bangla golpo হেমন্তের অরণ্যে – 3 by Henry

bangla golpo choti. কাবেরী গোটা চারেক তাঁত ছাড়া, কয়েকটা সুতির শাড়ি নিয়েছে। গরমে সুতির শাড়ির বিকল্প নেই। ব্যাগ গোছানোর সময়ে টুথপেস্ট, ব্রাশ, সাবান শ্যাম্পু ছাড়াও নিজের স্বল্প কিছু প্রসাধনী ভরে নিয়েছে। পাপান বেছে বেছে কয়েক খানা বই দিয়েছে। ট্রেনেই যাবার কথা ছিল। আচমকা তাতান বলল–মা বাইরে দেখো একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। হেমেন মামা বোধ হয় গাড়ি এনেছেন।
—গাড়ী! বিস্মিত হল কাবেরী।

অরুণাভ এসময় অফিস বেরিয়ে গেছে। দুই ছেলের কপালে চুমু দিয়ে বেরোলো কাবেরী। যাবার সময় ছেলেদুটোকে পই পই করে বলে গেল—অহেতুক ঝগড়া করবিনা। আর বাপি যা বলবে শুনবি।
মনে মনে ভাবলো ছেলে দুটোই না কত বড় হয়ে গেল। এই প্রথমবার দুটো ছেলেকে ছেড়ে এত দিনের জন্য সে কোথাও যাচ্ছে।
গাড়ির পেছনের সিটের দরজাটা খুলে দিলেন হেমেন দা।

bangla golpo

ব্যাগটা ভারী হয়ে গেছে, গাড়িতে তুলে দিতে ছেলে দুটোকে ডাকলে ভালো হত। অমন সময় দেবদুতের মতো সামনের সিট থেকে নেমে এলো অসীম। কাবেরী চমকে গেল। অসীম হেসে বলল—কেমন সারপ্রাইজ দিলাম বলো। হেমেন দা যে তোমার দাদা এদ্দিন জানতামই না।
—ললিতা কোথায়?
—কাননুর গেছে। ওর বাপের বাড়ি। তাই হেমেন দা যখন প্রস্তাব দিল, ভাবলাম কদিন ঘুরে আসলেই পারা যায়।

গাড়ী চলতে শুরু করল। ড্রাইভার ছেলেটা অল্প বয়সী। ওর পাশে বসেছে অসীম। হেমেন দা আর কাবেরী পেছনের সিটে।
কলকাতা ছাড়িয়ে ওরা যখন বেরোলো তখন বারোটা দশ। একবার রাস্তায় নেমে চা খেল ওরা।কাবেরীর অবশ্য এমন দুপুরে চা খাবার অভ্যেস নেই। গাড়িতেই বসে রইল ও।
ওরা যখন গাড়ির কাছে ফিরল হেমেন দা বললেন—আমাকে সামনে দে অসীম। bangla golpo

কাবেরীর পাশে বসল অসীম। রোদ বাড়ছে। অসীম বলল— হেমেন দা জানলাটা আটকে দাও। এসি দেব।
কাবেরী ওর পাশের জানলাটা আটকানোর চেষ্টা করল। বেশ শক্ত। বুঝতে পেরে অসীম কাবেরীর ওপর ঝুঁকে আটকে দিল জানলাটা।
অসীমের এত কাছাকাছি আসার অস্বস্তি কাটিয়ে কাবেরী বলল—সন্তুর কোন ক্লাস হল?

সন্তু অসীম ও ললিতার ছেলে। ওইটুকু ছেলের গানের গলা ভারী সুন্দর।
—এইবার সেভেন হল। সারাদিন গান-বাজনায় আগ্রহ। পড়ায় বড্ড ফাঁকি দিচ্ছে।
হেমেন দা বললেন—ও যেটা চায় করুক না, কখনো বাধা দিস না।

হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি ছুটছে, এ কথা ও কথায় অসীম, কাবেরী, হেমেনের সময়টা কেটে যাচ্ছে। আটটার সময় পুরুলিয়া ঢুকল ওদের গাড়ি। রাতের অন্ধকারে আস্তে আস্তে ওদের গাড়ি জঙ্গলের রাস্তা ধরে এগোচ্ছে। হেমেন দা বললেন—খুকি, দিনের আলো হলে দেখতে পেতিস অযোধ্যা পাহাড়।
জানলাগুলো খোলা, সাঁই সাঁই বাতাস এসে ঢুকছে। অসীম বলল—একটা গান ধরো কাবেরী। bangla golpo

—-ওমা! গান?
—ধর না, হেমেন দাও বললেন সিগারেট ধরিয়ে।
কাবেরী গলা ছাড়লো। শেষ কবে গান গেয়েছে মনে পড়ল না। অসীমদের কবিতাবাসরে একবার গেয়েছিল। সেটা নজরুল গীতি।

“অনেক দিনের শূন্যতা মোর ভরতে হবে
মৌনবীনার তন্ত্র আমার জাগাও সুধারবে,
বসন্তসমীরে তোমার ফুল-ফুটানো বাণী

দিক পরানে আনি-
ডাকো তোমার নিখিল-উৎসবে
মিলন শতদলে”
—আর পারবো না। এই চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে… গলা বলে আর কিছু আছে নাকি। bangla golpo

