব ভালবাসতেন কিন্তু বাবুর সাথে যেতে হবে শুনে কেমন মনে হয়, কেননা মাঝে মাঝে বেশ ভয় করতাম বাবুকে। সারা রাস্তা গাড়িতে বাবু খুব চুপচাপ ছিলেন। আমি বাবুর গম্ভীর মুখ দেখে অনুধাবন করতে চেষ্টা করি যে মনের মাঝে কি চলছে কিন্তু পেরে উঠিনা। love story

বিকেল বেলায় আমরা গ্রামের বাড়ি পৌঁছাই। মা বাবুকে দেখে অবাক হয়ে যান, সাধারণত আমাকে ছাড়তে ছোটমা আসেন। বাবুকে দেখে মা তৎপর হয়ে ওঠেন কি করে কি করবেন। বাবুর আগমনে বাড়ি যেন মুখর হয়ে ওঠে। মৈথিলী আর মেঘনা বৌদি কি করে বাবু কে অভ্যর্থনা জানাবে ঠিক করে উঠতে পারে না। আমি ওদের তৎপরতা দেখে আনন্দ পেয়েছিলাম।

আমি মাকে বলেছিলাম, “মা, এত তৎপর হয়ে উঠছ কেন, ইনি আমার বাবু, তুমি যেমন রাখবে সেই রকম থাকবেন।”

মা বলেন, “না তোর বাবু অনেক বড়লোক।”

আমি, “আমি জানি মা।”

মা, “তোর বাবু অনেক দিন পরে আমাদের বাড়ি এসেছেন।”

বাবু মা’কে দেখে বললেন, “আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

বাবুর কথা শুনে হটাত করে আমার চেহারার রক্ত উবে যায়। আমি বাবুর দিকে কাতর চোখে তাকিয়ে বলতে চেষ্টা করি, “বাবু দয়া করে আমার জীবন নরক বানিয়ে দিও না।” love story

আমি মায়ের হাত চেপে ধরে কানে কানে জিজ্ঞেস করি, “মা তোমরা কি নিয়ে কথা বলবে?”

মা আমাকে আসস্থ করে বলেন, “চিন্তা করিস না, তোর বাবু তোর ভালর জন্যই এসেছেন।”

মা সুমন্তদা আর শশাঙ্কদা কে ডেকে নিয়ে ঘরে চলে যান।

মেঘনা বৌদি আর মৈথিলী বাবুকে অরুনয় করে বলে, “কাল সকালেও ত কথা বলা যেতে পারত।”

বাবু বলেন, “না মায়েরা। এটা আমার শ্বশুর বাড়ি, এখানে ত আমি রাত কাটাব না।”

বাবুর কথায় মা একটু আহত হয়ে বলেন, “অর্জুন, ওই কথা বলো না। আমরা কাল সকালেও কথা বলতে পারি।”

বাবু বললেন, “কাল সকালে আমার কিছু কাজ আছে তাই আজ রাতেই আমাকে বাড়ি ফিরে যেতে হবে।”

সবাইকে নিয়ে ঘরে ঢুকে পড়েন বাবু। আমার বুকের মাঝে ঝড় শুরু হয়ে যায়। বাবু কি শেষ পর্যন্ত আমার বিয়ের কথা বলতে এসেছেন না মাকে আমাদের সম্পর্কের কথা জানাতে এসেছেন। আমি আমার ব্যাগ নিয়ে আমার ঘরে চলে যাই। বিছানার ওপরে চুপ করে বসে থাকি, জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখি সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। love story

এমন সময়ে মৈথিলী দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়, “আমি ভেতরে আসতে পারি?”

অনেক অনেক দিন পরে মৈথিলী আমার সাথে সেই প্রথম কথা বলেছিল। আমি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে ওকে ঘরের মধ্যে আসতে বলি। আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, “কেমন আছো?”

মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, “আমি ভালো আছি, তুমি তোমার খবর বল?”

আমি আমার মনের ভাব লুকিয়ে উত্তর দিয়েছিলাম, “আমার খবর খুব ভালো, কলেজ ভালো চলছে, পড়াশুনা ভালো চলছে।”

মৈথিলী আমার পাসে বসে আমার গালে হাথ দিতে জিজ্ঞেস করে, “আমি তোমার কলেজের কথা জিজ্ঞেস করছিনা পরী।”

আমি ওর মুখের দিকে তাকাই। ওর চোখে সেই পুরানো অপমানের প্রতিশোধের ছায়া ছিলনা, সেই চোখে কেমন এক মমতা মাখা ছিল। ওর চোখের চাহনি আমার সব ব্যাথা ভুলিয়ে দিয়েছিল, আমার বুক কেঁপে উঠেছিল আনমনে।

আমি ওকে কম্পিত স্বরে জিজ্ঞেস করি, “কি জানতে চাও তুমি?”

গালে হাত বুলিয়ে আদর করে মৈথিলী, ওর হাতের ছোঁয়ায় যেন গলে গিয়েছিলাম আমি। আমাকে জিজ্ঞেস করে, “ও কেমন আছে?”

আমি ওকে উত্তর দিয়েছিলাম, “ভালোই আছে, আজকাল দিল্লীতে চাকরি করছে।” love story

আমি উত্তর দিয়েছিলাম বটে, মন জানত যেখানেই থাক, ভালো যেন থাকে। সেই সময়ে আমি মৈথিলীর আচরনে বিশ্বাস করে উঠতে পারিনি, কি চায় ও, সেটা বুঝে উঠতে পারিনি। মৈথিলী কি আমার সাথে আবার কোন খেলা খেলছে? আমরা দুজনে অনেক গল্প করেছিলাম, প্রায় এক বছর পরে আমরা দুজনে প্রান খুলে কথা বলেছিলাম। অনেক কথা হয়েছিল, কিন্তু আমি নিজের বুকের ব্যাথা ওর সামনে মেলে ধরতে পারিনি ওর সেই পুরাতন আচরনের কথা ভেবে।

কিছু পরে মা আমাকে ডাক দিয়ে বলেন যে বাবু বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আমি নিচে এসে দেখি যে বাবুর খাওয়া শেষ। বাবু আমাকে জানালেন যে গরমের ছুটির পরে ছোটমা এসে আমাকে নিয়ে যাবে। আমি বাবুকে পায় হাথ দিয়ে প্রনাম করি।

আমি বাবুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “তুমি মাকে কি বলেছ?”

