bangla jouno uponnash choti. কালু , কি বলবো ওকে নিয়ে ? কিভাবে ওর পরিচয় দেবো ? ঠিক বুঝতে পারছি না । সিনেমায় গল্পে দেখছি বা পড়েছি । কিছু কিছু লোক থাকে এরা তাদের আশেপাশের লোকজন কে এতটাই প্রভাবিত করে যে চলে যাবার পর ও সেই লোক গুলির ছাপ থেকে যায় । কালু সেরকম ই একজন । এখনো কালুর ছাপ রয়েগেছে আমাদের ঘরে । অনেক গুলি বছর কেটে গেছে তারপর ও কালু যেন জিবন্ত আমাদের বাড়িতে । যেমন হুট করে এসে আমাদের বাড়ির অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছিলো ঠিক তেমনি সবাই কে অবাক করে দিয়ে উধাও হয়ে যায় ।
কালু কে কেউ নিয়ে আসেনি আমাদের বাড়ি ও একাই এসেছিলো । তেমনি ওকে কেউ বের করে দেয়নি ও একাই চলে গিয়েছিলো । ও আমাদের বাড়ি ছিলো প্রায় বছর তিন এর মতো । ধীরে ধীরে ও আমাদের জিবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠে ছিলো । বিশেষ করে আমার, নাহ কারো বিশেষ করে নয় । ও আমাদের সবার জীবন এর অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছিলো। বাবার জন্য তার আকাঙ্ক্ষিত ছেলে যা আমি কোনদিন হয়ে উঠতে পারিনি । মায়ের জন্য যে কি ছিলো সেটা আমি বলে বোঝাতে পারবো না কারন সেটা আমার কাছেও একটা ধাঁধা ।
jouno uponnash
কালু যেদিন চলে গেলো সেদিন আমার বাবা সবচেয়ে বেশি দুঃখ পেয়েছিলো । যেদিন কালু কে আর খুজে পাওয়া গেলো না সেইদিন বাবা যে বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসলেন আর ওনাকে সুস্থ ভাবে চলা ফেরা করতে দেখেনি । আমার ও খুব খারাপ লেগেছে কিন্তু সবচেয়ে অবাক হয়েছি মা কে দেখে । উনি এমন একটা ভাব করতেন যেন কিছুই হয়েনি । মায়ের আচরন দেখে মনে হয়েছে কালু নামে কেউ কোনদিন ছিলইনা আমাদের বাড়ি ।
প্রথমে আমাদের পরিবার এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং কালু আসার আগে আমাদের বাড়ির পরিস্থিতির একটা ছোট্ট বিবরন দিয়ে নেই । আজমত পুর গ্রামের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত পরিবার আমাদের পরিবার । এমন কি এই আজমতপুর নামটাও এসেছে আমাদের পরিবার থেকে । আমার দাদাজান এর বাবার মানে আমার বড় বাবার নাম ছিলো আজমত শেখ । বিশাল নাম ডাক ওয়ালা লোক ছিলেন উনি । শুনেছি একাই নাকি দশ লোকের খাবার খেতে পারতেন আজমত শেখ । তেমন পয়সা করি ছিলো না ওনার । উনি ছিলেন দাঙ্গাবাজ লোক ডাকাত মাড়া ওনার পেশা এবং সখ ছিলো । jouno uponnash
এই গ্রাম আর আশেপাশের গামের জমিদার ওনাকে খুব পছন্দ এবং সমিহ করতো । দেখা গেলো যে আজমত শেখ এর ভয়ে এই গ্রাম আর আসেপাসে গ্রামের ডাকাত আশা বন্ধ হয়ে গেলো । তাই জমিদার খুশি হয় ওনাকে কিছু জমি দিয়েছিলো । নিজের দেওয়ান এর মেয়ের সাথে বিয়ে ও দিয়েছিলো । যদিও আমার বাবা বলতো যে জমিদার হিন্দু না হলে নিজের মেয়ের সাথেই বিয়ে দিত । কিন্তু আমার কাছে সেটা অতিরঞ্জিত মনে হয়। তবে আজমত শেখ এর জমি জমায় মন বসতো না , উনি দাঙ্গা হাঙ্গামা করেই দিন কাটাতে পছন্দ করতেন ।
দেওয়ান এর মেয়ে মানে আমার বড় মা কে ছারাও আজমত শেখ আরও দুটি বিয়ে করেছিলো। তৃতীয় স্ত্রীর ঘরে কোন সন্তান হয় নি । দুই স্ত্রী মিলিয়ে আজমত শেখ এর মোট ছয় পুত্র এবং চার কন্যা । প্রথম স্ত্রীর ঘরে সুধু একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহন করে । উনি হচ্ছেন আমার দাদাজান রহিম শেখ ।
যাই হোক জমিদারের দেয়া জমি নিয়ে আজমত শেখ এর কোন উৎসাহ না থাকলেও আমার দাদাজান আজমত শেখ এর বড় সন্তান নিজের বুদ্ধি আর বিচক্ষণতা দিয়ে নিজের ভাগে পাওয়া জমি কয়েকগুন বাড়িয়ে বেশ ফুলে ফেঁপে উঠেছিলো । জমিদারি প্রথা উঠে গেলে জমিদার চলে যায় বর্ডার এর ওই পাড় । কিন্তু আমার দাদাজান আজমত শেখ এর ছেলে এই এলাকার পদবী ছাড়া জমিদার হয়ে ওঠে । jouno uponnash
কিন্তু সমস্যা হয় আমার দাদাজান এর অন্য সৎ ভাই দের নিয়ে । মানে আজমত শেখ এর অন্য ছেলেদের নিয়ে । ওরা জমিজমা পেয়েও তেমন কিছু করতে পারেনি । তাই শেষ পর্যন্ত আমার দাদাজান এর পেছনে লাগে । কিন্তু পেরে ওঠেনা আমার দাদাজান রহিম শেখ এর সাথে । মার খেয়ে গর্তে লুকায় ।