অসীম বলল—এ তো বসন্তের গান। এখন তো গ্রীষ্ম।
কাবেরী লজ্জায় কুটি গিয়ে হেসে বলল—যা মনে এলো গাইলাম। তুমিও তো ভালো গান গাও। বাব্বা! সেই ইউনিভার্সিটির ফাংশনে গেয়েছিল—
“মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে
মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে সে দিন ভরা সাঁঝে…”

অসীমও সঙ্গ দিয়ে গাইল—
”যেতে যেতে দুয়ার হতে কী ভেবে ফিরালে মুখখানি-
কী কথা ছিল যে মনে”

হেমেন দা বললেন—তোদের দুজনের কি ইউনিভার্সিটিতে কোনো কেমিস্ট্রি ছিল।
অসীম হেসে বলল—যা ছিল আমারই। ওর মনে তখন তরুণ ব্যাংক ম্যানেজার অরুণাভ চক্রবর্তী বাসা বেঁধেছেন।
–এই যাঃ! তাতানের বাবাকে ফোন করা হল না।
হেমেন দা বললেন—একদম হাঁসড়া গিয়ে। আর এই জঙ্গলে কোথাও টেলিফোন বুথ নেই। bangla golpo

ড্রাইভার আলমগীর আচমকা ব্রেক কষে গাড়ি আটকালো।
—কী হল আলমগীর? হেমেন দা তটস্থ হয়ে বললেন।
—সামনে দেখেন সার… হাতি। ফিসফিসিয়ে বলল আলমগীর।
ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় গোটা পনেরো হাতি। আলমগীর গাড়ির হেডলাইট নিভিয়ে রেখেছে। চাঁদের আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

এমন হাতি একবার দক্ষিণ ভারতে দেখেছিল কাবেরী। তখন পাপানের জন্ম হয়নি। তাতান খুব ছোট। ওর কি আনন্দ। তারপর ডুয়ার্স এ হাতির পিঠে দুই ভাই মিলে সাফারি করেছিল। তবে এমন বুনো হাতি দেখার মজাই আলাদা। আস্তে আস্তে পালটা নেমে গেল স্থাণু জমি দিয়ে। গাড়িটা চলতে শুরু করতেই কাবেরী গান ধরল—
“মনে রবে কি না রবে আমারে
মনে রবে কি না রবে আমারে সে আমার মনে নাই।
ক্ষণে ক্ষণে আসি তব দুয়ারে, অকারণে গান গাই..” bangla golpo

অরুণাভ অফিস থেকে ফিরে দেখল বাড়িটা নিঃঝুম হয়ে আছে। ড্রয়িং রুমের আলো নেভানো। তাতান এখনো ফেরেনি। পাপান এখনো ঘুমোচ্ছে। মা থাকলে এতক্ষণ ঘুমানোর জো নেই ওর। বকাঝকা দিয়ে ঠিক ডেকে তুলবেই। অসীম মোজা খুলতে খুলতে গম্ভীর গলায় হাঁক দিল—-পাপান!
ধড়ফড় করে উঠে বসল পাপান। ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখল রাত্রি ন’টা। চোখ ডলতে ডলতে বেরিয়ে এলো ও।
—এটা ঘুমোবার সময় হল? ধমক দিয়ে উঠল অরুণাভ।—মা ফোন করেছে?

—না তো।
—মালতী এসেছিল?
—হ্যা রান্না করে দিয়ে গেছে।
—তোর মায়ের ট্রেনটা যেন কটায় ছিল? কাঁধে তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢোকার মুখে বলল অরুণাভ।
বেসিনে চোখে জলের ঝাপটা দিয়ে মুখটা মুছতে মুছতে পাপান বাবার দিকে তাকালো খানিকটা বিস্ময়ে—মা তো ট্রেনে যায়নি। হেমেন মামা গাড়ি এনেছিল। অসীম কাকুও ছিল। bangla golpo

—অসীম! কুঁচকে উঠল অরুণাভর ভ্রু জোড়া। অসীমকে কেন যেন অরুণাভর পছন্দ নয়। বাড়ীতে কবিতার আসর বসাতো, যা অরুণাভর একবারে নাপসন্দ ছিল। অসীম যে ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় কাবেরীর প্রেমে পড়েছিল, এ কথা অরুণাভ জানতো। তা নিয়ে কখনো মাথা ঘামায়নি অরুণাভ।এখন অরুণাভ-কাবেরী কিংবা অসীম, তারা প্রত্যেকেই মধ্যবয়সের নরনারী, নতুন করে প্রেম-প্রণয়ের বিষয় নেই। বিষয়টি হচ্ছে বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে ওই গান-বাজনা, বিদঘুটে সব কাব্য আলোচনা আর ঘনঘন চা এসব দেখলেই গা জ্বলে যেত অরুণাভর।

অদ্ভুত এক প্রাচীন পরিবেশ মনে হচ্ছে কাবেরীর। দোতলা বিরাট সেকেলে বাড়িটাকে জোছনা রাতের আবছা আলোয় দৈত্য বলে মনে হচ্ছে। দিনের আলো ছাড়া চারপাশ বোঝা দায়। আলমগীর আর অসীম হাত লাগিয়ে ব্যাগ পত্তর নামিয়ে এনেছে। এই বাড়িতে কোথাও বিদ্যুৎ নেই।