বাবু আমার মাথায় হাত রেখে বলেন, “যা কিছু বলেছি, সেটা তোমার ভালোর জন্যে বলেছি। তোমার মা তোমাকে সব কিছু বুঝিয়ে বলে দেবে, চিন্তা করোনা।”

রাতের খাওয়ার পরে মা পান নিয়ে বসেছিলেন, আমি মায়ের কাছে এসে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “মা বাবু কি বলে গেলেন?”

মা পান মুখে দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “তোর বাবু তোকে খুব স্নেহ করেন তাই না?”

আমি মাথা নাড়াই, “হ্যাঁ তা করেন।” love story

মা, “অর্জুন জানতে চেয়েছিলেন যে আমাদের বাড়ির ভাগ করা হয়েছে কি না, আর সেই ভাগের মধ্যে তোর কোন ভাগ আছে কি না।”

মায়ের কথা শুনে আমার মাথা গরম হয়ে যায় প্রথমে, বাবু কি চান, বাবু ত আমার বাবা নন যে আমাদের বাড়ির ভাগে আমার অংশ আছে কি না জানতে চাইবেন। আমি মনের রাগ লুকিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “বাড়ির অংশ নিয়ে বাবু কি করবেন?”

মা বলেন, “অর্জুন জানাতে এসেছিলেন যে, তোর অংশ বিক্রি করে সব টাকা তোর নামে ফিক্সড ডিপসিট করে দিতে চান, যাতে ভবিষ্যতে তোর পড়াশুনা বা বিয়ের পরে তোর কাজে লেগে যায়। তোর ভবিষ্যতের কথা ভেবেই অর্জুন এই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভেবেছেন।”

আমার বুকের ওপরে থেকে যেন একটা বিশাল পাথর সরে যায়। মাঝে মাঝে ছোটমা আর বাবুকে বুঝতে বড় কষ্ট হয় আমার, সত্যি কি দিয়ে তৈরি এই দুজন মানুষ, হয়ত সব বাবা মা তার সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ঠিক এই রকম চিন্তা করে থাকেন, কিন্তু…?

আমি আমার ঘরের দিকে পা বাড়ালাম, ঠিক সেই সময়ে দুষ্টু আমার ঘরে ঢুকে পরে। আমার দিকে একটু অভিমান ভরে তাকিয়ে থাকে। আমি ওর গালে আদর করি। আমার ওপরে যেন ওর অভিমান কমেনা, আমাকে জিজ্ঞেস করে, “অভি কাকু কেন আসেনি?”

আমি ওর চুলে বিলি কেটে উত্তর দিয়েছিলাম, “ও বাঃবা, সেই জন্য এত রাগ।”

দুষ্টু, “হ্যাঁ আমি তোমার ওপরে রেগে আছি। আমি তোমার সাথে কথা বলব না।” love story

আমি হেসে ওকে জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে নিয়ে বলেছিলাম, “এত রাগতে নেই। আমিও ভালো ভালো রাজা রানীর গল্প জানি।”

দুষ্টু শিশুসুলভ গলায় আমাকে বলে, “রাজা রানীর গল্প আমি জানি, আমি নতুন গল্প শুনতে চাই।”

আমি নিজের মনকে শান্তনা দিয়েছিলাম, আমিও যে নতুন গল্প শুনতে চাই দুষ্টু। আমি কি করে তোর অভি কাকুকে তোর কাছে নিয়ে আসি বলত, আমি নিজেই যে ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।

পরদিন সকালে আমি কল্যাণীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। আমি কল্যাণীর কাছে সেই “অপটিক্স নোটবুক” ফিরে চেয়েছিলাম। কল্যাণী আমাকে দেখে অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে, “তুই কবে এলি বাড়িতে? তোকে দেখে অনেক আলাদা লাগছে এবারে, কি ব্যাপার অভিমন্যুর খবর পেয়েছিস নাকি?”

আমি খুশিতে নেচে উঠেছিলাম প্রায় আমি কি বলে ওকে আমার মনের ভাব বুঝাব সেটা ভেবে পাইনা। আমি সংবাদ পেয়েছিলাম যে ও আমার সাথে কোন ভাবে সম্পর্ক করবে। আমি ওর হাত দুটি ধরে একটু নেচে উঠে বলি, “আমি রিতিকাকে ফোন করেছিলাম। ও রিতিকাকে ফোন করে জানিয়েছে যে বাবুর কথা এক বিন্দুও বিশ্বাস করেনি। ও আমার সাথে কিছু করে হোক সম্পর্ক করবে। আমি খুব খুশি জানিস আমার খুব নাচতে ইচ্ছে করছে। ও যে আমার ওপরে বিশ্বাস হারায়নি সেটা যেনে আমি খুব আনন্দিত কল্যাণী।” love story

কল্যাণী আমার কথা শুনে খুব আনন্দিত হয়েছিল। ওর চোখ দুটি চকচক করে উঠেছিল।

কল্যাণী, “হ্যাঁরে শয়তান মেয়ে, তুই খুব ইমসানাল। সত্যি তোর জীবন দেখে মনে হয় যেন এক বিশাল ঘূর্ণিবার্তা।”

আমি ওর হাথ থেকে “অপটিক্স নোটবুক” নিয়ে বুকের ওপরে চেপে ধরেছিলাম। মনে মনে ওই পাতার প্রত্যেক অক্ষর বুকের রক্তের সাথে মিলিয়ে নিতে চেয়েছিলাম আমি। কল্যাণী আমাকে জিজ্ঞেস করে, “তুই এই ডায়রি নিয়ে কি করবি?”