এর পরের প্রজন্ম হচ্ছে আমার বাবা রুহুল শেখ । দাদাজন এর এক মাত্র জীবিত সন্তান । দাদাজান আর দাদিজান এর মোট সন্তান হয়েছিলো ১৩ টি , কেউ কেউ জন্মের পর পর আর বাকিরা ১০ বছর পেরুনর আগেই মাড়া যায় । সবাই বলতো এটা আমার দাদাজান এর সৎ মায়ের কোন জাদু মন্ত্রের ফল । আমি অবশ্য জানি না কথাটা কতটা সত্য । আমার আব্বা রুহুল শেখ হচ্ছেন আমার দাদাজান এর সর্ব কনিষ্ঠ সন্তান ।
দাদাজন যখন দেখছিলেন একে একে তার সব সন্তান মাড়া যাচ্ছে তখন তিনি কদম তলীর বিখ্যাত পীর বাবার কাছে যান । সবাই বলা বলি করে সেই পীর বাবাই নাকি আমার আব্বা কে মন্ত্র থেকে রক্ষা করেছেন । আজ ও সেই পীর জীবিত এবং আমাদের বাড়ি আসে কেউ জানে না সেই পীর এর বয়স কত। আমার আব্বা ও নাকি ওই পীর কে এই রকম ই দেখছে । jouno uponnash
আমার আব্বা দাদাজান এর বেশি বয়স এর সন্তান হওয়ার কারনে দাদাজান যখন মাড়া যান উনি বেশ কম বয়সী ছিলেন । তাই কম বয়সে পিতার ছায়া না পেয়ে আব্বা দাদাজান এর সৎ ভাইদের সাথে পেরে ওঠেনা । অনেক জমিজিরাত হারাতে হয় আমার আব্বা কে । কিন্তু তারপর ও যা ছিলো তাতে আমাদের ভেসে যেত । কিন্তু যে জিনিসটা আমার আব্বা কে সবচেয়ে বেশি দুঃখ দিত সেটা হচ্ছে মান সম্মান । আমার দাদাজান এর সৎ ভাইদের ছেলেরা সংখ্যায় অনেক ।
ওরা আমার আব্বার জমিজিরাত হাতিয়ে নিয়ে গ্রামে বেশ পয়সাকরি ওয়ালা লোক হয়ে যায় । যেখানে গ্রামের মাথা সবসময় আমার দাদাজান ছিলো । আর ওনার পর আমার আব্বার হওয়ার কথা সেখানে এখন আমার আব্বার সৎ চাচাতো ভাইরা হুকুম চালাতে লাগলো । এই নিয়ে আমার আব্বা খুব মন খারাপ করতে দেখতাম । আমার আব্বার সৎ চাচাতো ভাই রা সুধু আব্বার জমি আর সম্মান কেড়ে নিয়ে খান্ত হয়নি মাঝে মাঝে আব্বা কে অপমান ও করতো । আব্বা একা বলে ওদের সাথে পেরে উঠত না । তাই আমার আব্বার ইচ্ছে ছিলো অনেক গুলো ছেলের । jouno uponnash
কিন্তু আমি জন্মাবার পর আমার বাবা মায়ের আর কোন সন্তান হয়নি । আর আমি তেমন স্বাস্থ্যবান ছেলে ছিলাম না । সবসময় সর্দি জ্বর লেগেই থাকতো । তাই আমার বাবা আরও বেশি মুষড়ে পড়েছিলেন । ওনার বদ্ধমুল ধারণা ছিলো । আমাদের বংশের হারানো ঐতিহ্য আমরা আর ফিরে পাবো না । সবাই মিলে আব্বা কে দ্বিতীয় বিয়ের বুদ্ধি দিলেও আব্বা করেন নি । কারন আব্বা যাকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন সেই কদম তলীর পীর বাবা বলেছেন আব্বার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনবে যে ছেলে সেই ছেলে জন্মাবে আমার মায়ের ই পেট থেকে ।
আর সেই অপেক্ষায় ই আব্বা দিন গুন্তে লাগলেন । আমাকে আব্বা তেমন পছন্দ করতেন না কারন আমি শারীরিক ভাবে আর মানসিক ভাবে দুর্বল ছিলাম ( এখনো আছি ) কিন্তু কোনদিন খারাপ আচরন ও করেননি ।
বিশাল বাড়ি আমাদের থাকি সুধু গোটা কয়েক লোক । আমি আব্বা মা আর দুইজন কাজের লোক । আমাদের জমি আর আমরা নিজেরা চাষ করাই না । বর্গা দিয় দেয়া হয় । একজন ম্যানেজার আছে সেই যা ফসল আসে বিক্রি টিক্রি করে টাকা পয়সা বাবার হাতে দেয় । বাবা সারাদিন বাড়িতে থাকে কোথাও তেমন একটা যায় না । আমার দাদাজান যেমন সারাদিন এদিক সেদিক বিচার সালিস আর কাজ নিয়ে ব্যেস্ত থাকতো আমার বাবা তার উল্টো । বিচার সালিস তেমন আসেনা তার কাছে । সারাদিন বসে বসে সময় কাটায় । jouno uponnash
আর আমি আমার ইতিহাস সম্পূর্ণ ভিন্ন । দুর্বল স্বাস্থ্য আর শরীর নিয়ে আমি স্কুলে হাসির পাত্র । প্রায় অন্য ছেলেদের কাছে সারিরক অথবা মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয় আমাকে । শেখ বাড়ির ছেলে বলে বারতি খাতির আমি পাই না । আর সেই যোগ্যতা ও আমার নেই । বন্ধুবান্ধব এর ও বড় অভাব আমার । সবচেয়ে বেশি বিরক্ত করে আমার বাবার সৎ চাচাতো ভাই এর ছেলেরা ।
এই ছিলো আমাদের ঐতিহ্যবাহী ক্ষয়িষ্ণু পরিবার এর ইতিহাস ।