চওড়া বারান্দায় টেবিলের ওপর যেটা জ্বলছে, সেটা হ্যারিকেন। একটা পনেরো-ষোল বছরের আদিবাসী মেয়ে বাতি দিয়ে জ্বেলে দিল আরো দুটো, সব মিলিয়ে তিনটে হ্যারিকেন এখন। হ্যারিকেন জিনিসটাকে কতদিন পরে দেখল কাবেরী। তাতান-পাপান থাকলে, তাদের কাছে নিঃসন্দেহে এটা প্রাগৈতিহাসিক মনে হত। bangla golpo

হেমেন দা আদিবাসী মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললেন—এই হল কুন্তী। মহাভারতের নয়। হাঁসড়ার মুন্ডা পাড়ার মেয়ে। যখন যা প্রয়োজন একেই বলে নিস।
কাবেরী ব্যাগ থেকে জিনিস পত্তর বের করাতে করাতে বলল–বাংলা বোঝে তো?

হেমেন দা হেসে বলল—এই এলাকার বৈচিত্র্য এই যে, এখানে সকলে বাংলা, হিন্দি আর মুন্ডাদের নিজের ভাষা মুন্ডারা বোঝে আর বলতে পারে।
কাবেরী একবার স্নানে যেতে চায়। হাতের ওপর শাড়ি-ব্লাউজ, তোয়ালে নিয়ে বলল—কুন্তী আমাকে একবার বাথরুমটা দেখিয়ে দাও দেখি।
হ্যারিকেন হাতে ঝুলিয়ে মেয়েটা এগোতে লাগলো।

মান্ধাতা আমলের বাথরুম। দেওয়ালে অজস্র ফাটল। লতাপাতা, বটের চের গজিয়েছে তার ভেতরে। তবে বেশ বড় বাথরুমটা। লম্বাটে। একটা বড় চৌবাচ্চা জলে পরিপূর্ণ। শাড়ির ভেতর হাতটা নিয়ে গিয়ে ব্লাউজের হুকটা আলগা করে দিল কাবেরী। লক্ষ্য করল কুন্তী তখনও হ্যারিকেন হাতে দাঁড়িয়ে।
—হ্যারিকেনটা রেখে তুমি চলে যাও। bangla golpo

মেয়েটা কোনো কথা না বলে তাই করলো। দরজাটা বন্ধ করে দিল কাবেরী। বাথরুমের ভেতরে হ্যারিকেনের আলো। মগে করে চৌবাচ্চা নিয়ে গায়ে জল দিতেই বুঝতে পারলো, ভারী শীতল জল।

অরুণাভ সকালের কাগজ রাতে পড়ে। তাতান ফিরেছে। টিভিটা অন করে ও ততক্ষণ ধরে একটা পুরোনো খেলার হাইলাইটস দেখে যাচ্ছে। পাপান পড়ার ঘরে। টেলিফোনটা রিং হতেই কাগজ থেকে চোখ সরিয়ে অরুণাভ তাকালো রিসিভারের দিকে। তাতানই উঠে গিয়ে ধরল ফোনটা।
—-মা?

–কিরে বাপি এসেছে?
—হ্যা। তুমি পৌঁছেছ?
—হ্যা। ভাই কি করছে?
—পড়ার ঘরে।
—মালতী এসেছিল?
—হ্যা। রান্না করে দিয়ে গেছে। bangla golpo

—ছাদে কাপড়-চোপড়গুলো নামিয়ে রেখেছে?
—ভাই জানে, আমি তো বিকেলে ছিলাম না।
—তোর বাপি কোথায়?
তাতান বাবার দিকে চেয়ে রইল। অরুণাভ ফোনটা ধরতেই কাবেরী বলল—চা খেয়েছ?
—এই তো খেলাম, নিজে বানিয়ে।

হাসলো কাবেরী—এবার নিজে বানিয়ে খেতে শেখো।
—পৌঁছালে কখন?
—আর বলো না। এত রাস্তা!
—তা পূর্বপুরুষের জমিদারী কেমন দেখলে? bangla golpo

—দেখলাম কি? দিনের আলোয় গোটা বাড়িটা দেখতে পাবো। মালতী কি রান্না করে দিয়ে গেছে গো?
—দেখিনি। ওই বিস্বাদ খাবার খেতে হবে কতদিন এবার।
—আঃ লক্ষ্মীটি, বেশি বাইর থেকে খাবার আনিও না। পাপানটা কাল থেকে পেটটা খারাপ বলছিল। একটু দেখো।
অরুণাভ হাসলো। বলল—কাবেরী, বেড়াতে গেছ, এসব ভাবলে চলে? তা তোমার কবি বন্ধু গেছে শুনলাম।