আমি ওকে জানাই, “আজ থেকে আমি এই ডায়রি লিখব, আমার কথা লিখব।”

সেইরাত থেকে আমি আমার কথা লেখা শুরু করি। ও ইংরাজিতে ভালো, আমি বাংলায় আমার মনের কথা লিখতাম। ও চলে জোয়ার পরে আমার দিন দমদমের বাড়িতে কেমন কেটেছে সেই সব লিখতাম। কেমন আমার কলেজের দিন কেটেছে সেইসব স্মৃতি লিখেছিলাম আমি। সারা রাত জেগে আমি গত এক বছরের সব স্মৃতি লিখে ফেলি আমি। প্রত্যেক বাক্যের পরে আমি নিজেকে বলেছিলাম যে যখন আমাদের বয়স হবে তখন আমরা দুজনে মিলে এই ডায়রির পাতা একসাথে বসে পড়ব।

লিখতে লিখতে আমি আমার টেবিলের অপরেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সকালে দরজায় একটা টোকা শুনে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি চোখ খুলে দেখি যে আমি টেবিলে শুয়ে। তাড়াতাড়ি করে ডায়রি আমি লুকিয়ে ফেলেছিলাম। আমি চাইনি কেউ আমার মনের কথা জেনে ফেলুক আর আমাদের ভালোবাসার মাঝে এক নতুন বাঁধা হয়ে আসুক। love story

পার্বতী বৌদি চলে যাবার পরে সুমন্তদা একদম অন্য মানুষ হয়ে গিয়েছিলেন। খুব কম কথা বলতেন দাদা। দাদার কোন সন্তান ছিল না তাই ছোটবেলা থেকে দাদার সব ভালোবাসা দুষ্টুর ওপরে কেন্দ্রীভূত ছিল। প্রত্যেক দিন বিকেলে মাঠের থেকে ফেরার সময়ে সুমন্তদা দুষ্টুর জন্য ফল নাহয় মিষ্টি নিয়ে ফিরতেন। মাঝে মাঝে কাঁধে করে নিয়ে ঘুরে আসতেন মাঠের দিকে।

একরাতে আমি আমার ঘরে বসে কলেজের পড়াশুনা করতে ব্যাস্ত ছিলাম সেই সময়ে দাদা আমার ঘরে এসে ঢোকেন। দাদার হাতে একটা কাঠের বাক্স। আমি সেই বাক্স চিনতে পেরে যাই, বড় বউদির গয়নার বাক্স।

আমি দাদাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “এটা কি?”

দাদা আমকে বলেন, “তোর বৌদি এটা তোকে দিতে বলেছিলেন।”

আমার কাছে এসে আমার মাথায় হাত রাখে দাদা, চোখের কোলে জল এসে গিয়েছিল দাদার, নজর লুকিয়ে জল মুছে আমার হাথে ওই বাক্স ধরিয়ে দেন।

আমি অনাকে জিজ্ঞেস করি, “তুমি খুব ক্লান্ত দাদা, তুমি এখন কি করবে?”

দাদা মাথার ওপরে ঘুরন্ত পাখার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলেন, “জানিনা এখন তবে একটা কিছু ভেবে রেখেছি, তোর বিয়ের জন্য অপেক্ষা করছি তারপরে দেখি কি করি।”

আমি দাঁতে পেন ধরে দাদার দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি যে দাদা কি করবেন, বাঁ কি ভেবে রেখেছেন নিজের জন্য। love story

দিন যায়, প্রায় প্রত্যেক দিন মা আমাকে ওর কথা জিজ্ঞেস করে। একদিন আমি আর থাকতে না পেরে মাকে জিজ্ঞেস করি মা এত কেন বিচলিত ওকে নিয়ে। মা উত্তর দিয়েছিলেন, “কেন আমি ওর জন্য চিন্তা করতে পারি না? আমার নাতি হয়। কিন্তু একটা কথা আমি বুঝতে পারছিনা, যত বার আমি ওর কথা তোকে জিজ্ঞেস করি ততবার তুই আমার প্রশ্ন এড়িয়ে যাস, কেন বলত? সত্যি করে বল, অভি কোথায় আছে?”

আমি মায়ের দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে উত্তর দিয়েছিলাম, “ও এখন দিল্লীতে চাকরি করে।”

আমি খুব বিরক্ত বোধ করতাম যখন কেউ আমাকে বারে বারে ওর কথা জিজ্ঞেস করত। আমি কি করে জানব আমার ভালোবাসা কোথায়, আমি নিজেই ওকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াই আমার চারপাশে।

মা আমকে বললেন, “অনেক দিন ছেলেটার গলার আওয়াজ শুনিনি, মন কেমন করে ওঠে আমার। একবার ফোন করে দেখ না ওকে, আমি একটু কথা বলব?”

আমি ধন্ধে পরে গিয়েছিলাম, কি বলব মাকে, ধিরে ধিরে মায়ের দিকে জল ভরা চোখে তাকাই। মায়ের তীক্ষ্ণ নজর আমার হৃদয় ভেদ করে দেয়। আমি মনের মধ্যে সাহস সঞ্চয় করে উত্তর দিয়েছিলাম, “আসলে, মা, ও এখন দেশের বাইরে।”

আমার বিচলিত চোখমুখ দেখে মা আমার গালে হাত দিয়ে বলেন, “তুই সত্যি বলছিস না আমার কাছে কিছু লুকিয়ে রাখছিস।”

আমি প্রায় কেঁদে ফেলি, কিন্তু মন শক্ত করে নিয়ে উত্তর দিয়েছিলাম, “না মা, আমি সত্যি কথা বলছি। পরের বার আমাকে যখন ফোন করবে আমি ওকে জানিয়ে দেব তোমাকে ফোন করতে।”

আমি সেইদিন জানতাম না, যে আদৌ ও আমার সাথে আর কোনদিন কথা বলবে কি না। আমি জানতাম না কি করে আমার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে চলেছে। আমার সব থেকে বড় ভয় মায়ের প্রতিক্রিয়া কি হবে যখন মা জানতে পারবেন আমাদের ভালোবাসার সংবাদ, আমার মা কি আমাদের সম্পর্ক মেনে নেবেন না ছোটমায়ের মতন আমার ভালোবাসা প্রত্যাখান করে দুরে সরিয়ে দেবেন। love story

এই সময়ে ও যদি আমার কাছে থাকত, তাহলে নিশ্চয় কিছু না কিছু উপায় ভেবে আমাকে সাহায্য করত, কিন্তু বিধি যে বাম, ও যখন আমার পাশে নেই তখন আমাকেই ওর মতন ভেবে কাজ করতে হবে। আমার প্রশ্ন একটু ঘুরিয়ে করতে হবে যাতে আমি মায়ের মনের ভাব বুঝতে পারি। বুকের মাঝে দুকদুক করতে শুরু করে, আমি মাকে জড়িয়ে ধরি দুহাতে।

মা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “কিরে তুই কি আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাস?”