এখন আমি কালুর আগমন এবং পরিবর্তন এর কথা গুলি বলবো ।
তখন আমার বয়স হবে ১২-১৩ তাই সবকিছুই আমার মনে আছে । সেদিন ছিলো শুক্র বার । হঠাত আমি মায়ের চিৎকার শুনে ধরমর করে উঠে বসলাম ঘুম থেকে । আমার মাথা কাজ করছিলো না । আর এদিকে মা চিৎকার করেই যাচ্ছে । একটু ধাতস্ত হতেই আমি বিছানা থেকে নেমে ঘরের বাইরে এলাম । আমাদের দালান টা ছিলো ইংরেজি এল অক্ষর এর মতো । সামনে টানা বারান্দা । আমি দোতলায় থাকি । বারান্দায় এসে দেখি মা উঠানে দাড়িয়ে আছে আর একটা কালো মিশমিশে ছেলে মায়ের পা ধরে টানছে । আমাদের কাজের লোক দুটি রহিমা আর সেলিম দুজন ই ছুটে এসেছে কিন্তু ওরাও হতভম্বের মতো দাড়িয়ে আছে । jouno uponnash
মনে হয় বুঝতে পারছে না কি করবে । এদিকে আমিও বুঝতে পারছি না কি করবো । ছেলেটা যদি ভয়ঙ্কর হয় তাহলে ? এই চিন্তা কাজ করছিলো আমার মাথায় । কত ভিতু ছিলাম আমি । এদিকে আব্বা কেও কোথাও দেখা যাচ্ছে না । কি করবো কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না । এদিকে ছেলেটিও কিছুতেই মায়ের পা ছাড়ছে না । মা মনেহয় গোসল করে বেরিয়েছিলো । হাতে ভেজা কাপড় । মাথায় ভেজা চুল গামছা দিয়ে প্যাঁচানো । সেই অবস্থায় চেঁচিয়ে যাচ্ছে । আমার তখন কি কড়া উচিত ছিলো আমি যানতাম কন্তু আমার সাহস ছিলো না কিছু করার ।
এমন সময় আব্বা ঢুকলেন বাড়ির গেট দিয়ে সাথে আমাদের ম্যানেজার দিলিপ কাকু । তবে উঠানের অবস্থা দেখে ওনারাও কয়ক মুহূর্তের জন্য স্থম্বিত হয়ে গিয়েছিলেন । তবে প্রথম হুঁশ ফিরে পায় দিলিপ কাকু । দৌরে এসে কালো ছেলেটিকে ধরে টেনে সরানোর চেষ্টা করে । কিন্তু ছেলেটিকে বেশ শক্তিশালী মনেহয় । কিছুতেই দিলিপ কাকু পেরে উঠছিল না । দিলিপ কাকু যত জোরে টানছিল ছেলেটি ততো জোরে আমার মায়ের পা চেপে ধরছিলো । দিলিপ কাকু কে দেখে আমাদের চাকর সেলিম ও দৌরে এসে ছেলেটিকে ধরে মায়ের কাছ থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা শুরু করে দিলো । jouno uponnash
আর রহিমা এসে মা কে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো যেন এই টানাটানিতে মা পড়ে না যায় । আমি উপর থেকে দেখছিলাম অবাক হয়ে আর মনে মনে শিহরিত হচ্ছিলাম ছেলেটির শক্তি দেখে । যেমন ভয় হচ্ছিলো মায়ের জন্য আবার তেমন হিংসা ও হচ্ছিলো ছেলেটির শক্তি দেখে । এমন সময় আমার আব্বা মনেহয় সম্বিৎ ফিরে পেয়েছিলেন । গর্জে উঠে ছেলেটি আর মায়ের দিকে এগিয়ে গেলেন । আব্বা কে আসতে দেখে দিলিপ কাকু আর সেলিম দূরে সড়ে গেলো । ঠাশ করে একটা শব্দ হলো যেন গুলি চলেছে কোথাও ।
আমার বুকটা কেঁপে উঠেছিলো সেই শব্দে । চোখের নিমেষে সব হয়ে গেলো যেন । চড় খেয়ে ছেলেটি মা কে ছেড়ে দিয়েছে । আর হঠাত করে ছাড়া পেয়ে মা আর রহিমা দুজনেই পড়ে গেছে উঠানে । আব্বা রাগে কাঁপছে আর বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছেলেন । সবচেয়ে অবাক কড়া কাণ্ড হলো এতো জোরে চড় খেয়েও ছেলেটি হাসছিলো । কালো কুচকুচে মুখে হলদে দাঁত গুলুও সাদা মনে হচ্ছিলো খুব ।
একটু নিরাপদ মনে করে আমি নিচে নেমে আসতেই মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বারান্দায় বসে পড়লেন । খুব কাপছিলো মায়ের সাড়া শরীর । অনেক ভয় পেয়েছিলো মা । আমিও কম ভয় পাইনি সেদিন । আমার স্পষ্ট মনে আছে ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গিয়েছিলো । jouno uponnash
ওদিকে মা চলে আসার পর ই দিলিপ কাকু আর সেলিম মিলে ছেলেটি কে ধরে ফেলেছে । আর আব্বা ছেলেটির গালে আর আক্তি চড় বসিয়ে রাগে কাঁপতে কাঁপতে জিজ্ঞাস করছিলেন কথা থেকে এসেছে আর কেন এমন করেছে । কিন্তু ছেলেটি কোন উত্তর দিচ্ছে না খালি হাসে । আর সেই হাসি ও এমন বিদঘুটে ছিলো যে আমার গা ছমছম করে উঠেছিলো । এ পর্যায়ে দিলিপ কাকু বলল যে “একে মেরে লাভ নেই পুলিসে খবর দিন হুজুর।“ পুলিশ এলো আর এক প্রস্থ মার খেলো ছেলেটি । আর আমিও একটু সাহস পেয়ে একটু কাছ থেকে দেখে নিয়েছিলাম ।