—হ্যা অসীম যে হেমেন দার ছাত্র তোমাকে তো আগেই বলেছিলাম। তবে ললিতা আসেনি জানো।
—তাহলে তো অসীমের প্রেমিক ভাগ্য খুলে গেল। দেখো ঘন ঘন রোমান্টিক কাব্য শুনিয়ে তোমাকেই না পাগল করে দেয়।
—ধ্যাৎ। শোনো না, ছাদে বোধ হয় কাপড়গুলো রয়ে গেছে। মালতীটার কোনো জ্ঞানগম্য নেই। আর হ্যা রাতে ওষুধগুলো খাবে। বৃষ্টি হলে ঘরের জানলাগুলো….
—এই রে বৃষ্টি এসেছে!
অরুণাভ অফিস থেকে ফেরার সময়ই লক্ষ্য করেছিল হালকা গুমোট ভাব।আকাশের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে ঈষৎ মেঘ ছিল। bangla golpo

ছাদের ওপর দীর্ঘদিন পর উঠল অরুণাভ। এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত টানা দড়িতে তাতান-পাপানের শর্টস, টিশার্ট, কাবেরীর শাড়ি, সায়া ব্লাউজ, অরুণাভর ট্রাউজার মেলা। আজ সকালেই মালতীকে ঘর মোছার কাজে লাগিয়ে এতগুলো জিনিস কেচেছে কাবেরী। অরুণাভ কতবার বলেছে, তবু ওয়াশিং মেশিনে কাচা পছন্দ হয় না ওর।

হেমেন দা বড় বারান্দায় সিগারেট ধরিয়ে বসেছেন। পাশেই পাজামা পরে অসীম খালি গায়ে বসে রয়েছে। অসীমের গায়ের রঙ কাবেরী বা অরুণাভর মত ফর্সা নয়। অসীম খানিকটা শ্যামলা।
হেমেন দা বললেন—খুকী কুন্তীকে বলে একটু রান্না ঘরটা দেখিস।
কাবেরী বড় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সাড়ে দশটা। ভাতে ভাতে রেঁধে ফেলার উপক্রম করা ছাড়া উপায় নেই। নিজেই হাত লাগালো রান্না ঘরে। bangla golpo

কলকাতার মত এখানেও কাল সারারাত বৃষ্টি হয়েছে। জঙ্গলের বৃষ্টি কেমন হয়, ধারণা ছিল না কাবেরীর। সারারাত অনবরত জলের শব্দ। ঘুম ভাঙলো ভোরে। জানালা খুলে চমকে উঠল কাবেরী। বাড়ীর ঠিক উল্টো দিকেই বিস্তীর্ণ পাহাড় আর ঢাল জুড়ে শাল, মহুয়ার জঙ্গল। সকালে চকচকে রোদ। ধুলোবালি মুছে যাওয়াতে ক্লোরিফিল উজ্জ্বল গাছ যেন আরো চকচকে। বাইরে বেরিয়ে এলো কাবেরী। এই দোতলা বাড়ি সহ ষোল কাঠা বাগানবাড়ি।

বাগানবাড়ি বললে ভুল হবে, ঝোপ ঝাড় আর পাহাড়ের ঢালে ইতিউতি কয়েকটা শাল-শিমুল গাছ।
কাবেরী মুগ্ধ হয়ে দেখছিল মায়ের দিক থেকে তার পূর্বপুরুষের এই বসত বাড়ি। এককালে বাড়ির চারপাশে পাঁচিল ছিল বোঝা যায়। কোথাও তার এখনো ভগ্নাংশ রয়ে গেছে। ভোরের বাতাস এসে কাবেরীর গায়ে পড়ছে। বাড়ির সামনেও পাহাড়। চারদিক যেন পাহাড় আর পাহাড়। bangla golpo

দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে একটু বিশ্রাম নিয়ে বেরোলো ওরা। ভোরের শীতল বাতাসটা আর নেই। এ জঙ্গলের আরেক বৈপরীত্যধর্মী রূপ। এখন তীব্র গরম আর কাঠফাটা রোদ। যদিও গাছ গাছালির ভিড়ে এই ছায়াটাও প্রশান্তির।
আলমগীর রাঁচির ছেলে। ঝরঝরে বাংলা বলে। সদ্য বিয়ে করেছে, শ্বশুরবাড়ি মুর্শিদাবাদে। পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারছে বেশ।
অসীম জিজ্ঞেস করল—ইস্কুল বাড়িটা কি অনেক দূরে হেমেন দা?

—কেন কাছেই তো। হেঁটে দশ মিনিট।
—ওমা! তবে তো হেঁটেই যেতে পারতাম। কাবেরী মাঝপথে বলল।
—আসলে তোদের একবার এলাকাটা চেনাবো বলেই গাড়ি নিয়ে আসা।

কিছুক্ষণের মধ্যে ধারনাটা বদল হল কাবেরীর। এখানে সকলে বাংলা বলে ও বোঝে। মুণ্ডারাও নিজেদের মধ্যে বাংলায় কথা বলে, সেই বাংলায় একটা গেঁয়ো টান রয়েছে। দুটো মুন্ডা ছেলে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। একজনের মাথায় একটা পুঁটলি মত বোঝা। অন্যজনের হাতে একটা গাছের ডাল। হেমেন দা আলমগীরকে গাড়ি থামাতে বললেন। ছেলে দুটোও দাঁড়িয়ে গেল। বয়স বেশি নয়, একুশ-বাইশ হবে। হেমেন দাকে দেখে ডাল হাতের ছেলেটা বলল—মাস্টার মশাই কুথায় যাচ্ছেন? bangla golpo