আমি মাথা নাড়িয়ে বলেছিলাম, “হ্যাঁ মা।”

মা আমার মুখের পানে চেয়ে জিজ্ঞেস করেন, “তোর বাবুর সাথে অভিমন্যুর কি কোন কথা কাটাকাটি হয়েছে?”

মায়ের মুখে সেই প্রশ্ন শুনে আমি থমকে যাই, সত্যি তাহলে কি বাবু মাকে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছে?

বুকের মাঝে হৃদপিণ্ড যেন থমকে দাঁড়িয়ে পরে, আমি মাকে জিজ্ঞেস করি, “এই রকম প্রশ্ন কেন জিজ্ঞেস করছ?”

মা, “অর্জুন কে আমি অভিমন্যুর কথা জিজ্ঞেস করাতে, তোর বাবু আমাকে ঠিক করে উত্তর দিল না। শুধু মাত্র আমাকে বলে যে অভি দিল্লীতে চাকরি করতে গেছে।”

আমি শ্বাস রুদ্ধ করে মায়ের কথা শুনি, কান লাল হয়ে ওঠে আমার। মনের উত্তাল তরঙ্গ কোন রকমে চেপে আমি মায়ের প্রশ্নের উত্তর দেই, “না মা, বাবুর সাথে ওর কোন ঝগড়া হয়নি। গ্রাজুয়েশানের পরে দিল্লীতে চাকরি খুঁজতে চলে গেছে।” love story

মুখে পান নিয়ে মা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “কিন্তু কোলকাতায় চাকরি করতে পারত, দিল্লী কেন যেতে গেল?”

আমি মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম, “ওসব তুমি বুঝবে না মা। কোলকাতায় কোন আইটি কম্পানি নেই তাই দিল্লী গেছে চাকরি খুঁজতে।”

আমার গালে হাত বুলিয়ে মা জিজ্ঞেস করেন, “তুই আমাকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করবি বলছিলি?”

আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমি কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম, আমি এমনি মাকে জিজ্ঞেস করি, “মা ও তোমাকে শেষের দিনে কি বলে গেছিল?”

মা ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “সে কথা তুই জেনে কি করবি?”

আমি মাথা নিচু করে নিয়েছিলাম, বুকের মাঝে ধুকধুক করে ওঠে প্রবল ভাবে। মা আমার চিবুকে হাত রেখে মাথা উঁচু করে ধরেন নিজের দিকে, আমি নিজের চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলাম, চোখের পাতা জলে ভিজে গিয়েছিল। মা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “সত্যি করে বলত আমায়, অভি শুধু মাত্র চাকরির খোঁজে দিল্লী চলে যায়নি তাই তো।” love story

সাদা ঘোড়ার রুপকথা (#02)

বুকের মাঝে সযত্নে লুকিয়ে রাখা বাঁধ ভেঙ্গে যায়, বুক কাঁপিয়ে কান্না বেড়িয়ে আসে চোখের কোল থেকে। মায়ের চোখের আড়াল করে কোন সন্তান তাঁর দুঃখ লুকিয়ে রাখতে পারে না। আমি ঠোঁট চেপে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করি, কিন্তু আমার বুকের বেদনা ধরে রাখতে পারিনা আমি। আমি উন্মুখ হয়ে ছিলাম মায়ের মতামত জানার জন্য। মা আমার মাথায় হাত স্পর্শ করেন আমি মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলি। আমার বুকের কান্না মায়ের কাছে আমার ব্যাথার কাহিনী ব্যক্ত করে দেয়। মা চুপ করে থাকেন, আমি কাঁদতে থাকি। মা আমাকে সেইরাতে নিজের কাছে শুতে বলেন। আমি মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরি।

মা আমার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলেন, “জগতের অনেক কিছু আছে যে গুলো মেনে নেওয়া অসম্ভব। আমি সর্বদা তোর হাসি মুখ দেখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেই খুশি যে এইরকম ভাবে আমার সামনে এসে দাঁড়াবে আমি ভাবতে পারিনি। আমাদের সমাজে অনেক নিয়ম কানুন আছে, তাঁর মধ্যে অনেক কিছু আছে যে গুলো সমাজ মেনে নিতে পারেনা।”

আমি কেঁদে জিজ্ঞেস করি, “আমি কি করব মা?”

মা, “সময়ের ওপরে ছেড়ে দে, পরী। সময় বড় বলবান।”

আমি ডুকরে কেঁদে উঠেছিলাম, “কেন মা কেন? আমার জীবনে আজ পর্যন্ত যা এসেছে তাই আমি মুখ বুজে মেনে নিয়েছি, আমি তোমাকে বা দিদিদের কোনদিন প্রশ্ন করিনি যে কেন তোমরা আমাকে ঠিক ভাবে দেখনি।”

বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে মা উত্তর দেন, “পরী, আমাকে কিছু সময় দে ভাবার জন্য। এখুনি আমার মাথায় কিছু কাজ করছে না, আমার কিছু সময় চাই।” love story

আমি প্রায় বুক ফাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিলাম, “না মা, আমি এখুনি জানতে চাই যে আমি এখন কি করব?”