কেমন থেবড়ানো নাক নাকের মাঝখানটা দেখে মনে হয় কেউ কেটে ফেলেছে । আর ঠোঁটের দুপাশ ফেটে সাদা হয়ে আছে । কিন্তু শরীরটা দেখে হিংসে হয়েছিলো বড়। খুব বেশি বয়স না আমার চেয়ে ৩-৪ বছরের বড় হবে তখন । কিন্তু কি পেটানো শরীর । দিলিপ কাকু আর সেলিম দুজনে মিলেও পারেনি কেন পারেনি তা ওর শরীর দেখে বুঝতে পেরেছিলাম ।
পুলিশ এর মার খেয়েও হাসছিলো ছেলেটি । কোন কথার উত্তর দিচ্ছিলো না । আর পুলিশ এর মার কি রকম সেটা ওদিন খুব কাছ থেকে দেখছিলাম । ওরা সাধারন মানুষ এর মতো ধুম ধাম মারে না ওদের মাইর গুলা চিকন মার । কেউ চুলের জুলফি ধরে টেনে দিচ্ছে অথবা হাঁটুর ঠিক জোড়ায় একটা মাঝারি বাড়ি দিচ্ছে । কিন্তু কোন টেকনিক ই ছেলেটির মুখ থেকে শব্দ বের করতে পারেনি । jouno uponnash
একেবারে শেষে কথা বলেছিলো অবশ্য যখন দুজন পুলিশ ওর কোমরে দড়ি বেধে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন । আমার মায়ের দিকে আঙুল তুলে বলেছিলো মা ।
আর ওই একটা শব্দই ওকে এই বাড়িতে স্থায়ী জায়গা করে দিয়েছিলো । মায়ের অনেক বলার পর বাবাই ওকে ছাড়িয়ে এনেছিলো থানা থেকে । ওই সময় পর্যন্ত আমার জিবনের সবচেয়ে উত্তেজনাকর ঘটনা ছিলো ওই শুক্রবার সকাল এর ঘটনা। তাই অতি কৌতূহল থেকে যখনি ওই পাগলা ছেলে নিয়ে কথা হতো তখনি আমি কান পেতে শুনার চেষ্টা করতাম । তাই আব্বা আর মায়ের কথোপকথন গুলি আমি প্রায় সবগুলি শুনেছি । যেদিন আব্বা অবশেষে ওই ছেলেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য রাজি হলেন সেদিন এর কথা গুলিও আমি শুনছিলাম ।
মা ঃ শুনছেন , আমার কিছু ভালো লাগে না সারাদিন ওই ছেলের মুখটা মনে পড়ে , কেমন যাওয়ার সময় মা বলে ডেকে গেলো ।
আব্বাঃ ওই কুচ্ছিত মুখ ও তোমার মনে পড়ে আয়শা , আমার তো দেখেই ঘেন্না লেগে গিয়েছিলো । আর এগুলি হচ্ছে ওদের টেকনিক মনে হয় কোন ডাকাত দলের লোক ।
মাঃ না গো অপুর আব্বা আমার সেরকম মনে হয় না , ছেলেটি মনে হয় পাগল হবে ।
আব্বা ঃ এখন ওর কথা না তুল্লে হয় না আয়শা , তখন তো চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলেছিলে । jouno uponnash
মা ঃ সে জন্য ই তো লজ্জা হয় ছিঃ ছিঃ ছেলেটি কি মনে করে আমাকে ধরেছিলো আর আমি কি মনে করেছিলাম । মাঝে মাঝে এমন মনে হয় আমার মনটা খুব কুচ্ছিত না হলে আমি ওসব মনে করি । কেমন করে মা ডেকে গেলো । আপনি যান না একবার থানায় ওরা নিশ্চয়ই অনেক মাড়ছে ছেলেটা কে । আর পাগল ছেলেটা মুখ বুজে সব সহ্য করছে , মনে হয় মা মা করে কাঁদছে ও । কার না কার বুকের ধন কে জানে আমার জন্য জেলে পচে মরছে ।
মায়ের একটা দীর্ঘশ্বাস শুনা গেলো , গলা জড়িয়ে এসেছে মায়ের , মনে হয় কান্না ও করছে একটু একটু । মা কি মনে করেছিলো সেটা অবশ্য আমি বুঝতে পারিনি তবে আমি জানি আমার মায়ের মন কুচ্ছিত না ।
আব্বা ঃ কি সব আবোল তাবোল চিন্তা করো না তুমি , ওদের আবার মা বাবা আছে নাকি কোথায় কি করে জন্ম হয়েছে তার কোন ঠিক নেই ওদের আবার মা । তুমি খালি খালি এসব চিন্তা না করে আমাদের বংশের কথা চিন্তা করো , মনে প্রানে পারথনা করো যেন তোমার গর্ভে একজন তেজি পুত্র সন্তান আসে যে আমাদের বংশের মর্যাদা ফিরিয়ে আনবে । নয়তো আমার আমত অপু কেও এমন অপমান সহ্য করতে হবে । যাও দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আসো আয়শা । চেষ্টা তো করে যেতে হবে আমাদের । jouno uponnash
আমি বুজতে পারলাম এখন মা আর আব্বা আবার ওরকম করবে , সব সময় আব্বা যখন ছেলের কথা বলে তার পর পর ই আব্বা মায়ের কাপড় তুলে মায়ের উপর শুয়ে কেমন যেন ঘোঁত ঘোঁত করে শব্দ করে দুই তিন মিনিট ।
মাঃ আমি যে পাপ করেছি তাতে আমার কথা আর খোদা শুনবে না , এক মায়ের বুকের ধন কে জেলে পাঠিয়ে আমি কি আবার মা হতে পারবো , আপনি কালকে সকালেই যান থানায় ।
আব্বা ঃ ঠিক আছে যাবো যাবো এখন যাও দরজা বন্ধ করে দেয়ে এসো । আব্বার গলা কেমন যেন ফেস্ফেসে হয়ে এলো শেষের বাক্য বলতে গিয়ে ।