—শহর থেকে আমার বোন এসেছে। এলাকাটা দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি। তোর কি কোনো কাম-কাজ আছে কুছুয়া।
ছেলেটা মাথা নাড়লো। হ্যা কি না বলল বোঝা গেল না। হেমেন দা দরজা খুলে ওকে তুলে নিল।

মুন্ডাদের নিজেদের ভাষা আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। হেমেন দা বললেন—বলতো খুকি মুন্ডাদের ভাষার নাম কী?
—ওই তো তুমি কাল বললে, মুন্ডা।
অসীম বলল—অলচিকি।
—-না হল না। হাসলেন হেমেন দা।—ওটা সাঁওতালদের ভাষা। কুছুয়াও কি বুঝল, হেসে ফেলল।

কাবেরী মনে মনে ভাবলো অরুণাভ থাকলে নিশ্চিত বলে দিত। ওর জি.কে বা হিউমার সাংঘাতিক। অথচ সারা জীবন মানুষটা ব্যাংক আর টাকা-পয়সার হিসেব নিয়ে রয়ে গেল।
হেমেন দা বলতে লাগলেন—মুন্ডাদের ভাষা হল মুন্ডারী। অস্ট্রো-এশীয় ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং ভারতীয় আর্যভাষা থেকেও প্রাচীনতর। এ ভাষা উড়িয়া, অসমীয়া ও বাংলা ভাষার প্রাথমিক ভিত রচনা করেছে। খাসিয়া, গারো, সাঁওতাল, কোল ইত্যাদি উপজাতীয় ভাষার সঙ্গে মুন্ডা ভাষার সম্পর্ক লক্ষণীয়। bangla golpo

ইস্কুল বাড়িটার সামনে এসে পৌঁছল ওরা। একতলা স্কুল বাড়ির কাজ এখনো অসমাপ্ত। জায়গাটা খানিকটা সমতল। একটা ছোট জলাশয় আছে। এই জলাশয়টিও কাবেরীদের পূর্বপুরুষের সম্পত্তি। সেই অর্থে বর্তমান হেমেন রায় ও কাবেরী চক্রবর্তীর যৌথ সম্পদ। এখান থেকে দেখা যায় হাঁসড়া গ্রামটা। ছোট গ্রাম। শাল জঙ্গলের মধ্যে ইতিউতি কয়েকটা চালা ঘর হারিয়ে গেছে যেন। ঘরগুলো বেশ ভালো লাগছে কাবেরীর।

একে অপরের থেকে কত বিচ্ছিন্ন। কোনটা বেশ উঁচুতে, কোনটা ঢালে। কোনোটা খানিকটা সমান্তরাল জমিতে।
অদূরে আরো ঘন জঙ্গল। পাহাড়ের পর পাহাড়। সেদিকেই আঙ্গুল তুলে হেমেন দা বললেন—ওই পাহাড়েই বোঙ্গা দেবতার মন্দির।
—বোঙ্গা! মানে মুন্ডাদের আরাধ্য দেবতা। অসীম বিস্ময়ে বলল।

—-হ্যা। মুন্ডাদের প্রধান আরাধ্য দেবতা বোঙ্গা। অর্থাৎ সূর্য দেবতা। ওদের আরো দেব-দেবী রয়েছে। এ বয়সে আমি আর পাহাড়ে উঠতে পারবো না। তোরা যদি চাস তো গিয়ে দেখ।
কুছুয়ার কাঁধে হাত রেখে হেমেন দা বললেন–ওদের নিয়ে যাস সাবধানে। bangla golpo

কুছুয়া গাছের ডালটা হাতে নিয়ে আগে আগে চলেছে। খানিকটা পিছনে অসীম আর কাবেরী। অসীমের পরনে আকাশনীল শার্ট। কাবেরী একটা মেরুন রঙের তাঁত পরেছে, কমলা রঙা ব্লাউজ। পাহাড় ভেঙে উঠতে সামান্য হলেও তেমন কষ্ট হচ্ছে না কাবেরীর। কতদিন পর এভাবে পাহাড়ে ওঠা। অরুণাভ আর কাবেরী বিয়ের পর বেশ সাবলীল ভাবে পাহাড়ে উঠতে পারতো। ওই তো বছর দুই আগেও যখন ওরা কাশ্মীরে গিয়েছিল, ছেলেদুটোকে নিয়ে কাবেরী তরতর করে এগিয়ে গিয়েছিল।

পেছনে পড়েছিল অরুণাভ। চুয়াল্লিশ বছরে এসে কাবেরী বুঝতে পারছে এখনও সে ক্ষমতা তার আছে। অসীম অবশ্য আগে আগেই উঠে যাচ্ছে। অসীমের চেহারাটা গোলগাল, ছোটখাটো। কুছুয়া তাদের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে গেছে। স্যার, দিদিমনিদের পেছনে পড়ে থাকতে দেখে সে দাঁড়িয়ে পড়ল।
একটা ঢিবি মত জায়গায় আটকে পড়ল কাবেরী। অসীম হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল—কষ্ট হচ্ছে। হাতটা ধরে সামলে নিল নিজেকে। ঢিবিটা পেরিয়েই কাবেরী বলল—ওমা! কষ্ট হবে কেন? বেশ তো লাগছে হাঁটতে। bangla golpo