মা আমাকে শান্ত করে পাশে শুয়ে পড়েন। বিছানার একপাসে আমি, অন্য পাশে মা। সারা রাত আমি ঘুমাতে পারিনি। মায়ের কাছেও আমাদের সম্পর্কের কথা আর লুকিয়ে থাকে না। আমি ভেবে কুলকিনারা পাইনা যে মায়ের উত্তর কি হবে, মা কি মেনে নেবেন আমাদের সম্পর্ক না মা ছোটমায়ের মতন এবারে আমাকে বহিস্কার করে দেবেন। সারা রাত মা ঘুমাতে পারেন না, সারা রাত দুজনে ঘুমানোর ভান করে নিজের নিজের চিন্তায় ডুবে ছিলাম।

সকাল বেলার রোদ পুব আকাশে উঁকি মারে। মা আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে বললেন, “তুই সারা রাত ঘুমোস নি।”

আমি শান্ত গলায় বলি, “কি করে ঘুম আসে, মা।”

মা বিছানায় উঠে আমার দিকে ফিরে বললেন, “আমার মনে হয়, তোর ছোটমা আর বাবু এই ঘটনায় খুব মর্মাহত হয়েছেন। তারা দুজনেই অনেক রেগে আছেন এখন।”

দুরে আম গাছের বাগানের পেছন থেকে নবীন ঊষার আলো উঁকি দিচ্ছে। মা বললেন, “আগে তোর এমএসসি শেষ হোক, অভিমন্যু তোর সাথে যোগাযোগ করুক। আমাকেও কিছু সময় দে আর তোর ছোটমা আর বাবুকেও কিছু সময় দে। সময় যে বড় বলবান, সব ঘায়ের মলম সময়। সময়ের সাথে সাথে সবার রক্ত, সবার রাগ কমে আসবে। তুই ও বুঝতে পারবি তোরা কি করেছিস, তোর ছোটমাও বুঝতে পারবে ধিরে ধিরে। তোর ছোটমা, তাঁর একমাত্র ছেলেকে এই পৃথিবীর বুকে ছেড়ে দিয়েছে, তাঁর বুকের বেদনা একটু বুঝতে চেষ্টা করে দেখ, তুই যাতে বড় হতে পারিস সেই জন্য তোর ছোটমা এই সব করেছে। সঠিক সময়ে সব কিছু সঠিক হবে।” love story

আমি শান্ত গলায় উত্তর দেই, “ছোটমা আর বাবু আমাকে খুব ভালবাসে আর সেই কথা আমি মনে প্রানে জানি। কিন্তু আমার মন রাখার জন্য ছোটমা কোনদিন নিজের আত্মসন্মান বলিদান দেবেন না।”

বুকের মাঝে ধরে রাখা এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মা আমাকে বলেন, “পরী, সময়ের চেয়ে বলবান কোন ওষুধ আজ পর্যন্ত জগতে নেই। সময় সব ব্যাথা বেদনার মলম, সেটা মনের হোক বা শরীরের হোক। আমাকে কথা দে, যে তোর এমএসসি শেষ হওয়া পর্যন্ত তুই এই নিয়ে কারুর সাথে কোন কথা বলবি না। আমরা আমাদের ভবিতব্য বদলাতে পারিনা পরী, কিন্তু চেষ্টা করে দেখতে পারি। তোর এমএসসি শেষ হোক আগে, অভি দেশে ফিরে আসুক। অভিকে আমার সাথে দেখা করতে বলিস, তারপরে আমি দেখি কি করতে পারি।”

আমি মাকে দুহাতে প্রাণপণে জড়িয়ে ধরেছিলাম, শেষ পর্যন্ত আমার মা আমাদের ভালবসার প্রতি বিরূপ না হয়ে মেনে নেন, সেটাই আমার সব থেকে বড় সম্বল ছিল। মা আর আমি দুজনেই কেঁদে ফেলেছিলাম। মা আমাকে বললেন, “আমার সেদিন বুঝে নেওয়া উচিত ছিলরে, ওইদিন পুজোর ঘরে আমার কাছে আমার খেলার পুতুল চেয়েছিল।”

আমার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে হেসে বলেন, “এবারে খুশি? এবারে হাস, আর কথা দে পরশুনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই কথা আর মুখে আনবি না।”

আমি সেদিনের পর থেকে অনেক খুশি, আমার মা আমাদের সম্পর্ক মেনে নেন। মনের মধ্যে নতুন শক্তির সঞ্চার হয়, আমি যেন সারা পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। চোখের দুষ্টুমি ফিরে আসে, গালের লালিমা ফিরে আসে, একবার মনে হয় যেন সেই পুরানো পরী ফিরে এসেছে আমার মধ্যে। বুকের মাঝের সেই অনন্ত কালো শূন্যতা যেন ভরে যায় মায়ের কথায়। love story

একদিন আমি বাড়ির পেছনের বাগানের ভেতর দিয়ে হেঁটে জাছচিলাম মাথের দিকে। গ্রীষ্ম কালের পড়ন্ত রোদ পশ্চিম আকাশে, আমের বাগানে মাএর গন্ধে মম মম করছে, কাঁঠাল গুলো গাছের গুঁড়ির সাথে ঝুলে আছে, লিচু গাছে লাল লাল লিচু ভর্তি। ফলের গন্ধে আকাশ বাতাস মাতোয়ারা তার সাথে আমার মনের আমেজ মাতোয়ারা। আমি পুকুর পাড়ের সেই ওর পোঁতা আমের গাছের দিকে হেঁটে গিয়েছিলাম। সেই আম গাছের গুঁড়ি ছুঁতেই এক দমকা হাওয়া এসে আমার মুখে লাগে, আমার যেন মনে হয় ও আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার গালে হাত রেখে। আমি আম গাছের দিকে তাকিয়ে থাকি, কাঁচা পাকা আমে ভর্তি সেই আমের গাছ।

আমি গাছ খানা জড়িয়ে ধরে ওর কানে কানে বলেছিলাম, “তোর মনের মানুষ তোর জন্য আসছে একটু সবুর কর।”

আমার হৃদয় সপ্তম আসমানে ছিল, মা আমার ভালোবাসার প্রতি বিরূপ হননি। কিন্তু মায়ের সাবধান বানী আমার কানে বাজে, এমএসসি শেষ করার আগে যেন আমি আমার মনের ভাব কাউকে খুলে না জানাই। আমি সেই মিলন বেলার অধির প্রতীক্ষা করেছিলাম। মৈথিলী বুঝতে পারে আমার গালের লালিমা ফিরে এসেছে।

একদিন বিকেলে আমি ছাদে দাঁড়িয়ে আম খাচ্ছিলাম, এমন সময়ে মৈথিলী এসে আমার কাঁধে হাত রাখে। আমার দিকে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে, “খুব খুশি মনে হচ্ছে?”