আমি বিছানা নড়ার শব্দ পেলাম । তারপর দরজা বন্ধের শব্দ । তারপর আবার আব্বার ঘোঁত ঘোঁত শব্দ দুই তিন মিনিট তারপর সব কিছু চুপ কয়েক সেকেন্ড । এখন মা দরজা খুলবে তাই আমি নিজের ঘরে চলে গেলাম ।
সেই রাতের পরদিন সেই ছেলেটি আব্বার সাথে এসে বাড়িতে হাজির । jouno uponnash
কালু আমাদের বাড়িতে স্থায়ী আসন গেড়ে বসেছে প্রায় মাস দুয়েক হলো । হ্যাঁ ওর নাম দেয়া হয়েছে কালু । নামটি দিয়েছেন আব্বা । মায়ের অবশ্য এই নাম পছন্দ হয়নি একদম । কিন্তু ওকে কালু ছাড়া অন্য নামে ডাকলে কোন সাড়া দেয়না । সুধু কালু বলে ডাকলেই দাঁত বের করে হাজির হয় । আর কি বিচ্ছিরি সেই দাঁত দেখলেই বমি পায় ।
প্রথম প্রথম আব্বা বিরক্ত হলেও এখন কালু ছাড়া ওনার সকাল শুরু হয়না । আব্বা আর আম্মা ছাড়া অন্য কোন কথা না বলতে পারা এই অসুন্দর ছেলেটি আব্বার ডান হাত হয়ে উঠেছে । আর কালু আসার পর আব্বা ও বেশ চনমনে হয়ে উঠেছে। সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ে হাঁটা হাটি করতে তখন আব্বার সঙ্গী কালু । বিকেলে পুকুরে মাছ ধরা দেখাশুনা করতে যায় আব্বা তখনো আব্বার সঙ্গী কালু । সন্ধ্যার পর বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে আরাম করার সময় ও আব্বার সঙ্গী কালু ।
আব্বার পায়ের আঙুল টেনে দেয়া পায়ের তেল মালিস করাই যেন দুনিয়ার সবচেয়ে আনন্দের কাজ অন্তত কালু কে দেখলে তাই মনে হতো । হ্যারিকেন এর আলোয় কালুর কালো মিশমিশে শরীর দেখা যেত না সুধু দাঁত গুলি দেখা যেত তখন । jouno uponnash
সকাল দুপুর আর সন্ধ্যে টা আব্বার সাথে কাটালেও কালুর সারাদিন কাটতো মায়ের সাথে । মনে হচ্ছিলো রহিমার চাকরি আর মনে হয় বেসিদিন থাকবে না এই বাড়িতে । এমনিতে ও রহিমার বেশ বয়স হয়েছিলো এই বাড়িতে কাজের মানুষ হিসেবে থাকলেও বেশিরভাগ কাজ মা ই করতো । আগের দিনের গেরস্থ বাড়িতে বাড়ির বউরাই নিজেদের কাজ নিজেরা করতো সে যত বড় গেরস্থ ই হোক না কেন ।
মায়ের সব কাজ কালুই করে দিত , এই নিয়ে রহিমা প্রায় মজা করে বলতো “ আমার কপাল থেকে মনেহয় এই বাড়ির ভাত উঠে যাচ্ছে “ ।
আমি অবশ্য কালুর সাথে বেশি ঘেঁষতাম না । কেমন জানি একটা ভয় কাজ করতো আমার সাথে হিংসে । অবশ্য কালু খেতে বসলে দূর থেকে দেখতাম । কালু কখনো আমাদের সাথে খতে বসতো না । সবার খাওয়া হয়ে গেলে তারপর ওকে খেতে দেয়া হতো । মা কত বলেছে ওকে আমাদের সাথে খেতে বসতে কিন্তু কিছুতেই রাজি করান যায়নি । একাই চার পাঁচ জনের ভাত খেয়ে ফেলত কালু । সুধু ভাত হলেই হতো ওর তরকারী দরকার পড়তো না । আর সেই খাওয়া ও ছিলো দেখার মতো । jouno uponnash
বিশাল বিশাল গ্রাস তুলত মুখে । তারপর কিছুক্ষন চিবিয়ে গিলে ফেলত । কালু খাওয়ার সময় মা সবসময় ওর সামনে থাকতো পাছে রহিমা ওকে কম ভাত দেয় সেই কারনে । কালু কে এক থালা ভাত দিলে ও নিমেষে শেষ করে থালা টা মায়ের দিকে বাড়িয়ে ধরে বলতো “ আম্মা “ আর মা হেঁসে ওকে আরও ভাত দিত ।
“ কি করছ আয়শা ও তো আমার ধানের গোলা সবার করে ফেলবে “ আব্বার এই অভিযোগ গুলো ও ছিলো কৌতুক পূর্ণ । আমার বাবা মায়ের একটা অল্প পরিচিত অনাহুত একটি ছেলের প্রতি এমন দরদ দেখে আমি বেশ অবাক হতাম । মনে মনে ভাবতাম কালু কি এমন জাদু করেছে ওদের । নিজের ছেলের চাইতেও এই অনাহুত অসুন্দর ছেলেটির সাথে ওদের আচরন অনেক সহজ অনেক আপন ।
প্রায় মাকে দেখতাম কাজ করতে করতে কালুর সাথে হেঁসে গল্প করছে । দুটি শব্দ ছাড়া অন্য কোন কথা উচ্চারন করতে না পারা কালুর সাথে গল্প করে কি মজা সেটা আমি বুঝতাম না । না এমন ছিল না যে মা আমার সাথে সময় কাটাত না । সারাদিন কাজের ফাঁকে সময় মতোই আমার খোঁজ নিতো । প্র্যজনিয়তা পুরন করতো । কিন্তু মন খুলে গল্প করা সেটা কোনদিন হয়ে ওঠেনি । অবশ্য মায়ের সাথে যে গল্প করা যায় সেটাই কোনদিন আমার মাথেয় আসেনি । কিন্তু কালু কে দেখে এখন অবশ্য আমার সেই ইচ্ছে হয় । একদিন এর ঘটনা বলি । jouno uponnash