—না না। তুমি তো আমার মত রোগা-পাতলা নও।
—তারমানে তুমি আমাকে মোটা বলছ?
কাবেরী মোটেই মোটা নয়। আবার যুবতী শরীরের ছিপছিপে তন্বী নয়। মধ্য তিরিশের দিক থেকে তার শরীর আস্তে আস্তে ভারীর দিকে যেতে শুরু করলেও, তা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় আটকে রয়েছে। পেটে সামান্য মেদ আছে। তাতে কোমরে সামান্য ভাঁজ পড়ে। তবে সেই অতিরিক্ততা চল্লিশের যে কোনো নারীদেরই থাকে। খারাপ দেখায় না, বরং এতে বেশ পরিণতসুলভ দেখায় তাকে।

কছুয়া হাঁটা শুরু করল। ওরাও পিছু নিল নীরব অনুসরণকারীর মত। আর খানিকটা পথ পেরোনোর পর বড় শাল গাছটার তলায় ছোট্ট মন্দির। মন্দিরের দরজা খোলা। ভেতরে ঢুকতে দেখা পেল স্বয়ং বোঙ্গা দেবতার। নীল বর্ণ মাটির তৈরি এই মূর্তি আসলে * দের সূর্য দেবতারই প্রতিরূপ।
কাবেরী দু হাত মাথায় ঠেকিয়ে প্রণাম করল। পাশে দাঁড়ানো অসীমের হাসিমুখ দেখে কাবেরী জিজ্ঞেস করল হাসছ কেন? bangla golpo

—এই যে তোমার বিশ্বাস দেখে। মাটির দেবতার প্রতি এত আস্থা…
—আঃ অসীম! আদিবাসীদের দেবতারা খুব জাগ্রত হয় শুনেছি।
গলা ছেড়ে অট্টহাসি হাসল অসীম। কাবেরী বিরক্ত হল। মনে মনে ভাবলো নাস্তিকতা বোধ হয় পুরুষ মানুষদের একটি চরিত্র। অরুণাভটাও তাই। ঠাকুর-দেবতাকে তাচ্ছিল্য করা ওর অভ্যেস।

কাবেরীর রাগ ভাঙাতে অসীম বলল–চাইলে পুজোও দিতে পারো।
কুছুয়া বলল—এখুন হবেনি দিদিমণি। সক্কালে আসতে হবে। তখুন পূজা হয়।
মূর্তির পায়ের কাছে তখনও টাটকা ফুল, পূজার সামগ্রী দেখে বোঝা গেল সকালে এখানে পূজা হয়েছে।
বেরোনোর সময় অসীম লক্ষ্য করল মন্দিরের পাশ দিয়ে একটা জলস্রোত চলে গেছে। কুছুয়াকে জিজ্ঞেস করতে বলল—ইতু দেবীর থান হতে আসছে সার। গেলেই দিখতে পাবেন। bangla golpo

—ইতু দেবী? নামটা ইন্টারেস্টিং। এমন নামতো শুনিনি কখনো।
অসীমকে মাঝপথে থামিয়ে কাবেরী বলল–চলো না, গেলেই দেখতে পাবো।

গভীর জঙ্গলের এলোমেলো রাস্তা। হাতের শক্ত ডাল দিয়ে ঝোপঝাড় ছেঁটে রাস্তা বানাতে থাকলো কছুয়া। অসীম ভয় পেয়ে বলল—সাপ-খোপ নেই তো?
কুছুয়া তার কাজে রত থেকেই বলল—আছে নাই আবার! ময়াল, ঢেমনা, শিয়রচাঁদা, তপ সব আছে।
নিজে ভয় পেলেও, অসীম বলল—কাবেরী সাবধানে পা ফেলো।

অনেকটা পথ এই জঙ্গলাকীর্ন রাস্তায়। এসময় কুছুয়া চলে গেলে একা একা পথ খুঁজে ফেরা মুশকিল। অবশেষ এলো সেই বহু প্রতীক্ষিত ইতু দেবীর থান। দেবী বলতে কালো পাথর খন্ড। দুটো পাহাড়ের ফাটলের মাঝে তার স্থান। পাশ দিয়ে দুধসাদা ছোট ঝর্ণা। বোঙ্গা দেবের মন্দিরের পাশের জলস্রোতের উৎস এই ঝর্ণা।
এধার ওধার মুরগীর পালক দেখে অসীম বলল—এখানে বলি-টলি হয় নাকি? bangla golpo

—সে পরবের সময় হয়। এখুন তো গরম। আরো চারমাইনা পরে পরব। মানত কইরলে তখুন মুরগী দিতে হয়।
কছুয়াকে কথা শেষ করতে না দিয়ে কাবেরী জিজ্ঞেস করল—এখানে মানত করে কিসের জন্য?
—পোয়াতি হতে গেরামের বউরা আসে। যার ছেনা-পোনা হয় নাই, গাভীর দুধ কমছে, তারা আইসে। গত বসর আমার বউটা আইসছিল, এখন আমার বেটা হইছে দিদিমণি।