আমি ভুরু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে উলটে জিজ্ঞেস করি, “কেন, আনন্দে থাকা কি পাপ, আমি আমার বাড়িতে অনেক দিন পড়ে এসেছি তাই আমি খুশি।” love story

মৈথিলী, “হুম, মনে হচ্ছে অভিমন্যুর খবর এসেছে, তাই না।”

আমি ওকে মিথ্যে কথা বলেছিলাম সেদিন, “হ্যাঁ, এসেছে।”

মৈথিলী, “আমি কিছু জিজ্ঞেস করতে পারি কি?”

অনেক দিন ধরেই আমি অপেক্ষা করছিলাম সেই প্রশ্নের, আমি মাথা নাড়াই, “জিজ্ঞেস করো।”

মাথা নিচু করে, পায়ের নখে ছাদের মেঝে খুঁটতে খুঁটতে আমাকে জিজ্ঞেস করে, “ওকে একবার জিজ্ঞেস করত ও কি চায় আমাদের কাছ থেকে?”

আমি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে উত্তর দিয়েছিলাম, “কেন, তুমি ভালো করে জানো ও কি চায় আবার সেই প্রশ্ন কেন? যাই হোক, এখন ও দেশের বাইরে, যখন আমাকে ফোন করবে আমি জিজ্ঞেস করে নেব।”

মাথা নাড়ায় মৈথিলী, “ঠিক আছে।”

আমি ওকে আশস্ত করে বলি, “পরের বার ফোন করলে আমি বাড়ির ফোন নাম্বার দিয়ে দেব, তুমি ওর সাথে সরাসরি কথা বলে নিও।”

আমার বুকের মাঝে এক নতুন সাহস জেগে ওঠে, আমি যেন সেইসময়ে অপরাজিতা ছিলাম। love story

এক রাতে আমি বিছানায় শুতে যাবো, এমন সময়ে দুষ্টু এসে বায়না ধরে পিসি একটা গল্প বলো। বেশির ভাগ দিন আমি ওকে ডায়রিতে লেখা ওর কবিতা গুলি দুষ্টুকে পড়ে শুনাতাম, অনেক কবিতার কোন মাথা মুন্ডু থাকত না, পড়তে পড়তে দুজনেই হেসে ফেলতাম। দুষ্টু আমাকে জিজ্ঞেস করত, যে এই সব গালগল্প কে লিখেছে। আমি ওকে বলতাম যে ওর অভি কাকু যখন ছোটো ছিল তখন এই সব গালগল্প লিখত।

দিন কেটে যায়, গরমের ছুটি প্রায় শেষ হয়ে আসে। এর মাঝে ছোটমা ফোন করে জানায় যে ছুটির শেষে আমাকে নিতে আসবে। ছোটমায়ের কথা শুনে একটু মন খারাপ হয়ে যায়, আবার মাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম, “মা এবারে আমার সাথে ওই বাড়ি চলো।”

মা আমাকে উত্তর দিয়েছিলেন, “তোর কাছে তোর ছোটমা আছে কিন্তু সুমন্তর এই জগতে আর কেউ নেই, আমি চলে গেলে ওকে কে দেখবে রে, তাই আমি কোথাও যেতে পারিনা।”

দমদমের বাড়িতে ফিরে যাবার ঠিক একদিন আগের রাতে, দুষ্টু আমার কাছে এসে গল্প শোনার বায়না ধরে। আমাকে আদর আর অভিমান করে জিজ্ঞেস করে, “পরের পুজোতে অভি কাকুকে বাড়িতে আসতে বলবে।”

আমি ওর দিকে মিষ্টি হেসে উত্তর দিয়েছিলাম, “ঠিক আছে বলে দেব, কিন্তু একটা সর্তে।”

আমার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে দুষ্টু। আমি ওকে বলি, “তুই আমাকে তোর অভির কাকুর শুনান গল্পটা যদি বলিস তাহলে।”

আমার গালে চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে শয়তান ছেলে আমাকে বলে, “ও ওই গল্পটা, সে গল্পত আমি ভুলে গেছি।”

আমি ওর দিকে মৃদু অভিমান করে তাকিয়ে বলি, “তাহলে তোর অভি কাকুকে সঙ্গে নিয়ে আসছি না।”

এই বলে আমি ওকে কাতুকুতু দিতে শুরু করি। হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে দুষ্টু, শেষ পর্যন্ত আমাকে সেই গল্প বলে। আমার বাম হাত বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে আমার পাশে শুয়ে গল্প শুরু করে।

“অনেক অনেক দিন আগের কথা, এক দূর দেশে এক পরীর দেশের রানী থাকতেন। তাঁর কুঠিরের চারপাশ অনেক উঁচু উঁচু গাছে ঘেরা আর একপাসে অনন্ত ঘাসের মাঠ। পরীরানীর কুঠিরের পেছনে একটা ছোট্ট জলাশয় ছিল, সেই জলাশয়ে পদ্ম শালুক আরও অনেক জলের ফুল ফুটে থাকতো। কুঠিরের সামনের ফুলের বাগানে অনেক রঙ বেরঙের ফুল ফুটে থাকে, সেই ফুলের মধু খেতে রোজ নানান রঙের পাখিরা উড়ে আসত আর তাঁর সাথে নিয়ে আসত মৌমাছি আর ভ্রমর। love story

love storyএকদিন সেই জলাশয়ে পরী রানী লক্ষ্য করেন যে একটা ছোট্ট পদ্মের কুঁড়ি ফুটে আছে। বেশ কিছু দিন যায়, সেই পদ্মের কুঁড়ি আর ফুলে পরিনত হয় না। অনেক ভেবে পরী রানী সেই পদ্ম ফুলের কুঁড়ি নিজের কুঠিরে নিয়ে আসেন আর একটা কাঁচের গামলায় জল দিয়ে রেখে দেন। রোজ সকালে পরী রানী সেই পদ্ম ফুলের কুঁড়ির ওপরে শিশিরের জল, মিষ্টি মধু আর দুধ ঢেলে দিতেন যাতে সেই কুঁড়ি একদিন ফুলে পরিনত হয়ে উঠতে পারে।”