মা রান্না করছিলো আর সেদিন রহিমার শরীর খারাপ ছিল । তাইসব কিছু মা কে একাই করতে হচ্ছিলো । আমি সেদিন বাড়িতেই ছিলাম । গ্রামের অন্য ছেলেদের মতো ডানপিটে ছিলাম না আমি তাই বারান্দায় বসে একটি কি খেলনা নিয়ে যেন খেলছিলাম । রান্না ঘর থেকে চাপ কল বেশ দূরে হওয়ায় মা কে কিছক্ষন পর পর পানি নিয়ে আসতে হচ্ছিলো । আমি দেখছিলাম আর মনে মনে মায়ের জন্য কষ্ট হচ্ছিলো । কিন্তু পানি টা যে আমিও এনে দিতে পারি সেই চিন্তাই আমার মাথায় আসেনি ।
অবশ্য অতো বড় কলসি আমি নিতেও পারতাম না । এমন সময় কালু চলে এলো । দেখলাম ওর হাতে দুটো ঝুনা নারকেল । এসেই হাঙ্গামা শুরু করে দিলো কালু । পুরো বাড়ি মাথায় করে নিলো একটি শব্দে “ আম্মা “ “আম্মা” । মা তখন চাপ কলে চাপ দিয়ে পানি তুলছিল । কালু এসেই মা কে সরিয়ে নিজে চেপে পানি ভরে কলসি এক হাটে উঠিয়ে রান্না ঘরে নিয়ে দিলো ।
মা সে কি খুশি । কালুর কোঁকড়ান চুল গুলি হাতে নেড়ে দিয়ে বলছিল “ তোর মা ছোট বেলা থেকেই এইসব কাজ করে অভস্থ” কিন্তু কালু মানতে নারাজ । হাত নেড়ে মা কে কোন সময় ভারি কিছু করতে নিষেধ করছে । তারপর মা যতক্ষণ রান্না করলো ততক্ষন কালু বসে রইলো মায়ের সাথে । এটা ওটা করে দিচ্ছে । এর ফাঁকে মা যেন কি সব কথা বলছে ওই বোবাটার সাথে । সেদিন খুব মন খারাপ হয়েছিলো , আমিও কি পারতাম না মায়ের কলসি ভরে দিতে মায়ের সাথে রান্না ঘরে বসে কথা বলতে । jouno uponnash
মা হাসিমুখে আমার চুল গুলি এলোমেলো করে দিয়ে আহ্লাদ করে বলতো “ ইস আমার ছেলে কত্ত কাজের মায়ের সব কাজ করে দেয় “ । আমি কি নিজেই মায়ের ওই ঘনিষ্ঠতা ত্যাগ করছি এমন একটা চিন্তা আমার মাথেয় এসেছিলো । জেদ চেপে গিয়েছিলো মাথায় , জেদ মনে হয় আমার নিজের উপর ই হয়েছিলো , কিন্তু ঝারতে গিয়েছিলাম মায়ের উপরে । রান্না ঘরের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে চেঁচিয়ে জিজ্ঞাস করেছিলাম “ আর কত সময় লাগবে রান্না হতে ? আমার কি খিদে লাগে না বসে বসে হাসা হাসি করলে কি কাজ হয় ?”
আমার এই রাগের কথা গুলি শুনে মা হেঁসে বলেছিল “ ইস আমার শ্বশুর সাহেব এসেছে , মাত্র তো এগারোটা বাজে এখনি খিদে পেয়ে গেলো “ মায়ের ঘর্মাক্ত মুখের সেই মিষ্টি হাসি আমার কাছে লেগেছিল বিষের মতো । মনে মনে এমন একটা বাক্য খুজছিলাম যেটা মাকে অনেক কষ্ট দেবে । “ আমি তো তোমার ছেলে না ওই কালু বোবাই তোমার ছেলে যাও খাওয়াও তোমার বোবা কুচ্ছিত ছেলেকে “ সেই কচি বয়সে এই বাক্যটি ই খুজে পেয়েছিলাম মা এর উপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। মনে করেছিলাম খুব একটি মোক্ষম আঘাত করেছি । jouno uponnash
কিন্তু অচিরেই আমার করা আঘাত আমার শরীরে এসে লাগলো যখন দেখলাম । আমার বলা সেই বিষ বাক্য মা কে স্পর্শ ই করলো না উল্টো হেঁসে লুটোপুটি খেতে লাগলো । আর বলল “পাগল ছেলে বলে কি “ অন্য আরও অনেক সময় মা আমাকে পাগল বলেছে আমি কিছুই মনে করিনি কিন্তু অইদিন কালুর সামনে পাগল বলায় আমার কাছে এমন লজ্জা আর অপমান লেগেছিল যে মনে হচ্ছিলো আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে । আর কালু ও দাঁত বের করে “ আম্মা “ বলে মায়ের কথায় সায় দিয়ছিল ।
রাগে অপমানে আমি বলে ছিলাম “ আমি পাগল না তোর ওই কালু পাগল , থাক তুই কালু পাগলা কে নিয়ে “ দৌরে বেড়িয়ে গিয়েছিলাম বাড়ি থেকে । পেছন থেকে মায়ের শত ডাক ও কানে তুলিনি । ইচ্ছা ছিল আর বাড়িতে ফিরবনা ।
কিন্তু বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়েছিলাম আর এক বিপদে , সময় কাটছিল না কিছুতেই । এদিক সেদিক ঘুরে বেড়িয়ে রোদে ক্লান্ত হয়ে শেষে আমাদের বাড়ির পেছনে একটি মজা পুকুরের ঝপের আড়ালে বসে ছিলাম । কিছুক্ষন বসে থেকেই শুরু অয়েছিল অনুতাপ , ছোট বেলার আবছা সৃতি গুলি মনে পড়ছিল খুব । যখন আমি মায়ের সাথেই থাকতাম সব সময় আমাকে নিয়ে করা মায়ের আহ্লাদ গুলি মনে পড়ছিল খুব । কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই । ঘুম ভেঙ্গে ছিল ঘেমো একটা গন্ধে । সেই গন্ধ কালুর এতো সাবান পানি সব বিফলে গিয়েছে কালুর এই ঘেমো গন্ধের কাছে । jouno uponnash