–তুমি বিয়ে করেছ?
লজ্জায় সরলমতি বালকের মত কুছুয়া মাথা নীচু করল। একুশ-বাইশ বছরে আদিবাসী এলাকার ছেলেরা বাপ হয়ে যায়! বিস্মিত হত কাবেরী।

সবাইকে চমকে দিয়ে হঠাৎ জঙ্গলের ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো একটা লোক। বেশ রুগ্ন লোকটার পরনে লাল কাপড় জড়ানো, হাতে লাঠি। কুছুয়া খুব সম্ভ্রমের চোখে বলল—দিগা বাবা, এই থানের পূজারী।
দিগা বাবা লোকটার বয়স হয়েছে, চোখ তুলে তাকালেন অসীম ও কাবেরী দিকে। বললেন—শহর থেকে আইসছেন বাবুরা?
কুছুয়াই বলল–হাঁ গো, বাবা। কলকাতা থিকে আইসছে। bangla golpo

—ইটা তো মানতের সময় লয়, তবে মা তোরে দেখে বড় ভালো লাইগলো। কাবেরীকে কথাটা বলল লোকটা।
কাবেরীর মাথায় একটা ফুল ছুঁইয়ে বলল—মরদ, ছ্যানা-পোনা লয়ে সুখী হ মা।
কাবেরী ভক্তি ভরে মাথা নুইয়ে থাকলো। দিগা বাবা এবার একটা ছোট্ট নুড়ি দিলেন কাবেরীর হাতে। দিগা বাবার চোখ প্রস্তর খণ্ডের দিকে—ইটা রাখিস নিজের কাছে। আর বেশি দের নাই, তুই মা হবি।

নুড়িটা একদম গোল। এমন নুড়ি এই এলাকায় কোথাও পাওয়া যায় বলে কাবেরীর মনে হল না।
কথাটা শুনে অসীম মুচকী হাসছে। ওখান থেকে বেরোনোর সময় কাবেরী নুড়িটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো একেবারে মসৃণ। ঠিক যেন কারিগর দিয়ে কোনো পাথরকে এভাবে বানানো হয়েছে। কুছুয়া পাথরটার দিকে তাকিয়ে বলল—দিদিমণি, ই পাথর বড় কামের গো, আমার বউটারেও দিগা বাবা দিছিল। যার কাছে রয়, সে ছানা-পোনার মুখ দেখে। bangla golpo

হো হো করে হেসে উঠল অসীম—তাহলে মিস্টার চক্রবর্তীকে শিগগিরি খবরটা দাও কাবেরী। তিনি আবার বাবা হতে চলেছেন।
কাবেরী হেসে উঠে বলল–ধ্যাৎ।
ঠাকুর-দেবতায় বিশ্বাস থাকলেও কাবেরী মাদুল, কবজ, টোটকা এসবে একদম বিশ্বাস করে না। দুটো বড় বড় ছেলের মা কাবেরী, এ কথা জানলে দিগা বাবা নিশ্চই আর এই ইতু দেবীর থান মুখো হতেন না। মনে মনে হেসে উঠল কাবেরী।

ওরা যখন নীচে পৌঁছল, হেমেন দা একটা টিলার ওপর বসে রয়েছেন। আলমগীর গাড়ীর টুল বক্স খুলে ঠুং ঠাং করতে ব্যস্ত। কুছুয়া হাত নেড়ে রওনা দিল হাঁসড়া গ্রামের দিকে। গাড়ীতে উঠে ওরা রওনা দিল বাড়ির ঠিক উল্টো দিকে। উঁচু নীচু পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে ঘন অরণ্যের মধ্য দিয়ে ছুটে চলেছে গাড়ি।

প্রায় ঘন্টা দেড়েকের দীর্ঘ রাস্তা পেরিয়ে ওরা এসে পৌঁছল একটা ভগ্ন শিব মন্দিরের কাছে। হেমেন দা বললেন—এবার নেমে পড়তে হবে।
অসীম বলল—কাছেপিঠে দেখবার মতো কিছু আছে নাকি?
হেমেন দা একটা সিগারেট ধরিয়ে বললেন—আছে একটা বড় ঝর্ণা। ঠিক মন্দিরটার পেছনে। bangla golpo

কল কল জলের শব্দ কানে এলো কাবেরীর। কিশোরীর মেয়ের মতো বলে উঠল—ওই তো জলের শব্দ।
হেমেন দা বললেন—ঠিক শুনেছিস। তবে এখানে আসবার আরেকটা কারণ আছে। কাছেই ফরেস্ট অফিস। ফরেস্টের রেঞ্জার অফিসার আমার পরিচিত। তোরা যখন এসেছিস, স্কুলের বিষয় নিয়ে একটু কথাবার্তাও হয়ে যাবে।

মন্দিরটা বেশ পুরোনো। এখানে যেন সবই কেমন পুরোনো বলে মনে হচ্ছে কাবেরীর। মন্দিরের বারান্দায় দুপাশে দুটো সিমেন্টের বাঘ। আর পাঁচটা * মন্দিরের মতই। হেমেন রায় বললেন—মুন্ডারা কিন্তু * দেবদেবীদদেরও পূজা করে। * রীতি মেনে তাদের বিয়ে হয়। হাঁসড়াতে একটা চার্চও আছে। ইদানিং কিছু মুন্ডা খ্রিস্টানও হয়েছে।
কাবেরী বিস্মিত হয়ে বলল—এতসব আছে। অথচ একটা স্কুল নেই?
হেমেন রায় হাসলেন। অসীম বলল—এটাই তোমাদের বিশ্বাস বুঝলে কাবেরী।