“এইভাবে দিন কেটে যায়। একদিন সকাল বেলা পরী রানী ঘুম থেকে উঠে দেখেন যে কাঁচের গামলায় সেই পদ্ম ফুলের কুঁড়ি আর নেই, সেই জায়গায় একটা ছোট্ট মিষ্টি পরী শুয়ে সকালের মিষ্টি রোদের সাথে খেলা করছে। ত্বকের রঙ দুধে আলতা, মাথায় ঘন কালো চুল। পিঠের ওপরে ছোটো ছোটো দুটি রঙ বেরঙের পাখনা। ছোট্ট দশ আঙুল দিয়ে সেই ছোট্ট পরী কাঁচের গামলা আঁচরে দেয়, বার বার সেই কাঁচের গামলা ছেড়ে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করে।

ছোট্ট দুটি নীল চোখে আসে পাশের নতুন পৃথিবী দেখে জুলু জুলু করে। পরী রানী আনন্দে কেঁদে ফেলে। তাঁর সযত্নে রাখা পদ্মের কুঁড়ি একটা ছোট্ট পরী হয়ে গেছে। পরী রানী সেই ছোট্ট পরীকে কাঁচের গামলা থেকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে একটা মখমলের কাপরে জড়িয়ে নিয়েছিলেন। পরী রানী রোজ দিন সেই ছোট্ট পরীকে মধু আর শিশিরের জল খেতে দিতেন, তার সাথে দিতেন নানান মিষ্টি ফল।” love story

“দিনে দিনে সেই ছোট্ট পরী বড় হয়ে এক সুন্দরী পরী হয়ে যায়। সেই সুন্দরী পরীর ডানা অনেক বড় আর প্রচুর রঙ্গে মাখা। ঝলমলে ডানা যেন সাত রঙের রামধনু নিয়ে আসে সেই কুঠিরে। কিন্তু পরীর ডানা বড় হলেও ওর উড়ে যাওয়ার মতন শক্তি ছিলনা। পরী রানী পরীকে উড়তে শেখায় না কোনদিন। পরী রানী চাইতেন না, যে পরী তাকে ছেড়ে চলে যাক। সেই সুন্দরী পরী কুঠিরের সামনের মাঠে খেলা করত সূর্যের আলোয় স্নান করত।

সামনের ফুলের বাগানে ফুলের দেখাশুনা করত। রোজ সকালে ঘাসের ডগা থেকে শিশিরের জল নিয়ে খেত আর বাগানের মিষ্টি ফল খেত। মৌমাছিরা ওই পরীর জন্য দূর দুরান্ত থেকে মধু যোগাড় করে নিয়ে আসত। দিনে দিনে সেই সুন্দরী পরীর মাথার ঘন কালো চুল কাঁধ ছাড়িয়ে মাটিতে নেমে আসে। বাগানের ফুল গেঁথে পরী নিজের গলার মালা আর হাতের বাজু বানিয়ে নিজেকে সাজিয়ে রাখত।”

“একরাতে পরী রানী কোন এক কাজে কুঠির ছেড়ে বাইরে চাঁদের আলোয় ঘুরতে গিয়েছিলেন। সুন্দরী পরী, কুঠিরে একা, রাতে ঘুম আসেনা দুই কাজল কালো চোখে। জানালার ধারে বসে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল পরী। ঘন নীল আকাশের বুকে শত সহস্র তারা উঁকি মেরে ওকে যেন ডাক দেয়। এমন সময়ে কোন আওয়াজ শুনে সুন্দরী পরীর ধ্যান ভেঙ্গে যায়। আসেপাসে তাকিয়ে দেখে কিন্তু কোথাও কাউকে দেখতে পায়না। চুপিচুপি দরজা খুলে বাইরে তাকায় পরী, দরজার সামনে একটা অতি সুন্দর শ্বেত শুভ্র ঘোড়া দাঁড়িয়ে। love story

ঘোড়া দেখে অবাক হয়ে যায় সুন্দরী পরী, ভেবে পায়না কি করা উচিত। সুন্দরী পরী সেই ঘোড়ার কাছে এসে ওর ঘাড়ে হাত রেখে আদর করে দেয়। ঘোড়া ওকে দেখে চিঁহি করে ডাক ছাড়ে, ডাক শুনে ভয় পেয়ে যায় পরী, পেছনে সরে আসে। কিন্তু সেই শ্বেতশুভ্র ঘোড়া সুন্দরী পরীর গালে নিজের ঘাড় ঘষে আসস্থ করে যে ওর কোন ভয় নেই। সুন্দরী পরী ঘোড়াটাকে কুঠিরের ভেতরে নিয়ে আসে। ঘোড়ার দিকে দীর্ঘকাল ধরে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে সুন্দরী পরী। একসময়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরে।”

“সকাল বেলার প্রথম সূর্যের আলো সুন্দরী পরীর পায়ের কাছে এসে লুটপুটি খায়, পায়ে নতুন ঊষার আলোর উষ্ণতা পেয়ে জেগে ওঠে সুন্দরী পরী। কাজল কালো চোখ মেলে দেখে একটা সুদর্শন যুবক বসে আছে ওর কাছে আর সেই শ্বেতশুভ্র ঘোড়া কুঠিরের ভেতরে নেই। সেই সুদর্শন যুবক কে দেখে ভয় পেয়ে যায় পরী, ভয়ে চিৎকার করতে চেষ্টা করে, ঠিক সেই সময়ে সেই যুবক পরীর ঠোঁট চেপে ধরে চিৎকার করতে বারন করে। ভয়ে জড়সড় হয়ে কুঠিরের এক কোনে বসে থাকে পরী, ভেবে পায়না, কি করে সেই ঘোড়া উধাও হয়ে গেল আর তার জায়গায় এই সুদর্শন যুবক কুঠিরের ভেতরে প্রবেশ করল।”