কি তীব্র সেই গন্ধ আমার তো মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে । কালু আমাকে পাজকোল করে উঠিয়ে বাড়ির দিকে দৌর দিলো । আমার চেয়ে কালুর বয়স খুব বেশি হবে না বড় জ্বর ২-৩ বছরের বড় । আর লম্বায় ও বেশ খাটো কি করে যে আমার মতো একটা ছেলেকে এমন করে কোলে নিয়ে দৌরে যাচ্ছে সেটা ভেবে ও অবাক হলাম খুব । আর এই অবাক হওয়ার পড়বো শেষ হলে এলো রাগ , যার জন্য রাগ করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলাম সেই এখন আমাকে আমার ইচ্ছার তোয়াক্কা না করে এমন অসহায় অবস্থায় কোলে ফেলে জোড় করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে ।
প্রচণ্ড অভিমান হলো আর সাথে রাগ , রাগে কান্না চলে এলো । আঁচরে কামড়ে দিতে লাগলাম কালু কে । কিন্তু কালুর শরীর যেন পাথর এর । আমার নখ ওর চামড়া ভেদ করতে পারছে না কিছুতেই ।
তীব্র ঘামের গন্ধ সাথে চেঁচিয়ে কান্না করা আর হাত পা ছোরা এই সব মিলে ক্লান্ত হয়ে গেলাম । কিন্তু কালু দামড়া টার কোন ক্লান্তি নেই আমাকে নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে আর আমি ওর কোলে অপমানজনক ভাবে লেং ছেড়ে পড়ে আছি । আশপাশ থেকে কয়েকটা তির্যক উক্তি ও শুনতে পেলাম । এতে আমার রাগ আরও বেড়ে যাচ্ছিলো । jouno uponnash
বাড়িতে এনেই কালু আম্মা আম্মা বলে চেচাতে লাগলো কিছুতেই আমাকে কোল থেকে নামাচ্ছে না । কালুর চেঁচামেচি শুনে মা বেড়িয়ে এলো । আমাকে দেখেই জিজ্ঞাস কলো কোথায় পেলি । কালু উত্তর দিলো আমাকে কোল থেকে ধপাস করে মায়ের পায়ের নিচে ফেলে দিয়ে সাথে ওর বোবা মুখে সেই আম্মা বোল । কি ভয়ানক উত্তর , ধপাস করে মাটিতে পড়ে ভীষণ ব্যাথা পেলাম কিন্তু মুখে কিছু বললাম না ।
ওকে এমন করে ফেললি কেন রে বোকা ছেলে , ভাই ব্যাথা পাবে না ? এই বলে মা আমাকে টেনে তুলে দাঁর করিয়ে দিলো । তারপর আমার চিবুক ধরে একটু উচু করে হাসি মখে বলল । পাগল ছেলে আমার অমন করে কেউ বেড়িয়ে যায় কখনো আর মায়ের মনে কি দুঃখ দিতে আছে । কিন্তু মায়ের অমন মিষ্টি কথাও আমার মনে দাগ কাটল না , কালু যে এভাবে আমাকে ফেলে দিলো তার জন্য মা ওকে কিছুই বলল না এটা ভেবে আমার রাগ আরও বেড়ে গেলো । আমি এক ঝটকায় মায়ের হাত আমার চিবুক থেকে সরিয়ে এক দৌড়ে আমার দোতলার ঘরে চলে গেলাম । jouno uponnash
কিছুক্ষন পর মা ঢুকল আমার ঘরে । হাসিমুখ আর হাতে খাবার এর থালা । পেটে টান অনুভব করলাম খাবার এর গন্ধ নাকে যেতেই । কিন্তু মুখটা ঘুরিয়ে নিলাম জানালার দিকে । খোকন সোনা চাঁদের কোণা রাগ করেনা , এই বলে আম্মু আমার মুখটা নিজের দিকে করার চেষ্টা করলো । কিন্তু ছোট বেলার প্রিয় আদুরে বোল ও আমার রাগ ভাঙ্গাতে পারলো না । বরং রাগ যেন বেড়ে গেলো । আমি কেঁদেই ফেললাম রাগের কারনে । এই দেখে আম্মু খাবার এর থালা রেখে দু হাতে আমার মুখটা দুপাশ থেকে ধরে নিজের দিকে করলো ।
ছিঃ তুই কাদছিস কেন ? তুই তো আমার ভালো ছেলে লক্ষি ছেলে
কিন্তু মায়ের মন ভুলানো কথা গুলি আমার উপর কোন প্রভাব ফেললো না উল্টো আমার কান্নার দমক বেড়ে গেলো । কান্নার তিব্রতায় আমার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো । হেঁচকি উঠে যাচ্ছে কান্নার কারনে । মা আমার মাথা বুকে টেনে নিলেন। অনেক্ষন মায়ের বুকে মাথা রেখে একটু শান্তি পেলাম । কান্না একটু চেপে এলো । তখন মা আমাকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে বলল এই তো লক্ষি ছেলে নে এবার খেয়ে নে অনেক বেলা হলো তোর জন্য ইলিশ মাছের ডিম ভেজে রেখেছি। jouno uponnash
আমিও খাওয়া শুরু করলাম । মা আমাকে হাতে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে । অনেকদিন পর মায়ের হাতে খেলাম । একটু পর খেয়াল করলাম কালু দাড়িয়ে আছে দরজায় , হলদে দাঁত বের করে । আমি ভাত মুখে নিয়েই মা কে বললাম ওকে ওর দাঁত লুকিয়ে রাখতে আমার বমি পায় । মা হেঁসে কালু কে ডাকল , এই কালু এদিকে আয় ।