হেমেন দা বড় ঝর্ণা বলছিলেন, এটাকে ঠিক বড় বলা চলে না। ঝর্ণাটা নীচু। ছোট্ট একটা পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ছে জল। নীচে জল জমে একটা স্বচ্ছ জলাশয় তৈরি হয়েছে। তার তলায় নুড়ি-পাথর নজরে আসে। bangla golpo

ফরেস্টের রেঞ্জার অফিসার অর্জুন কুমার হাজারীবাগের মানুষ। বয়স আনুমানিক ষাট ছুঁই ছুঁই। দেখেই বোঝা যায় রিটায়ার্ডের বয়সে এসে পৌছেছেন। বেশ খাতির করে বসালেন সকলকে। হেমেন দাকে যে বেশ সম্ভ্রমের চোখে দেখেন বোঝা যাচ্ছে।
বেতের চেয়ারে ওরা বসে রইল। হেমেন দা পরিচয় করালেন—ইনি হলেন অসীম মজুমদার। আমার ছাত্র। আর ইনি কাবেরী চক্রবর্তী, আমার বোন। এই জমি জায়গার আরেক অংশীদার।

হাতজোড় করে নমস্কার করলেন অর্জুন কুমার। চা এসে গেল। বললেন— ম্যাডাম, আপনাদের এই হেল্প ইয়াদ রাখবে মুন্ডাদের গাঁও। ওরা এখনো মূর্খ আছে, লেকিন একদিন পড়ালিখাই করলে বুঝতে পারবে, আপনারা এদের জন্য কত উপকার করলেন।
হেমেন রায়ও বললেন—অর্জুন বাবুও খুব আগ্রহী। অনেকদিনের চেষ্টা ছিল ওর। এই জমিদারী ছেড়ে সেই যে দাদুর বাবা উঠে গেছে, তারপর দাদুও খুব একটা আসেনি। যৌবনে দাদুর কাছে গল্প শুনে একবার এসেছিলাম। bangla golpo

তারপর দাদু কবে কি উইল করে গেছে জানতাম না। বাবা মারা যাবের আগে বললেন—হিমু, হাঁসড়ায় আমাদের যে জমিদারী আছে, তা তোর দাদু তোর আর মিনুর মেয়ে খুকির নামে আছে। একদিন সময় বার করে চলে এলুম। তারপর জায়গাটা ভালো লেগে গেল। মাঝে মধ্যেই যাতায়াত বাড়তে লাগলো। অর্জুন বাবু জানতেন না, আমি যে মাঝে মধ্যেই আসি।

এই জমির দখল কেউ নিতে আসবে না ভেবে একরকম কাগজপত্র রেডি করে জমিটা অধিগ্রহণের চেষ্টা করছিলেন অর্জুন বাবু। তারপর খোঁজ পেলেন আমার। সে অর্থে দেখতে গেলে এই স্কুল বাড়ি হওয়ার মূল কারিগর কিন্তু অর্জুন কুমারই।
অর্জুন কুমার লজ্জা পেলেন। বললেন—সার, আপনি না থাকলে আমি কি সবটা পেরে উঠতাম। ইধার বহুত সমস্যা। মুন্ডারা গোঁয়ার। ফরেস্টের লোকদের দুশমন মনে করে। আপনার কথা শুনল বলেই না।

অসীম বলল—হেমেন দা, স্কুলবাড়ীর জমিটা কত?
—তিন কাঠা। সব মিলিয়ে দাদুর উইল অনুযায়ী আমার আর খুকীর দেড়-দেড়। দাদু অবশ্য কার কোনো অংশ লিখে দিয়ে যায়নি। কাজেই খুকি যে কোনো জমি তার দাবী করতে পারে।
অসীম ঠাট্টা করে কাবেরীর দিকে চেয়ে বলল—তাই নাকি? bangla golpo

কাগজপত্র বের করে মাপযোগ সহ স্কুল বাড়ির প্ল্যানিং দেখাতে লাগলো অর্জুন কুমার। হেমেন দা, অসীম তা নিয়ে ব্যস্ত। কাবেরীর নজর পড়ল ফরেস্টের বাংলোর রঙ্গন গাছের ওপর একটা পাখি বসে সুরে সুরে ডেকে চলছে। পাখিটার কাছে চলে গেল কাবেরী, তবু পাখিটা ভয় পেল না। মনে এলো বাড়ীর টিয়াটার কথা, ছেলেদুটো খাবার দিচ্ছে কিনা কে জানে।
+++++++++

–ইটা রাখিস তোর কাছে। আর বেশি দেরী নাই, তুই মা হবি।

হেমন্তের অরণ্যে – 2 by Henry

কেমন লাগলো গল্পটি ?

ভোট দিতে হার্ট এর ওপর ক্লিক করুন

সার্বিক ফলাফল / 5. মোট ভোটঃ

কেও এখনো ভোট দেয় নি

Leave a Comment