“সেই সুদর্শন যুবক পরীকে জানায় যে ও একটা তস্কর, পরী রানীর কুঠিরে পরী রানীর জাদুর পুতুল চুরি করার জন্য এসেছিল। কিন্তু জানালা দিয়ে সুন্দরী পরীকে দেখে সেই জাদু পুতুলের কথা ভুলে যায়। রুপ বদলে এক শ্বেতশুভ্র ঘোড়ার রুপ ধারন করে কুঠিরের ভেতরে প্রবেশ করার জন্য। সুন্দরী পরী ওই সুদর্শন যুবকের কথা মন দিয়ে শোনে। সুদর্শন যুবক সুন্দরী পরীকে জিজ্ঞেস করে যে পরী উড়তে চায় কিনা। love story

উড়ে ওই উঁচু গাছের জঙ্গল পেরিয়ে দূর দেশে পারি দিতে চায় কিনা, শুনতে চায় কি ভাবে নদী নিজের খেয়ালে গান করে আর নেচে নেচে পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলে? সুন্দরী পরী সেই সুদর্শন যুবকের গুরু গম্ভির গলার স্বর শুনে মোহিত হয়ে যায়। পরী মৃদু মাথা নাড়িয়ে নিজের ইচ্ছে প্রকট করে, উড়ে বেড়াতে চায়।”

“সেই সুদর্শন তস্কর পরীকে একটা মখমলের কাপরে জড়িয়ে নিয়ে কুঠিরের মেঝে খুঁড়তে শুরু করে। খুঁড়ে চলে তস্কর, সেই বিশাল ঘাসের ময়দানের নিচ দিয়ে, সেই ঘন জঙ্গলের নিচ দিয়ে। এক সময়ে জঙ্গল অতিক্রম করে অন্য পাশে বের হয় যায় দুইজনে। সামনে উঁচু বরফে ঢাকা পাহাড় দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় সুন্দরী পরী।”

“সুদর্শন তস্কর সুন্দরী পরীকে কে জিজ্ঞেস করে ও উড়তে চায় কি না? সুন্দরী পরী মাথা নাড়ায়, কিন্তু জানায় যে ও উড়তে জানেনা। সুদর্শন তস্কর পরীকে কোলে নিয়ে হাওয়ায় ছুঁড়ে দেয়, পরী প্রাণপণে ডানা মেলে ধরে, বারেবারে পাখনার ঝাপটা মেরে উড়তে চেষ্টা করে, কিন্তু উড়তে সক্ষম হয় না। পরী পরে যায় আর সুদর্শন তস্কর ওকে মাটিতে পড়ার আগেই কোলে ধরে ফেলে। কিছু পরে সুদর্শন তস্কর আবার পরীকে কোলে করে নিয়ে আকাশে ছুঁড়ে দেয়, এইবারে পরী নিজের পাখা মেলে উড়ে যায়।

উড়তে উড়তে অনেক উপরে উঠে যায় সুন্দরী পরী, নিচে তাকিয়ে দেখে সেই সুদর্শন তস্কর রুপ বদলে শ্বেতশুভ্র ঘোড়ার রুপ ধারন করে ঘাসের মাঠের ওপরে দিয়ে পাহাড়ের দিকে দৌড়াতে থাকে। পরী উড়তে উড়তে সেই বরফ ঢাকা পাহারে চলে যায় আর সেই শ্বেতশুভ্র তস্কর পরীর ছায়া অনুসরন করে পাহাড়ে দিকে চলে যায়।” love story

গল্প শেষ করে দুষ্টু আমাকে জিজ্ঞেস করে, “গল্প এখানে শেষ, তুমি জানো এরপরের ওদের কি হয়?”

আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “কেন, গল্প কি এখানে শেষ?”

মাথা নাড়ায় দুষ্টু, “হ্যাঁ, অভি কাকু এই পর্যন্ত গল্প শুনিয়েছে।”

আমি গল্পের কথা ভাবি, এই গল্প আমার হৃদয় তস্করের, সেই তস্কর পরী রানীর কাছ থেকে সুন্দরী পরীকে চুরি করে সুদূর পাহাড়ে চলে যায়। সেই তস্কর পরীকে উড়তে শেখায়। হ্যাঁ, পরী তারপরে উড়তে শেখে, কিন্তু উড়তে উড়তে একসময়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে যে সেই তস্কর আর নেই। একবার ভাবে সেই তস্কর হয়ত ওর জন্য খাবার আনতে গেছে, অপেক্ষা করে পরী, কিন্তু সেই তস্কর ফেরে না।

আজও অপেক্ষা করে আছে সেই সুন্দরী পরী তার প্রানের সুদর্শন তস্করের জন্য।

আমি দুষ্টুর টোপা গাল টিপে বলেছিলাম, “এখন ঘুমিয়ে পর, আমি অভি কাকুকে বলে দেব, পরের বার এসে ও যেন তোকে বাকি গল্প টুকু বলে দেয়।”

আগের পর্ব

মধ্যরাত্রে সূর্যোদয় 4 – শ্বেত পাথরের মূর্তি

কেমন লাগলো গল্পটি ?

ভোট দিতে হার্ট এর ওপর ক্লিক করুন

সার্বিক ফলাফল / 5. মোট ভোটঃ

কেও এখনো ভোট দেয় নি

3 thoughts on “love story মধ্যরাত্রে সূর্যোদয় 5 – সাদা ঘোড়ার রুপকথা”

  1. Ei golpo ta porte ese ei site a asar udessyo ta bhule jawa jai. But eta kono bhalo potrika te pathano jete pare. Just ekta correction “Janu” mane hatu ir knee. Apni Janu gulo correct kore uru kore deben.

    Reply

Leave a Comment