আম্মা আম্মা করে হাজির কালু । এখনো নোংরা দাঁত গুলি বের করে রেখেছে । আমি কোনরকম মুখের ভাত গুলি গিলে ফেললাম । মা কালুর একটি হাত ধরে বলল এই কালু শোন এটা হচ্ছে তোর ছোট ভাই , একে কখনো কষ্ট দিবি না বুঝলি।কালু মাথা নেড়ে সায় দিলো সাথে নোংরা দাঁতের বিটকেলে হাসি । মা আবারো ওর হাত ঝাকি মেরে বলল বুঝেছিস তো আমার কথা । কালু এবার বলল আম্মা । এর মানে ও ঠিক মতো বুঝেছে । ইস মা ওকে সহ্য করে কি করে , আমি একটু দূরে বসা এখান থেকেই ওর ঘেমো গন্ধ পাচ্ছি । jouno uponnash
মা আমার মুখে আর এক বার ভাত তুলে দিয়ে বলল , বুঝলি অপু , কালু হচ্ছে তোর হাতের লাঠি , তোর কোন বিপদ আপদ এলে দেখবি কালু ই সবার প্রথম ঝাপিয়ে পড়বে । তারপর কালুর দিকে তাকিয়ে বলল কিরে কালু ভাই কে দেখবি না । কালু জবাব দিলো আম্মা । কি আম্মা আম্মা করছিস , বোল তো অপু তোর কি হয় ।
কালুর উত্তর এলো আম্মা । সাথে সাথে আম্মু হেঁসে ফেললো , প্রান খোলা হাসি । এমন হাসি আম্মু কে আগে আমি খুব কম ই হাসতে দেখেছি । আমারও হাসি পেয়ে গেলো ।
আসলে আমি এখন বুঝতে পারি মা কালুর সঙ্গে কেন এতো মিশত । আসলে মা নিঃসঙ্গ ছিলো । বাড়িতে আর কোন মেয়ে ও ছিলো যার সাথে মা সময় পাড় করবে দুটো কথা বলবে । আমি তো সারাক্ষণ পড়াশুনা বা খেলা ধুলা নিয়ে থাকতাম । যতক্ষণ সময় আমার জন্য মা কে দরকার ঠিক ততটাই সময় আমি মায়ের সাথে ব্যায় করতাম । এখন কার সময় এর স্বামী স্ত্রীর মতো আগের দিনের স্বামী স্ত্রীর মাঝে কোয়ালিটি টাইম বলতে কোন কথা ছিলো না । স্বামীদের সান্নিধ্য স্ত্রীরা সুধু রাতে শোয়ার সময় ই পেত । আর কালু ছিলো একজন আদর্শ স্রোতা , মা এমনসব কথাও কালুর সাথে বলতো যা ঠিক কালুর সাথে বলার কথা না । jouno uponnash
একদিন এর কথা বলি
মা দুপুর এর খাওয়া শেষে না ঘুমিয়ে পুকুর ঘাটে ছিপ নিয়ে বসে আছে আর কালু ও সাথে বসা । মা প্রায় ই দুপুর বেলা এমন করতো । আমার কি একটা প্রয়োজনে যেন আমি মা কে খুজছিলাম । খুজতে খুজতে পুকুর ঘাটে চলে এলাম । দেখি দুজনে খুব হাসা হাসি । তখনো কালুর প্রতি হিংসে আমার পুরো পুরি কাটেনি । কি নিয়ে এতো হাসা হাসি সেটা জানার খুব ইচ্ছে হলো আমি চুপি চুপি ওদের পেছনে ঘাপটি মেরে রইলাম ।
তোর আব্বার অনেক সখ ছিলো অনেক গুলি ছেলেপুলে হবে রে কালু , কিন্তু আমার পেটে যে কি পাথর আছে এতো চেষ্টার পর ও কিচ্ছু হচ্ছে না । এতো করে বললাম আর একটা বিয়ে করেন , কিছুতেই করলো না , আমাকে কি বলে জানিস ।
কালু বলল আম্মা
ধুর পাগল খালি আম্মা আম্মা করিস কেন , আর কিছু শিখতে পারিস না ।
এবার কালু বলল আব্বা , মা জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগলো , আর বলল………. jouno uponnash
বুঝেছি বুঝেছি তুই খুব পারিস । শোন তোর আব্বা কি বলে তাকে আর একটা বিয়ের কথা বললে । বলে শোন আয়শা তুমি আর কোনদিন আর একটা বিয়ের কথা বলবে না , যদি বলো আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো , তুমি কি মনে করো পীর সাহেব বলছে এই জন্য আমি বিয়ে করি না , এতো দিনেও আমাকে চিনলে না , কি রাগ যে করে তোর আব্বা , সেই রাগ ভাঙ্গাতে আমার রাত পাড় হয়ে যায় । আমার অবশ্য এতো ছেলে পুলে ভালো লাগে না বেশি ছেলে হলে ওই আমেনা আপার মতো মটকি হয়ে যাবো ।
এই বলে মায়ের আবার হাসি , এতো খোলা হাসি সুধু আমি মা কে কালুর সাথেই হাসতে দেখতাম । তবে সেই হাসি ধীরে ধীরে কেমন যেন একটা বিষাদ মাখা রূপ নিলো । তারপর একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
শোন কালু তুই আমার বড় ছেলে , তুই ই তোর আব্বার হাতের লাঠি হবি ভাই এর ছায়া হবি । বুঝলি আমার আর ছেলে পুলের দরকার নেই ।
আমি সেদিন আমার দরকার এর কথা না বলেই চলে এসেছিলাম । একটু অভিমান হয়েছিলো মায়ের উপর আমাকে কালুর চেয়ে দুর্বল ভাবার কারনে । তবে এখন বুঝতে পারি মা আমার কথা ভেবেই অমনটা বলেছিলো । আসলেই আমি দুর্বল প্রকিতির লোক । আর কালুকে আমার ও খুব প্রয়োজন এটা বুঝতে বেসিদিন সময় লাগেনি আমারও ।